মুজিব উর রহমানের বলটা মিডউইকেটে ঠেলে দিয়ে সহজে একটি রান। অসাধারণ এক ইনিংস রঙিন হলো সেঞ্চুরিতে। নাজমুল হোসেন শান্তর দ্বিতীয় ওয়ানডে সেঞ্চুরি!
উদ্যাপনে ব্যাটটাকে দুহাতে দোলালেন বাচ্চা কোলে নিয়ে দোল খাওয়ানোর ভঙ্গিতে। ব্যাটে চুমু খেয়ে তা উড়িয়ে দিলেন বাতাসে। লাহোর থেকে সে চুমু হয়তো এঁকে দিয়েছে ঢাকায় শান্তর সদ্যোজাত সন্তানের চিবুক। সন্তানের জন্য এমন উপহার দিতে পারাও পিতার জন্য গর্বের।
শেষ পর্যন্ত ১০৫ বলে ৯ চার ২ ছক্কায় রাঙানো ১০৪ রানের ইনিংসের শেষটা অবশ্য হলো একেবারে দুর্ভাগ্যজনক এক উপায়ে। মুজিবের বলে রিভার্স সুইপ করেছিলেন, পয়েন্টে বল ধরে ফেরত পাঠালেন নজিবুল্লাহ জাদরান। শান্ত তবু ক্রিজে ফেরার সময় ছিল, কিন্তু পা পিছলে পড়ে গেলেন। উইকেট ভেঙে দেয়া আফগান কিপার গুরবাজও তাই এসে পিঠ চাপড়ে দিলেন শান্তর। একই সঙ্গে দুই অর্থ হতে পারে সে পিঠ চাপড়ানোর – মন খারাপ করতে না বলা। এবং বাহবা।
কিছুক্ষণ আগে মিরাজ সেঞ্চুরি করেছেন, ১১২ রানে রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে উঠেও গেছেন। এরপর এল শান্তর মাহেন্দ্রক্ষণ। তার আগে অবশ্য নার্ভাস নাইনটিজ নয়, নার্ভাস এইটিজে বুঝি পেয়েছিল শান্তকে। একবার ক্যাচ দিয়ে বাঁচলেন। একবার মিরাজের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রানআউট হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছিল। তার কিছুক্ষণ পর তাঁর বিরুদ্ধে এলবিডাব্লিউর আবেদন করল আফগানিস্তান, আম্পায়ারের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নট আউট ছিল বলে ‘আম্পায়ার্স কল’-এ বেঁচে গেলেন।
কিন্তু নাজমুল হোসেন শান্তর অসাধারণ ইনিংসের বিশ্লেষণে গেলে অতটুকুর দিকে হয়তো চোখই পড়বে না কারও। পড়া উচিৎও নয়। ওই একটু-আধটু কমতি না হয় কোচের নোটখাতার জন্যই থাক। এশিয়া কাপে বাংলাদেশের বাঁচা মরার সমীকরণের দিনে আফগানিস্তানের বিপক্ষে শান্তর এমন ইনিংস যে শৌর্যের কথা বলে।
গত মার্চের আগে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ১৫ ইনিংসে কখনো ৩৮ রানের বেশি করতে পারেননি। এক অঙ্কেই আউট হয়েছিলেন ৭ বার। কিন্তু মার্চে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মিরপুরে ফিফটির পর থেকে ওয়ানডেতে শান্ত যেন ছুটছেন ‘শ্যাডোফ্যাক্সে’র গতিতে। সেটি নিয়ে সর্বশেষ ১৪ ইনিংসে তাঁর সেঞ্চুরি হয়ে গেল ২টি, ফিফটি ৪টি। সমালোচনাকে জেদ হিসেবে নিয়ে এভাবেই বুঝি ফিরে আসতে হয়!
মার্চ থেকে এ সময়টা মূলত তিনে খেললেও আজ ব্যাটিং অর্ডারের অদল-বদলে চারে নেমেছেন শান্ত। কিন্তু তার ফর্মে কোনো অদল-বদল হয়নি। মিরাজ ওদিকে অ্যাঙ্করের ভূমিকা নিয়েছিলেন, সিঙ্গেলের ওপরই খেলছিলেন মূলত। রানের চাকার গতি বাড়ানোর দায়িত্বটা নিলেন শান্ত।
১২তম ওভারে করিম জানাতকে চার মেরে রানের খাতা খুললেন, ১৪তম ওভার শেষ করলেন গুলবদীনকে টানা দুই চার মেরে। এরপর গুলবদীন ও নবীকে আরও দুটি চার মেরে কিছুক্ষণ বিরতি নিয়েছিলেন। সে বাউন্ডারি-খরা যখন ঘুচল, তাতে ফিফটিই হয়ে গেল! ফজল হক ফারুকিকে পুল করে স্কয়ারে ছক্কা মেরে ফিফটি হলো, তারপর শান্ত যেন অশান্ত।
ফারুকিকে পরের ওভারে একটি ছক্কা ও চার মারলেন, লেগ বাইয়েও একটা চার হলো। এরপর ‘নার্ভাস এইটিজে’র পর নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে রশিদ খানকে এক ওভারে দুই চার। ততক্ষণে বাংলাদেশের রানও ২৫০ পেরিয়ে গেছে। এরপরই এল মাহেন্দ্রক্ষণ – মুজিবের বলে সিঙ্গেল নিয়ে শান্তর সেঞ্চুরি। আর শান্তর মন রাঙানো উদ্যাপন।