‘ইলিশের বাড়ি’ যাবেন কিভাবে
- আপডেট সময় : ০৭:১৭:১৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩
- / ৫৫৯ বার পড়া হয়েছে
পদ্মা, মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীর মিলনস্থল চাঁদপুর। প্রতি বছর তিন নদীর মোহনায় ধরা দেয় অসংখ্য ইলিশ। এখানে গড়ে উঠেছে দেশের বৃহত্তম ইলিশের বাজার। ইলিশ মাছের অন্যতম প্রজননক্ষেত্র চাঁদপুরকে ডাকা হয় ‘ইলিশের বাড়ি’। ইলিশ খেতে ও কিনতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে এই ইলিশবাজারে মানুষের ঢল নামে। এই ইলিশ চলে যায় বিভিন্ন জেলাসহ দেশের সীমানা পেরিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে।
ভোর থেকেই ঘাটে ইলিশের পসরা বসে। চাঁদপুরের ইলিশ চেনার সহজ কিছু উপায় আছে। এখানকার ইলিশ একেবারে চকচকে রুপালি রঙের হয়ে থাকে। অন্যান্য জায়গার ইলিশের রুপালি রঙের সঙ্গে লালচে আভা দেখা যায়। ইলিশের মধ্যে চাঁদপুরের টেনুয়ালোসা ইলিশই স্বাদে, গন্ধে ও রূপে অনন্য। অনেকের ধারণা, বড় ইলিশের স্বাদ বেশি। কিন্তু প্রকৃত স্বাদের ইলিশ ওজনে সাতশ থেকে আটশ গ্রামের হয়। এর চেয়ে বড় হলে ইলিশের স্বাদ কমে যায়। এই ইলিশকে স্থানীয় ভাষায় বলে ‘গাদাপুরা ইলিশ’। প্রতি কেজি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা।
পহেলা বৈশাখ বাদে বাজারে ইলিশের মূল্য প্রায় একই থাকে। সাতশ থেকে আটশ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, এক কেজি ওজনের ৯০০ থেকে এক হাজার টাকা, দেড় কেজি ওজনের ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকা। এ ছাড়া শুধু ইলিশের ডিমও কিনতে পাওয়া যায়। প্রতি বক্স ডিম প্রায় ১৮০০ থেকে দুই হাজার টাকা।
ইলিশ ছাড়াও চাঁদপুরে আছে পদ্মা, মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীর মোহনা। মোহনা থেকে নৌকায় পাড়ি জমালেই পাওয়া যাবে মেঘনা ও পদ্মার চর। যাওয়ার পথে নদীর বুকে জেলেদের মাছ ধরা, বিশাল জলরাশির কলকল ধ্বনি ও নদীর শীতল বাতাসের অনুভূতি মন ছুঁয়ে যাবে। বালুচরের পাশাপাশি নদীর উত্তাল ঢেউ আপনাকে কিছুক্ষণের জন্য হারিয়ে নিয়ে যাবে কক্সবাজার সৈকতে। তাই এর নাম রাখা হয়েছে মিনি কক্সবাজার। বালি চরে আছে কাশফুলের মেলা। চর থেকে ফিরে সন্ধ্যার পূর্বে নদীর বুকে লাল সূর্যের লুকিয়ে যাওয়ার মনোরম দৃশ্য না দেখলে বলে বোঝানো যাবে না।
চাঁদপুর মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিতে সমৃদ্ধ। এখানে আছে লেকের ওপর নির্মিত ভাস্কর্য ‘অঙ্গীকার’। নদীর মোহনায় ত্রিশ লাখ শহীদের আত্মত্যাগের স্মৃতি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ভাস্কর্য ‘রক্তধারা’। এই শহরের প্রাণকেন্দ্র রয়েছে ‘ইলিশ চত্বর’। বাংলাদেশের একমাত্র মৎস গবেষণা ইনস্টিটিউটও চাঁদপুরে। নদীঘেরা এই ছোট্ট শহর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর।
একদিনের ট্যুর হিসেবে চাঁদপুর খুবই চমৎকার জায়গা। একসঙ্গে নদীভ্রমণ ও ইলিশ খাওয়া হয়ে যাবে। প্রকৃতি ও সূর্যাস্তের দৃশ্য মানুষের মন কাড়বেই। পারিবারিকভাবে ও বন্ধুরা মিলে ঘুরে আসতে পারেন ইলিশের বাড়ি চাঁদপুরে।
খাবার
ইলিশের বাজারঘেঁষে নদীর পাড়ে গড়ে উঠেছে ছোট ছোট হোটেল। ‘ইলিশ মাছ কিনে আনলে আমরা সাথে সাথে ভেজে দেব। গরম ভাতের সাথে শুকনো মরিচ ভাজা, মসুরির ডাল, ভর্তা খাবারের স্বাদকে আরও বৃদ্ধি করবে’, ইলিশ ভাজতে ভাজতে এমনটাই জানালেন জামাল। ইলিশ ভাজতে কত টাকা রাখেন? জিজ্ঞেস করলে বলেন, ‘দুই-তিনশ নিই আরকি’। এ ছাড়া রয়েছে ওয়ান মিনিটের বিখ্যাত আইসক্রিম ও মিষ্টি। প্রতি আইসক্রিম ৪০ টাকা।
যেখানে থাকবেন
রাত্রিযাপন করতে চাইলে লঞ্চঘাট থেকে শহরে যেতে ১০ টাকা অটোরিকশা ভাড়া। শহরে বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল আছে। নদীর পাড়েও কিছু হোটেল আছে, যেখানে জানালা দিয়ে নদীর দৃশ্য দেখা যাবে। সুলভমূল্যে এসব হোটেলে নিরাপদে থাকা যাবে।
যেভাবে যাবেন
ঢাকার সদরঘাট থেকে লঞ্চ-ভ্রমণে তিন ঘণ্টায় চাঁদপুর। কোনো ক্লান্তি ছাড়াই নদীর শীতল হাওয়া ও চারপাশের সৌন্দর্য দেখতে দেখতে যাত্রা শেষ হয়ে যাবে। লঞ্চে বসার সিট নন এসি, এসি ও কেবিনের সুব্যবস্থা রয়েছে। প্রায় প্রতি ঘণ্টায় লঞ্চ রয়েছে। লঞ্চ থেকে চাঁদপুর ঘাটে নামলেই ইলিশের শহর। লঞ্চ ঘাট থেকে রিকশা/ অটোরিকশায় মাত্র ১৫ টাকায় চলে আসবেন ইলিশের বাজারে। সেখান থেকে পাঁচ মিনিট হাঁটলেই তিন নদীর মোহনা। মোহনা থেকে নৌকায় মিনি কক্সবাজার। জনপ্রতি নৌকার ভাড়া নেবে ৬০ থেকে ৮০ টাকা।