সাইবার নিরাপত্তা আইনে মিথ্যা মামলা করা হলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য করে সাজার বিধান যুক্ত হতে যাচ্ছে। রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) এই নতুন বিধান যুক্ত করে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি আইনটির রিপোর্ট সংসদে উত্থাপন করা হয়েছে।
এতে বলা হয়, যদি কোনো ব্যক্তি অন্য কোনো ব্যক্তির ক্ষতিসাধনের অভিপ্রায়ে এই আইনের অন্য কোনো ধারার অধীনে মামলা বা অভিযোগ দায়ের করার জন্য ন্যায্য বা আইনানুগ কারণ না জেনেও মামলা বা অভিযোগ দায়ের করেন বা করান, তাহলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
এক্ষেত্রে যিনি মিথ্যা মামলা করবেন এবং যিনি মামলা করাবেন তারা যে অপরাধের কথা মামলায় উল্লেখ করবেন সেই অপরাধের জন্য যে দণ্ড নির্ধারিত রয়েছে সে দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। যদি একাধিক ধারায় কোনো মামলা বা অভিযোগ করা হয়, তাহলে বর্ণিত অপরাধগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি যে অপরাধের দণ্ড রয়েছে সেই দণ্ডেই মামলাকারীকে দণ্ডিত করা হবে।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি বিলটি পর্যালোচনা করে এই সংযোজনটি সুপারিশ করেছেন।
এতে আরও বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তির লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে ট্রাইব্যুনাল এই অপরাধের অভিযোগ গ্রহণ ও মামলার বিচার করতে পারবেন।
পাশাপাশি বিলের ৩২ ধারা বাতিল করার সুপারিশ করা হয়েছে। এই ধারায় সরকারি সংস্থার গোপনীয়তা লঙ্ঘনকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।
স্থায়ী কমিটি বিলের কয়েকটি ধারায় শব্দগত পরিবর্তন আনার সুপারিশ করেছে। আইনে মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় সংগীত বা জাতীয় পতাকার বিরুদ্ধে কোনো ধরনের প্রপাগান্ডা ও প্রচারণা সংক্রান্ত অপরাধের কথা বলা আছে। এখানে ‘পতাকার বিরুদ্ধে কোনো ধরনের প্রপাগান্ডা’ এর স্থলে ‘পতাকা সম্পর্কে বিদ্বেষ, বিভ্রান্তি ও কুৎসামূলক’ শব্দ প্রতিস্থাপন করা হবে।
বিলটিতে পরোয়ানা ছাড়াই তল্লাশি ও গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেওয়া আছে পুলিশকে। এখানে সংশোধনী এনে বলা হয়েছে, এই ধারায় সাবইন্সপেক্টর পর্যায়ের কর্মকর্তার জায়গায় পুলিশ পরিদর্শক পর্যায়ের কর্মকর্তা বিনা পরোয়ানায় তল্লাশি ও গ্রেপ্তার করতে পারবেন।
উপস্থাপিত বিলের ৮ নম্বর ধারায়ও শব্দগত সংশোধনী আনা হচ্ছে। এখানে আগে বলা ছিল, যদি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ‘প্রতীয়মান’ হয় ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক মাধ্যমে প্রকাশিত বা প্রচারিত কোনো তথ্য-উপাত্ত দেশের বা উহার কোনো অংশের সংহতি, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, ধর্মীয় মূল্যবোধ বা জনশৃঙ্খলা ক্ষুণ্ন করে বা জাতিগত বিদ্বেষ ও ঘৃণার সঞ্চার করে, তা হলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ওই তথ্য-উপাত্ত অপসারণ বা ব্লক করার জন্য মহাপরিচালকের মাধ্যমে বিটিআরসিকে অনুরোধ করতে পারবে।
এখানে প্রতীয়মান শব্দের জায়গায় ‘তথ্য–উপাত্ত বিশ্লেষণ সাপেক্ষে, বিশ্বাস করার কারণ থাকে যে’ প্রতিস্থাপন করা হবে।
এদিকে পরোয়ানা ছাড়াই গ্রেপ্তার করা যাবে এমন বিধান বহাল রাখার নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি পাঠিয়েছে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি। তারা বলেছেন, আন্তর্জাতিক আইনি মানদণ্ডের পরিপন্থী কোনো আইন পাস হলে তা সাংবাদিক সমাজের কাছে কখনোই গ্রহণযোগ্য হবে না।