ভূমি উন্নয়ন কর ধার্য্য ও আদায়ে নতুন আইন প্রণয়নের লক্ষ্যে জাতীয় সংসদে ‘ভূমি উন্নয়ন কর আইন-২০২৩’ পাস হয়েছে। বিলের প্রস্তাব অনুযায়ী, ২৫ বিঘা পর্যন্ত কৃষি জমির উন্নয়ন কর মওকুফের বিধান রাখা হয়েছে। তবে ২৫ বিঘার বেশি জমির মালিক হলে পুরোটারই ভূমি উন্নয়ন কর দিতে হবে। বাংলা সনের পরিবর্তে ইংরেজি বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী ওই কর আদায় করা হবে।
নতুন করে ভূমি উন্নয়ন কর ধার্য, কর ফাঁকি ও আদায়ে অনিয়ম প্রতিরোধ করতে আজ রোববার (১০ই সেপ্টেম্বর) জাতীয় সংসদ অধিবেশনে বিলটি পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী। বিলের ওপর জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব করেন বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্যরা। তবে তাদের সেই প্রস্তাব কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। এরপর স্পিকারের আসনে থাকা ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি করেন। পরে কণ্ঠভোটে বিলটি পাস হয়।
বিলটি পাসের প্রক্রিয়ায় ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, নতুন এই আইনের আওতায় অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর আদায় করার ফলে ভূমির মালিক সর্বসাধারণ উপকৃত হবেন এবং স্মার্ট ভূমি ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সহায়ক হবে। এতে সরকারের রাজস্ব বাড়বে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
ভূমিমন্ত্রী বলেন, ভূমি উন্নয়ন কর ধার্য ও আদায়ের লক্ষ্যে নতুন এই আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। প্রস্তাবিত ‘ভূমি উন্নয়ন কর আইন-২০২৩’ শীর্ষক আইনে জনস্বার্থে ২৩টি ধারা সন্নিবেশ করা হয়েছে। এ ছাড়া ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা, উত্তরাধিকারী, কালেক্টর ইত্যাদি সংজ্ঞা যুগোপযোগী করা হয়েছে। আইনে কৃষি ভূমির ভূমি উন্নয়ন করের হার ২৫ বিঘা পর্যন্ত মওকুফ রাখার বিধান রয়েছে এবং অকৃষি ভূমির ভূমি উন্নয়ন করের হার সরকার সময় সময়ে গেজেট প্রজ্ঞাপন দ্বারা পুনঃনির্ধারণ করতে পারবে মর্মে বিধান রাখা হয়েছে।
আইনে জনগণের সুবিধার্থে ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ের জন্য জুলাই-জুন অর্থাৎ অর্থবছরকে কর বৎসর হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আগে পহেলা বৈশাখ থেকে ৩০ চৈত্র পর্যন্ত সময়ের জন্য ভূমি উন্নয়ন কর দিতে হতো। এখন সেটা হবে পহেলা জুলাই থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত।
সংসদে পাস হওয়া বিলে কার কত ভূমি উন্নয়ন কর, তা আগেই জমির মালিককে জানিয়ে দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। ভূমি উন্নয়ন কর ব্যবহার ভিত্তিক হবে। প্রতিবছর কার কত ভূমি উন্নয়ন কর, সেটা ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা তালিকা তৈরি করে সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে পাঠাবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) তা নোটিশ বোর্ডে টাঙিয়ে দেবেন। এ বিষয়ে যদি কারো আপত্তি থাকে, সেটি তিনি দায়ের করতে পারেন। তিনি এসিল্যান্ড ও জেলা কালেক্টরের কাছে আপত্তি জানিয়ে আবেদন করতে পারেন। জেলা কালেক্টর (ডিসি) তা ১৫ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করবেন।
আইনে প্রজ্ঞাপন দিয়ে মহামারী, দুর্বিপাক ইত্যাদি বিশেষ সময়ে ভূমি উন্নয়ন কর কমানোর সুযোগ রাখা হয়েছে। এ ছাড়া বিলের বিধান অনুযায়ী, কোনো ভূমির মালিক টানা তিন বছর ভূমি উন্নয়ন কর না দিলে তাকে প্রথম বছর থেকে তৃতীয় বছর পর্যন্ত সোয়া ছয় শতাংশ হারে জরিমানাসহ কর পরিশোধ করতে হবে। এ ছাড়া ভূমি মালিক আগ্রহী হলে বকেয়া ও হাল ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ের সাথে অথবা পরবর্তীতে অনধিক তিন বছরের ভূমি উন্নয়ন কর অগ্রিম প্রদান করতে পারবেন।
বিল পাসের প্রক্রিয়ায় আলোচনায় অংশ নেন বিরোধী দলীয় সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ, শামীম হায়দার পাটোয়ারি, বেগম রওশন আরা মান্নান, কাজী ফিরোজ রশীদ, রুস্তম আলী ফরাজী, গণফোরামের মোকাব্বির খান এবং স্বতন্ত্র সদস্য রেজাউল করিম বাবলু।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বিরোধী দলের সদস্যরা বিলটি আনার জন্য ভূমি মন্ত্রীর প্রশংসা করেন এবং ভূমি ব্যবস্থাপনায় শৃংঙ্খলা আনয়নের জন্য তারা মন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।