Dhaka ০৯:১১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জি-২০ সম্মেলন শেষ, বিশ্বনেতারা একমত হলেন যেভাবে

ভারতের নয়াদিল্লিতে আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয়েছে জি-২০ সম্মেলন। রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন এর সমাপ্তি ঘোষণা করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এরপর তিনি জি-২০ জোটের পরবর্তী সভাপতি ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভার হাতে গাছের চারা তুলে দেন।

ইন্দোনেশিয়ায় অনুষ্ঠিত হওয়া গতবারের সম্মেলনের চেয়ে এবারের সম্মেলন সফলই বলা যায়। সভাপতি হিসেবে ভারত যা করেছে, তা গতবার করা যায়নি। এবার জোটের নেতারা ঐকমত্যে পৌঁছেছেন। এমনকি এরই মধ্যে এসেছে যৌথ ঘোষণা। একে ভারতের কূটনীতির সবচেয়ে বড় বিজয় বলেই মনে করা হচ্ছে।

তবে এখনই সভাপতি পদ থেকে সরে যাচ্ছে না ভারত। আগামী নভেম্বরে ভার্চুয়াল বৈঠক করার পরামর্শ দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সম্মেলন শেষ হলেও বিভিন্ন দেশের নেতাদের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক চলছে।

ইউক্রেনে রুশ হামলার পর বিশ্ব বিভক্ত হয়ে যাওয়ায় গত সম্মেলনে যৌথ ঘোষণার ব্যাপারে একমত হতে পারেননি জি-২০ নেতারা। এবারও তেমন শঙ্কা ছিল। তবে ভারতের দিল্লিতে শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) শুরু হওয়া সম্মেলনে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং অংশ না নেওয়ায় এবার সম্ভাবনা ছিল। তেমনটিই সম্ভব করেছে ভারত।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শনিবার জানান, যৌথ ঘোষণার ব্যাপারে একমত হয়েছেন জি-২০ সম্মেলনে অংশ নেওয়া বিশ্বনেতারা। তিনি হিন্দিতে বলেন, ‘বন্ধুরা, আমরা এইমাত্র সুসংবাদ পেলাম। আমাদের টিমের কঠোর পরিশ্রম ও সবার সহযোগিতায় যৌথ ঘোষণার ব্যাপারে একমত হয়েছেন বিশ্বনেতারা। এ জন্য আমি সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।’

এবারের সম্মেলনকে মাইলস্টোন বলছেন অংশ নেওয়া রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, বিশ্বনেতারা তাদের অবস্থানকে পুরোপুরি ব্যক্ত করতে পেরেছেন।

বিশ্বনেতাদের যৌথ ঘোষণায় যুদ্ধের কারণে ক্ষতির কথা বলা হলেও এর জন্য রাশিয়াকে দায়ী করা হয়নি। এমনকি রাশিয়ার সমালোচনাও করা হয়নি। এ কারণে সম্মেলনের সমালোচনা করেছে ইউক্রেন।

যেসব ব্যাপারে এসেছে যৌথ ঘোষণা
নতুন ঘোষণাপত্রের নাম দেওয়া হয়েছে ‘নয়াদিল্লি ঘোষণা’। এতে বলা হয়, দৃঢ়, টেকসই, ভারসাম্যপূর্ণ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে জোটের সদস্য রাষ্ট্রগুলো। ঐক্যের মূল লক্ষ্য থাকবে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে জি-২০ জোটভুক্ত রাষ্ট্রের উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা।

বিশ্বনেতারা বলেন, ‘কেউ পেছনে পড়ে থাকবে না, ভারতের প্রেসিডেন্সিতে ২০৩০ সালের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের এই সমন্বিত প্রয়াসে অবশ্যই প্রকৃত ঐক্য নিশ্চিত করতে হবে।’ সদস্যরাষ্ট্রগুলোর সরকারি খাতের পাশাপাশি বেসরকারি খাতগুলোও যেন আরও উৎপাদনশীল, টেকসই এবং প্রাণবন্ত হয়, সে জন্য জোটের পক্ষ থেকে সক্রিয় ভূমিকা নেওয়া হবে।

জলবায়ু পরিবর্তন ও এ কারণে সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় জোটগত তৎপরতার আওতা বাড়াবে জি-২০ জোট। জি-২০ সদস্যরাষ্ট্রগুলো পরিবেশবান্ধব জ্বালানির ওপর নির্ভরশীলতা বাড়াতে পারে, সেজন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেবে জি-২০। এসবের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণটি হলো কম দামে পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান।

জি-২০ জোটের অন্যতম সদস্য রাশিয়া তার প্রতিবেশী দেশ ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে গত দেড় বছর ধরে। ‘নয়াদিল্লি ঘোষণা’ অনুযায়ী, এই ইস্যুতে জি-২০ জোটের সদস্যরা জাতিসংঘের সনদ মেনে চলবেন। ওই সনদে দুই বা ততোধিক দেশের মধ্যকার সমস্যা সমাধানে আলোচনা ও কূটনৈতিক পন্থা অনুসরণের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

সদস্যরাষ্ট্রগুলোর খাদ্য ও পুষ্টির নিরাপত্তার বিষয়টিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেবে জি-২০ জোট। করোনা মহামারি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার ত্রুটিগুলোকে স্পষ্ট করেছে। সদস্যরাষ্ট্রগুলোর স্বাস্থ্যসেবা অবকাঠামোকে আরও দৃঢ় ও সমৃদ্ধ করতে কাজ করবে জি-২০ জোট।

সদস্যরাষ্ট্রগুলোর অর্থনীতি ও অন্যান্য ইস্যুতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে নারীরা যেন পুরুষের সমকক্ষ হয় এবং কার্যকরভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে, সে জন্য কাজ করবে জি-২০ জোট।

জি-২০ সম্মেলন শেষ, বিশ্বনেতারা একমত হলেন যেভাবে

আপডেট : ১১:১৪:১৭ পূর্বাহ্ন, রোববার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

ভারতের নয়াদিল্লিতে আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয়েছে জি-২০ সম্মেলন। রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন এর সমাপ্তি ঘোষণা করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এরপর তিনি জি-২০ জোটের পরবর্তী সভাপতি ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভার হাতে গাছের চারা তুলে দেন।

ইন্দোনেশিয়ায় অনুষ্ঠিত হওয়া গতবারের সম্মেলনের চেয়ে এবারের সম্মেলন সফলই বলা যায়। সভাপতি হিসেবে ভারত যা করেছে, তা গতবার করা যায়নি। এবার জোটের নেতারা ঐকমত্যে পৌঁছেছেন। এমনকি এরই মধ্যে এসেছে যৌথ ঘোষণা। একে ভারতের কূটনীতির সবচেয়ে বড় বিজয় বলেই মনে করা হচ্ছে।

তবে এখনই সভাপতি পদ থেকে সরে যাচ্ছে না ভারত। আগামী নভেম্বরে ভার্চুয়াল বৈঠক করার পরামর্শ দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সম্মেলন শেষ হলেও বিভিন্ন দেশের নেতাদের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক চলছে।

ইউক্রেনে রুশ হামলার পর বিশ্ব বিভক্ত হয়ে যাওয়ায় গত সম্মেলনে যৌথ ঘোষণার ব্যাপারে একমত হতে পারেননি জি-২০ নেতারা। এবারও তেমন শঙ্কা ছিল। তবে ভারতের দিল্লিতে শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) শুরু হওয়া সম্মেলনে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং অংশ না নেওয়ায় এবার সম্ভাবনা ছিল। তেমনটিই সম্ভব করেছে ভারত।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শনিবার জানান, যৌথ ঘোষণার ব্যাপারে একমত হয়েছেন জি-২০ সম্মেলনে অংশ নেওয়া বিশ্বনেতারা। তিনি হিন্দিতে বলেন, ‘বন্ধুরা, আমরা এইমাত্র সুসংবাদ পেলাম। আমাদের টিমের কঠোর পরিশ্রম ও সবার সহযোগিতায় যৌথ ঘোষণার ব্যাপারে একমত হয়েছেন বিশ্বনেতারা। এ জন্য আমি সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।’

এবারের সম্মেলনকে মাইলস্টোন বলছেন অংশ নেওয়া রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, বিশ্বনেতারা তাদের অবস্থানকে পুরোপুরি ব্যক্ত করতে পেরেছেন।

বিশ্বনেতাদের যৌথ ঘোষণায় যুদ্ধের কারণে ক্ষতির কথা বলা হলেও এর জন্য রাশিয়াকে দায়ী করা হয়নি। এমনকি রাশিয়ার সমালোচনাও করা হয়নি। এ কারণে সম্মেলনের সমালোচনা করেছে ইউক্রেন।

যেসব ব্যাপারে এসেছে যৌথ ঘোষণা
নতুন ঘোষণাপত্রের নাম দেওয়া হয়েছে ‘নয়াদিল্লি ঘোষণা’। এতে বলা হয়, দৃঢ়, টেকসই, ভারসাম্যপূর্ণ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে জোটের সদস্য রাষ্ট্রগুলো। ঐক্যের মূল লক্ষ্য থাকবে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে জি-২০ জোটভুক্ত রাষ্ট্রের উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা।

বিশ্বনেতারা বলেন, ‘কেউ পেছনে পড়ে থাকবে না, ভারতের প্রেসিডেন্সিতে ২০৩০ সালের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের এই সমন্বিত প্রয়াসে অবশ্যই প্রকৃত ঐক্য নিশ্চিত করতে হবে।’ সদস্যরাষ্ট্রগুলোর সরকারি খাতের পাশাপাশি বেসরকারি খাতগুলোও যেন আরও উৎপাদনশীল, টেকসই এবং প্রাণবন্ত হয়, সে জন্য জোটের পক্ষ থেকে সক্রিয় ভূমিকা নেওয়া হবে।

জলবায়ু পরিবর্তন ও এ কারণে সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় জোটগত তৎপরতার আওতা বাড়াবে জি-২০ জোট। জি-২০ সদস্যরাষ্ট্রগুলো পরিবেশবান্ধব জ্বালানির ওপর নির্ভরশীলতা বাড়াতে পারে, সেজন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেবে জি-২০। এসবের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণটি হলো কম দামে পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান।

জি-২০ জোটের অন্যতম সদস্য রাশিয়া তার প্রতিবেশী দেশ ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে গত দেড় বছর ধরে। ‘নয়াদিল্লি ঘোষণা’ অনুযায়ী, এই ইস্যুতে জি-২০ জোটের সদস্যরা জাতিসংঘের সনদ মেনে চলবেন। ওই সনদে দুই বা ততোধিক দেশের মধ্যকার সমস্যা সমাধানে আলোচনা ও কূটনৈতিক পন্থা অনুসরণের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

সদস্যরাষ্ট্রগুলোর খাদ্য ও পুষ্টির নিরাপত্তার বিষয়টিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেবে জি-২০ জোট। করোনা মহামারি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার ত্রুটিগুলোকে স্পষ্ট করেছে। সদস্যরাষ্ট্রগুলোর স্বাস্থ্যসেবা অবকাঠামোকে আরও দৃঢ় ও সমৃদ্ধ করতে কাজ করবে জি-২০ জোট।

সদস্যরাষ্ট্রগুলোর অর্থনীতি ও অন্যান্য ইস্যুতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে নারীরা যেন পুরুষের সমকক্ষ হয় এবং কার্যকরভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে, সে জন্য কাজ করবে জি-২০ জোট।