দারুণ একটি সুন্দর দেশ জাপান। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এই দেশটি উন্নত জীবন, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি এবং সরল মনের মানুষদের জন্য বিশ্ববিখ্যাত। শুধু তাই নয়, তাদের প্রশাসনিক শৃঙ্খলাও অন্যান্য দেশের থেকে অনেক বেশি উন্নত। এই দেশে কোনও জিনিস চুরি যায় না। দুর্ঘটনাক্রমে তা হারালেও তা দ্রুত ফিরে পাওয়া যায়। আর যদি সেই জিনিসের মালিককে তিন মাসের মধ্যে খুঁজে পাওয়া না যায়, তবে তা পৌরসভায় ফেরত দিয়ে দিতে হয়।
আমাদের দেশের বাস বা ট্রেনে উঠলে একটা লেখা চোখে পড়ে। ‘পকেটমার হইতে সাবধান’ অথবা ‘নিজের জিনিস নিজের দায়িত্বে রাখুন’। শুধু বাংলাদেশেই নয়, এই সাবধানবাণী বিশ্বের প্রায় অনেক বড় বড় দেশেও থাকে। আমেরিকা ইউরোপের মতো দেশ গুলোও বাদ যাবে না। পাসপোর্টের মতো অনেক দরকারি জিনিস চুরি গেলে অনেক দেশেই ফেরত মেলে। কিন্তু আমাদের দেশে কিছু চুরি গেলে তা ফেরত পাওয়া একরকম অসম্ভব। কিন্তু জাপানে এরকম ভাবার সুযোগ নেই। প্রথমত সেদেশে কোনও জিনিস চুরি যায় না। আর হারালেও তা ফিরে পাওয়ার শতভাগ নিশ্চয়তা আছে।
এই দেশে প্রতি বছর প্রায় ১২.৬ কোটি মানুষ কিছু না কিছু হারান। তবে তা নিশ্চিত ভাবে ফিরে পান। আর তা সম্ভব হয় এখানকার আইন-কানুন এবং সংস্কৃতিগত বিষয়ের কারণে। তাদের প্রশাসনিক ব্যবস্থা অনেক শক্তিশালী। হারানোপ্রাপ্তির প্রক্রিয়া শুরু হয় স্থানীয় কোবান থেকে। এটা অনেকটা আমাদের দেশের রাস্তার পাশে থাকে পুলিশ কেবিনের মতো। জাপান জুড়ে ছয় হাজার তিনশটি কোবান পুলিশ স্টেশন রয়েছে। যেন মানুষ সহজেই প্রাপ্ত জিনিস জমা দিতে পারে।
তারপর চলে তিন মাস ধরে মালিকের খোঁজ। তাদের লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড ওয়েবসাইট রয়েছে, যেখানে তাদের হারানো জিনিস খুঁজতে পারেন। ওয়েবসাইটে হারিয়ে যাওয়া জিনিসপত্রের তালিকা দেখা যায়। হারিয়ে যাওয়া জিনিসটির মালিককে তিন মাসের মধ্যে খুঁজে না পাওয়া গেলে, সেটি যিনি খুঁজে পেঁয়েছেন তাকে বা পৌর সরকারকে দেওয়া হয়।
জাপানের রেল স্টেশনগুলি খুব ব্যস্ত। এই স্টেশনগুলিতে হারিয়ে যাওয়া জিনিসগুলি পৌঁছে দেওয়ার বিভিন্ন জায়গায় ব্যবস্থা করা হয়। এখানকার স্কুলে শিশুদের নৈতিক শিক্ষা দেওয়া হয়। তারা ছোট থেকেই ভালো কাজের অনুশীলন করে। তাই জাপানে গিয়ে কিছু হারিয়ে ফেললে চিন্তার কারণ নেই। শুধুমাত্র কতৃপক্ষকে জানিয়ে দিন, ঠিক ফেরত পাবেন।