Dhaka ০৯:৪৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সরকার সবকিছুকে অক্টোপাসের মতো ঘিরে ফেলেছে : মির্জা ফখরুল

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার সবকিছুকেই একটা অক্টোপাসের মতো ঘিরে ফেলেছে। চেপে ধরেছে বলে দাবি করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘সবাই একমত এই সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। সংসদে যে জাতীয় পার্টি আছে, তারা বলছেন, এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না।’

শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন তিনি।

এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়ার সঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাদের সাক্ষাতের পর নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছিলেন, ‘সরকারের নির্বাচনে ফাঁদে পা না দিয়ে একদম আন্দোলন চালিয়ে নিতে বলেছেন বেগম খালেদা জিয়া।’ বিএনপি চেয়ারপারসনের এমন নির্দেশনার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘কে কী বলেছেন, জানি না। আমাদের তো ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আছে, স্ট্যান্ডিং কমিটি আছে, সেভাবেই সিদ্ধান্ত হয়।’

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘চেয়ারপারসন (খালেদা জিয়া) অসুস্থ। তিনি কোনো দলীয় নির্দেশনা দেন না। এসবের মধ্যে তাকে টানবেন না।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকারের সবকিছুতে প্রতারণা, মানুষকে বোকা বানানোর চেষ্টা। অথচ একবারও ভাবে না যে মানুষ বোকা নয়। সবকিছু মানুষ বোঝে। তাদের (সরকার) সমস্যা হচ্ছে তারা একটি গণ্ডির মধ্যে বাস করে। তাকে (প্রধানমন্ত্রী) বোঝাচ্ছে সবকিছু ঠিক আছে। আপনি এতো জনপ্রিয়, এতো উড়াল সড়ক, ফ্লাইওভার তৈরি করেছেন, এই দেশের মানুষ আপনাকে ছাড়া কিছু বোঝে না। আপনি যা বলবেন তাই হবে। এই যে ভুল ধারণা সৃষ্টি করা হচ্ছে বারবার।

মার্কেটে আগুন লাগার প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ঢাকার পুরানো মার্কেটগুলো আগুন লাগছে। বঙ্গবাজার, নিউ মার্কেট এখন কৃষি মার্কেট দেখলাম। এই মার্কেটগুলো এখন আবার নতুন করে তৈরি করার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। সেইগুলো তৈরি করে নিজস্ব লোকদের বরাদ্দ দেওয়া হবে। আমরা আগুনে ক্ষতিগ্রস্তদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।

মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের সাধারণ সম্পাদক আদিলুর রহমান খান শুভ্র ও পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিন এলানের সাজা বাতিল করে তাদের মুক্তির দাবি জানান মির্জা ফখরুল।

২০১৮ সালের নির্বাচন সংক্রান্ত মামলাগুলোর কোনও আদেশ এখন পর্যন্ত হাইকোর্ট দেয়নি উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, তাহলে গোটা ব্যবস্থাটা কী? সেটা হচ্ছে একটা দলকে নির্বাচিত করার সুব্যবস্থাগুলো করে দেওয়া। যাতে তারা আবার ক্ষমতায় থাকতে পারে। এই অবস্থায় সামনে আবার নির্বাচন আসছে। আমরা বলেছি, এই নির্বাচনে তখন যাওয়া সম্ভব হবে যখন একটি নিরপেক্ষ সরকার থাকবে। কারণ দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি অনুযায়ী দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের অধীনে তো কোনো দিনও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, এখনও সময় আছে সরকারের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক। তারা সমস্ত অহংকার, প্রতিহিংসা বাদ দিয়ে জনগণের কল্যাণের কথা চিন্তা করে, জনগণ যেন তাদের ভোট দিয়ে সংসদ ও সরকার নির্বাচিত করতে পারে সেই ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনবে। অন্যথায় বিএনপির ক্ষতি তো হচ্ছে, বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এটা একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হবে।

জামালপুর জেলার ডিসিকে প্রত্যাহার বিষয়ে প্রশ্নে মির্জা ফখরুল বলেন, এটা আই ওয়াশ। এছাড়া কিছুই নয়।

ভারতে বিরোধী জোটের ১৪টি মিডিয়া বয়কটের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা এখন সেই রকম কিছু করি নাই। শুধু বলেছি, দয়া করে নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশন করুন। সত্যকে সত্য, কালোকে কালো বলুন। এগুলো না বললে আমার কীভাবে দায়িত্ব পালন করবো। একজন সাংবাদিক তার দায়িত্ব পালন করবে। একইভাবে শিক্ষক, অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ তার দায়িত্ব পালন করবে। না হলে রাষ্ট্রকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না।

সরকার আগের মতো বিএনপির বিরুদ্ধে সমানে মিথ্যা, গায়েবি মামলা দেওয়ার শুরু করেছে দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, জামালপুরে গত ৩৬ দিনে ৩০টি গায়েবি মামলা হয়েছে। আপনার দেখেছেন, একসঙ্গে ৭০ জন কোর্টে যাচ্ছে জামিন নিতে। হাইকোর্ট থেকে জামিন নেওয়ার পরে নিম্ন আদালত প্রতি ৭ দিন পর-পর তারিখ দিচ্ছে। যার ফলে ঢাকা থেকে ৭ দিন পর-পর জামালপুর গিয়ে হাজিরা দিতে হচ্ছে। আজকে এমন কোনো থানা নেই যেখানে বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে মামলা নেই। এটাকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বলবেন? আমার দুঃখ হয় কিছু উচ্চ শিক্ষিত মানুষ এটাকে সাপোর্ট করে, কিছু মিডিয়া তাকে সমর্থন দেয়। তাহলে কোথায় গেল আমাদের সেই ৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন।

রংপুর ১৬ সেপ্টেম্বর ও বগুড়াতে ১৭ সেপ্টেম্বর তারুণ্যের রোডমার্চ কর্মসূচির কথা জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, আগামী ১৮ তারিখ বিএনপি যুগপৎ আন্দোলন নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবে।

সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স, আবদুস সালাম, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সরকার সবকিছুকে অক্টোপাসের মতো ঘিরে ফেলেছে : মির্জা ফখরুল

আপডেট : ০৯:৪০:৪৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার সবকিছুকেই একটা অক্টোপাসের মতো ঘিরে ফেলেছে। চেপে ধরেছে বলে দাবি করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘সবাই একমত এই সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। সংসদে যে জাতীয় পার্টি আছে, তারা বলছেন, এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না।’

শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন তিনি।

এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়ার সঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাদের সাক্ষাতের পর নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছিলেন, ‘সরকারের নির্বাচনে ফাঁদে পা না দিয়ে একদম আন্দোলন চালিয়ে নিতে বলেছেন বেগম খালেদা জিয়া।’ বিএনপি চেয়ারপারসনের এমন নির্দেশনার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘কে কী বলেছেন, জানি না। আমাদের তো ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আছে, স্ট্যান্ডিং কমিটি আছে, সেভাবেই সিদ্ধান্ত হয়।’

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘চেয়ারপারসন (খালেদা জিয়া) অসুস্থ। তিনি কোনো দলীয় নির্দেশনা দেন না। এসবের মধ্যে তাকে টানবেন না।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকারের সবকিছুতে প্রতারণা, মানুষকে বোকা বানানোর চেষ্টা। অথচ একবারও ভাবে না যে মানুষ বোকা নয়। সবকিছু মানুষ বোঝে। তাদের (সরকার) সমস্যা হচ্ছে তারা একটি গণ্ডির মধ্যে বাস করে। তাকে (প্রধানমন্ত্রী) বোঝাচ্ছে সবকিছু ঠিক আছে। আপনি এতো জনপ্রিয়, এতো উড়াল সড়ক, ফ্লাইওভার তৈরি করেছেন, এই দেশের মানুষ আপনাকে ছাড়া কিছু বোঝে না। আপনি যা বলবেন তাই হবে। এই যে ভুল ধারণা সৃষ্টি করা হচ্ছে বারবার।

মার্কেটে আগুন লাগার প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ঢাকার পুরানো মার্কেটগুলো আগুন লাগছে। বঙ্গবাজার, নিউ মার্কেট এখন কৃষি মার্কেট দেখলাম। এই মার্কেটগুলো এখন আবার নতুন করে তৈরি করার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। সেইগুলো তৈরি করে নিজস্ব লোকদের বরাদ্দ দেওয়া হবে। আমরা আগুনে ক্ষতিগ্রস্তদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।

মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের সাধারণ সম্পাদক আদিলুর রহমান খান শুভ্র ও পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিন এলানের সাজা বাতিল করে তাদের মুক্তির দাবি জানান মির্জা ফখরুল।

২০১৮ সালের নির্বাচন সংক্রান্ত মামলাগুলোর কোনও আদেশ এখন পর্যন্ত হাইকোর্ট দেয়নি উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, তাহলে গোটা ব্যবস্থাটা কী? সেটা হচ্ছে একটা দলকে নির্বাচিত করার সুব্যবস্থাগুলো করে দেওয়া। যাতে তারা আবার ক্ষমতায় থাকতে পারে। এই অবস্থায় সামনে আবার নির্বাচন আসছে। আমরা বলেছি, এই নির্বাচনে তখন যাওয়া সম্ভব হবে যখন একটি নিরপেক্ষ সরকার থাকবে। কারণ দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি অনুযায়ী দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের অধীনে তো কোনো দিনও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, এখনও সময় আছে সরকারের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক। তারা সমস্ত অহংকার, প্রতিহিংসা বাদ দিয়ে জনগণের কল্যাণের কথা চিন্তা করে, জনগণ যেন তাদের ভোট দিয়ে সংসদ ও সরকার নির্বাচিত করতে পারে সেই ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনবে। অন্যথায় বিএনপির ক্ষতি তো হচ্ছে, বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এটা একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হবে।

জামালপুর জেলার ডিসিকে প্রত্যাহার বিষয়ে প্রশ্নে মির্জা ফখরুল বলেন, এটা আই ওয়াশ। এছাড়া কিছুই নয়।

ভারতে বিরোধী জোটের ১৪টি মিডিয়া বয়কটের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা এখন সেই রকম কিছু করি নাই। শুধু বলেছি, দয়া করে নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশন করুন। সত্যকে সত্য, কালোকে কালো বলুন। এগুলো না বললে আমার কীভাবে দায়িত্ব পালন করবো। একজন সাংবাদিক তার দায়িত্ব পালন করবে। একইভাবে শিক্ষক, অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ তার দায়িত্ব পালন করবে। না হলে রাষ্ট্রকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না।

সরকার আগের মতো বিএনপির বিরুদ্ধে সমানে মিথ্যা, গায়েবি মামলা দেওয়ার শুরু করেছে দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, জামালপুরে গত ৩৬ দিনে ৩০টি গায়েবি মামলা হয়েছে। আপনার দেখেছেন, একসঙ্গে ৭০ জন কোর্টে যাচ্ছে জামিন নিতে। হাইকোর্ট থেকে জামিন নেওয়ার পরে নিম্ন আদালত প্রতি ৭ দিন পর-পর তারিখ দিচ্ছে। যার ফলে ঢাকা থেকে ৭ দিন পর-পর জামালপুর গিয়ে হাজিরা দিতে হচ্ছে। আজকে এমন কোনো থানা নেই যেখানে বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে মামলা নেই। এটাকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বলবেন? আমার দুঃখ হয় কিছু উচ্চ শিক্ষিত মানুষ এটাকে সাপোর্ট করে, কিছু মিডিয়া তাকে সমর্থন দেয়। তাহলে কোথায় গেল আমাদের সেই ৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন।

রংপুর ১৬ সেপ্টেম্বর ও বগুড়াতে ১৭ সেপ্টেম্বর তারুণ্যের রোডমার্চ কর্মসূচির কথা জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, আগামী ১৮ তারিখ বিএনপি যুগপৎ আন্দোলন নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবে।

সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স, আবদুস সালাম, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।