রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) ঢাকা সফরে আসছেন। বৃহস্পতিবার বিকালে জাকার্তা থেকে ঢাকায় আসবেন তিনি। সফরে রুশ জাহাজের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার চাইতে পারেন সের্গেই ল্যাভরভ। এছাড়া বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব ও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য নিয়েও আলোচনা হতে পারে।
ডিসেম্বরে মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় থাকা রাশিয়ার জাহাজ উরসা মেজর রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সরঞ্জাম নিয়ে বাংলাদেশ অভিমুখে রওনা হয়। তখন যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তির কারণে জাহাজটি তীরে ভিড়তে পারেনি। পরে বাংলাদেশ একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে-যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা থাকায় ৬৯টি জাহাজও বাংলাদেশে আসতে পারবে না।
মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সন্ধ্যায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে তিনি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হবেন। পরদিন ৮ সেপ্টেম্বর সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। এরপর বিকালে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে নয়াদিল্লির উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বেন ল্যাভরভ। আগামী ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে অনুষ্ঠেয় জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন তিনি। ওই সম্মেলনে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আসছেন না। ল্যাভরভ তার প্রতিনিধিত্ব করবেন।
কূটনৈতিক সূত্র বলছে, ল্যাভরভ ঢাকা সফরের সময় দুদেশের সম্পর্কের নানা বিষয়ের পাশাপাশি বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব ও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য নিয়ে আলোচনা হতে পারে। এছাড়াও রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাওনা পরিশোধ নিয়েও আলোচনা হতে পারে। রূপপুরে রাশিয়ার সহায়তায় পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে বাংলাদেশ।
সের্গেই ল্যাভরভের গত মার্চে বাংলাদেশে আসার কথা ছিলো। তখন শিডিউল মেলাতে না পারায় আসতে পারেননি। ইউক্রেন যুদ্ধে বাংলাদেশ যাতে রাশিয়ার পক্ষে থাকে সে বিষয়েও তিনি কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালাতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। অনেকটা ভারত ও চীনের মতো অবস্থান বাংলাদেশের কাছেও প্রত্যাশা করে রাশিয়া। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে একবার ভোটাভুটিতে চীন ও ভারত ভোটদানে বিরত ছিলো। কিন্তু বাংলাদেশ রাশিয়ার বিপক্ষে ভোট দেয়। রাশিয়া মনে করে-রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের মাধ্যমে বাংলাদেশকে পারমাণবিক যুগে প্রবেশ করাতে সহায়তা করছে মস্কো। প্রায় ১৩ বিলিয়ন ডলারের এ প্রকল্প বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে সম্পর্কের অন্যতম নিয়ামক।
উল্লেখ্য, রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের ঋণের কিস্তি ডলারে পরিশোধ করতে না পারায় রুবলে পরিশোধের অনুরোধ করেছিল রাশিয়া। এরপর বাংলাদেশ রাজি হয়-চীনের মুদ্রা ইউয়ানে কিস্তি পরিশোধ করবে। এখন পর্যন্ত ইউয়ানে কিস্তি পরিশোধের টাকা দেওয়া শুরু করেনি বাংলাদেশ। ফলে আলোচনায় এ প্রসঙ্গও উঠতে পারে।
গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা চালায় রাশিয়া। এরপর থেকে সার্গেই ল্যাভরভ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সফর করছেন। ওই সময় থেকে তার বাংলাদেশ সফর নিয়ে আগ্রহ দেখিয়ে আসছে রাশিয়া।