ঢাকা ০১:১৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

শুরু হল ভারতের সূর্য অভিযান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৭:০৫:৩৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৩
  • / ৬৪৪ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

চন্দ্রজয়ের পর শুরু হল ভারতের সূর্য অভিযান। সূর্যে গবেষণার জন্য স্যাটেলাইট পাঠালো ভারত। দেশটির মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর তৈরি ভারতের প্রথম স্পেস অবজারভেটরি স্যাটেলাইট।

শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) সূর্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে ইসরোর মহাকাশযান আদিত্য এল-১। সকাল ১১ টা ৫০ মিনিটে অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান মহাকাশ কেন্দ্র থেকে পিএসএলভি-৫৭ রকেটে চেপে মহাকাশে পাড়ি দিল ভারতের প্রথম সৌরযান। সংস্কৃত ভাষায় সূর্যের নাম আদিত্য। তাই এই স্যাটেলাইটের নাম রাখা হয়েছে আদিত্য এল-১। মহাকাশে যাওয়ার পর স্যাটেলাইটটি রকেটের থেকে আলাদা হয়ে যায়। পরিকল্পনামাফিক সেই সৌরযানকে পৃথিবীর কক্ষপথে স্থাপন করা গিয়েছে।

উৎক্ষেপণের পর ১৬ দিন পৃথিবীর চারপাশে পাক খাবে সৌরযানটি। এ সময় ৫টি ধাপে সঞ্চয় করবে প্রয়োজনীয় গতিবেগ। পরবর্তী ১শ’ ১০ দিনে ১৫ লাখ কিলোমিটার দুরে সূর্যের ল্যাগ্রাঞ্জিয়ান পয়েন্টে পৌঁছে, নক্ষত্রটিকে পর্যবেক্ষণ করবে আদিত্য এল-ওয়ান।

সূর্যের করোনার জিওম্যাগ্নেটিক দিক নিয়ে পরীক্ষা চালাবে ইসরোর আদিত্য এল১ স্যাটেলাইট। সূর্যের জিওম্যাগ্নেটিক কারণে সৌরঝড় হয়ে থাকে। তার জেরেই ২০২২ সালে বড় ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন ইলন মাস্ক। তাঁর সংস্থা স্পেস এক্স-এর ৪৯টি স্যাটেলাইটের মধ্যে ৪০টি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল সেবারে। এই আবহে ভারতীয় সৌরযানের গবেষণার দিকে চোখ থাকবে এই ধনকুবেরের। পরবর্তীতে যাতে তাঁর সংস্থা এই ধরনের লোকসানের মুখে না পড়ে, তার একটি সমাধান সূত্র হয়ত আদিত্যর পরীক্ষার থেকেই বেরিয়ে আসতে পারে।

ইসরোর বিজ্ঞানীরা জানান, উৎক্ষেপণের পর আদিত্যকে প্রথমে পৃথিবীর কাছের কোনো কক্ষপথ বা লো-আর্থ অরবিটে রাখা হবে। সেখান থেকে পিএসএলভি রকেটে রাখা অন-বোর্ড প্রোপালশন প্রযুক্তির সাহায্যে আদিত্যকে নিয়ে যাওয়া হবে মহাকাশের ল্যাগ্রাঞ্জ পয়েন্ট বা এল১-এ। পৃথিবী ও সূর্যের মাঝামাঝি মহাকাশের একটি বিশেষ স্থানকে বিজ্ঞানীরা এল১ পয়েন্ট হিসেবে চিহ্নিত করেন। সেটা পৃথিবী থেকে ১৫ লাখ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এই অবস্থান থেকে আদিত্য কোনো বাধা বা গ্রহণ ছাড়াই নিরবচ্ছিন্নভাবে সূর্যকে পর্যবেক্ষণ করতে পারবে।

জানা গেছে, ইতালির গণিতবিদ, পদার্থ এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানী জিউসিপ্পে লুইগি ল্যাগ্রাঞ্জার নামানুসারে পৃথিবী ও সূর্যের মাঝামাঝি মহাকাশের এই বিশেষ এলাকাটির নামকরণ হয়েছে। জিউসিপ্পে লুইগি ল্যাগ্রাঞ্জা দেখিয়েছিলেন, মহাশূন্যে এমন পাঁচটি পয়েন্ট রয়েছে যেখানে সূর্য ও পৃথিবীর বিপরীতমুখী আকর্ষণের ফলে বস্তু ত্রিশঙ্কু অবস্থায় ভেসে থাকতে পারে। আদিত্যেরও এল১ পয়েন্টে ভেসে ভেসে নজরদারি চালাতে জ্বালানি খরচ হবে না।

ইসরো জানিয়েছে, আদিত্য স্যাটেলাইটকে এল১ রেঞ্জে বসানোর উদ্দেশ্য সূর্য থেকে প্রতিনিয়ত ছিটকে বের হওয়া সৌরঝড় সম্পর্কে অধ্যয়ন এবং পৃথিবীর আবহাওয়ায় এর প্রভাব বোঝা। এ ছাড়া সূর্য থেকে প্রতিনিয়ত যেসব সৌরকণা ছিটকে বের হচ্ছে, তা নিয়েও গবেষণা। এর জন্য আদিত্যে সূর্যের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানোর জন্য সাতটি পেলোড থাকবে। এর মাধ্যমে মহাকাশে আবহাওয়ার গতি, সূর্যের উপরি স্তরের তাপমাত্রা, সৌরঝড়, নির্গমন এবং পৃথিবীর ওপর অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাব বিশেষ করে ওজোন স্তর নিয়ে গবেষণা করা হবে। বিজ্ঞানীদের আশা, এই অভিযান সফল হলে পৃথিবীর জন্য ক্ষতিকারক সৌর বায়ু এবং ঝড়ের তথ্যের আগাম সতর্কতা জারি সম্ভব।

গনগনে উত্তাপের কারণে এমনিতেই সূর্যের ধারেকাছে ঘেঁষা যায় না। তার পরও মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা, ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (ইএসএ) এবং জার্মান অ্যারোস্পেস সেন্টার এখন পর্যন্ত মোট ৯ বার সূর্যকে কেন্দ্র করে গবেষণা স্যাটেলাইট পাঠিয়েছে। এর মধ্যে নাসার পার্কার সোলার প্রোব এবং ইএসএর সোলার অর্বিটারই এখনও নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছায়নি। পার্কার সোলার প্রোবের ২০২৫ সাল নাগাদ সূর্যের কেন্দ্র থেকে ৯.৮৬ সৌর ব্যাসার্ধের মধ্যে পৌঁছানোর কথা। এ ছাড়া সোলার অরবিটার সূর্য থেকে মাত্র ৩ কোটি মাইল দূরত্বে বুধের কক্ষপথের কাছাকাছি থেকে নক্ষত্রটিকে পর্যবেক্ষণ করেছে। এমন পরিস্থিতিতে ইসরোর আদিত্য এল১ মিশন সফল হলে ভারত সত্যিই অনন্য কৃতিত্ব গড়বে।

সম্প্রতি বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে চাঁদের অন্ধকারাচ্ছন্ন দক্ষিণ মেরুতে চন্দ্রযান-৩ পাঠিয়ে ভারতকে গর্বে ও আনন্দের এক অন্যরকম উপলক্ষে এনে দিয়েছিল ইসরো। চন্দ্রযান-৩ এর ল্যান্ডার বিক্রমে চেপে তাদের রোভার যান প্রজ্ঞান চাঁদের মাটিতে ঘুরে ঘুরে মূল্যবান সব তথ্য পাঠাচ্ছে পৃথিবীতে।

নিউজটি শেয়ার করুন

শুরু হল ভারতের সূর্য অভিযান

আপডেট সময় : ০৭:০৫:৩৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৩

চন্দ্রজয়ের পর শুরু হল ভারতের সূর্য অভিযান। সূর্যে গবেষণার জন্য স্যাটেলাইট পাঠালো ভারত। দেশটির মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর তৈরি ভারতের প্রথম স্পেস অবজারভেটরি স্যাটেলাইট।

শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) সূর্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে ইসরোর মহাকাশযান আদিত্য এল-১। সকাল ১১ টা ৫০ মিনিটে অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান মহাকাশ কেন্দ্র থেকে পিএসএলভি-৫৭ রকেটে চেপে মহাকাশে পাড়ি দিল ভারতের প্রথম সৌরযান। সংস্কৃত ভাষায় সূর্যের নাম আদিত্য। তাই এই স্যাটেলাইটের নাম রাখা হয়েছে আদিত্য এল-১। মহাকাশে যাওয়ার পর স্যাটেলাইটটি রকেটের থেকে আলাদা হয়ে যায়। পরিকল্পনামাফিক সেই সৌরযানকে পৃথিবীর কক্ষপথে স্থাপন করা গিয়েছে।

উৎক্ষেপণের পর ১৬ দিন পৃথিবীর চারপাশে পাক খাবে সৌরযানটি। এ সময় ৫টি ধাপে সঞ্চয় করবে প্রয়োজনীয় গতিবেগ। পরবর্তী ১শ’ ১০ দিনে ১৫ লাখ কিলোমিটার দুরে সূর্যের ল্যাগ্রাঞ্জিয়ান পয়েন্টে পৌঁছে, নক্ষত্রটিকে পর্যবেক্ষণ করবে আদিত্য এল-ওয়ান।

সূর্যের করোনার জিওম্যাগ্নেটিক দিক নিয়ে পরীক্ষা চালাবে ইসরোর আদিত্য এল১ স্যাটেলাইট। সূর্যের জিওম্যাগ্নেটিক কারণে সৌরঝড় হয়ে থাকে। তার জেরেই ২০২২ সালে বড় ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন ইলন মাস্ক। তাঁর সংস্থা স্পেস এক্স-এর ৪৯টি স্যাটেলাইটের মধ্যে ৪০টি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল সেবারে। এই আবহে ভারতীয় সৌরযানের গবেষণার দিকে চোখ থাকবে এই ধনকুবেরের। পরবর্তীতে যাতে তাঁর সংস্থা এই ধরনের লোকসানের মুখে না পড়ে, তার একটি সমাধান সূত্র হয়ত আদিত্যর পরীক্ষার থেকেই বেরিয়ে আসতে পারে।

ইসরোর বিজ্ঞানীরা জানান, উৎক্ষেপণের পর আদিত্যকে প্রথমে পৃথিবীর কাছের কোনো কক্ষপথ বা লো-আর্থ অরবিটে রাখা হবে। সেখান থেকে পিএসএলভি রকেটে রাখা অন-বোর্ড প্রোপালশন প্রযুক্তির সাহায্যে আদিত্যকে নিয়ে যাওয়া হবে মহাকাশের ল্যাগ্রাঞ্জ পয়েন্ট বা এল১-এ। পৃথিবী ও সূর্যের মাঝামাঝি মহাকাশের একটি বিশেষ স্থানকে বিজ্ঞানীরা এল১ পয়েন্ট হিসেবে চিহ্নিত করেন। সেটা পৃথিবী থেকে ১৫ লাখ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এই অবস্থান থেকে আদিত্য কোনো বাধা বা গ্রহণ ছাড়াই নিরবচ্ছিন্নভাবে সূর্যকে পর্যবেক্ষণ করতে পারবে।

জানা গেছে, ইতালির গণিতবিদ, পদার্থ এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানী জিউসিপ্পে লুইগি ল্যাগ্রাঞ্জার নামানুসারে পৃথিবী ও সূর্যের মাঝামাঝি মহাকাশের এই বিশেষ এলাকাটির নামকরণ হয়েছে। জিউসিপ্পে লুইগি ল্যাগ্রাঞ্জা দেখিয়েছিলেন, মহাশূন্যে এমন পাঁচটি পয়েন্ট রয়েছে যেখানে সূর্য ও পৃথিবীর বিপরীতমুখী আকর্ষণের ফলে বস্তু ত্রিশঙ্কু অবস্থায় ভেসে থাকতে পারে। আদিত্যেরও এল১ পয়েন্টে ভেসে ভেসে নজরদারি চালাতে জ্বালানি খরচ হবে না।

ইসরো জানিয়েছে, আদিত্য স্যাটেলাইটকে এল১ রেঞ্জে বসানোর উদ্দেশ্য সূর্য থেকে প্রতিনিয়ত ছিটকে বের হওয়া সৌরঝড় সম্পর্কে অধ্যয়ন এবং পৃথিবীর আবহাওয়ায় এর প্রভাব বোঝা। এ ছাড়া সূর্য থেকে প্রতিনিয়ত যেসব সৌরকণা ছিটকে বের হচ্ছে, তা নিয়েও গবেষণা। এর জন্য আদিত্যে সূর্যের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানোর জন্য সাতটি পেলোড থাকবে। এর মাধ্যমে মহাকাশে আবহাওয়ার গতি, সূর্যের উপরি স্তরের তাপমাত্রা, সৌরঝড়, নির্গমন এবং পৃথিবীর ওপর অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাব বিশেষ করে ওজোন স্তর নিয়ে গবেষণা করা হবে। বিজ্ঞানীদের আশা, এই অভিযান সফল হলে পৃথিবীর জন্য ক্ষতিকারক সৌর বায়ু এবং ঝড়ের তথ্যের আগাম সতর্কতা জারি সম্ভব।

গনগনে উত্তাপের কারণে এমনিতেই সূর্যের ধারেকাছে ঘেঁষা যায় না। তার পরও মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা, ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (ইএসএ) এবং জার্মান অ্যারোস্পেস সেন্টার এখন পর্যন্ত মোট ৯ বার সূর্যকে কেন্দ্র করে গবেষণা স্যাটেলাইট পাঠিয়েছে। এর মধ্যে নাসার পার্কার সোলার প্রোব এবং ইএসএর সোলার অর্বিটারই এখনও নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছায়নি। পার্কার সোলার প্রোবের ২০২৫ সাল নাগাদ সূর্যের কেন্দ্র থেকে ৯.৮৬ সৌর ব্যাসার্ধের মধ্যে পৌঁছানোর কথা। এ ছাড়া সোলার অরবিটার সূর্য থেকে মাত্র ৩ কোটি মাইল দূরত্বে বুধের কক্ষপথের কাছাকাছি থেকে নক্ষত্রটিকে পর্যবেক্ষণ করেছে। এমন পরিস্থিতিতে ইসরোর আদিত্য এল১ মিশন সফল হলে ভারত সত্যিই অনন্য কৃতিত্ব গড়বে।

সম্প্রতি বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে চাঁদের অন্ধকারাচ্ছন্ন দক্ষিণ মেরুতে চন্দ্রযান-৩ পাঠিয়ে ভারতকে গর্বে ও আনন্দের এক অন্যরকম উপলক্ষে এনে দিয়েছিল ইসরো। চন্দ্রযান-৩ এর ল্যান্ডার বিক্রমে চেপে তাদের রোভার যান প্রজ্ঞান চাঁদের মাটিতে ঘুরে ঘুরে মূল্যবান সব তথ্য পাঠাচ্ছে পৃথিবীতে।