![](https://71newsbd.com/wp-content/plugins/print-bangla-news/assest/img/print-news.png)
সারাদেশে লাগামহীন ডেঙ্গুর প্রভাব। আক্রান্তের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম ১৪ দিনে ডেঙ্গুতে যত মৃত্যু হয়েছে, দেশের ইতিহাসে কোনো মাসের দুই সপ্তাহে এত বেশি মানুষের মৃত্যু হয়নি। এখন পর্যন্ত গড়ে এ মাসে প্রতিদিন ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। চলতি মাসের প্রথম ১৪ দিনে এডিস মশাবাহিত এ রোগে মৃত্যু হয়েছে ১৮৫ জনের। গত আগস্ট মাসের প্রথম দুই সপ্তাহে মারা গিয়েছিলেন ১৬৫ জন। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৯০ জনে। একই সময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন দুই হাজার ১২৯ জন। শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
এতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২ হাজার ১২৯ জন। এরমধ্যে ঢাকা সিটির ৮৪৩ জন এবং ঢাকা সিটির বাইরে এক হাজার ২৮৬ জন। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ৯ হাজার ৮৯১ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন।
চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ লাখ ৬১ হাজার ৯৬৪ জন। সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ১ লাখ ৫১ হাজার ২৮৩ জন। মারা গেছেন ৭৯০ জন। এর মধ্যে ঢাকা সিটির ৫৪৭ জন এবং ঢাকা সিটির বাইরের ২৪৩ জন।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ড. আতিকুর রহমান জানান, ডেঙ্গু এখন সিজনাল নেই, সারা বছরই হচ্ছে। বৃষ্টি শুরু হলে এটা বাড়ছে। গত বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ জুন মাস থেকে শুরু হয়েছিল। কিন্তু চলতি বছর মে মাস থেকেই আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে গেছে।
তিনি বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে মশা নিরোধক ওষুধ ব্যবহারের পাশাপাশি সিটি করপোরেশনে পক্ষ থেকে সব জায়গায় প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে। একই সঙ্গে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন বছরব্যাপী নানা উদ্যোগ নিলেও কীটতত্ত্ববিদ ড. মনজুর চৌধুরী বলছেন, মশানিধনে শুধু জেল-জরিমানা আর জনসচেনতনা বাড়িয়ে কাজ হবে না। সঠিকভাবে জরিপ চালিয়ে দক্ষ জনবল দিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।
চলমান ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান বলেন, ডেঙ্গু যে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে, তা নিয়ন্ত্রণে বাড়তি কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। অনেক কিছুই প্রকৃতির ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো মশা নিয়ন্ত্রণ। সেখানে কার্যকর উদ্যোগ দেখছি না
এর আগে দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড হয়েছিল গত বছর-২৮১ জন। এ ছাড়া ডেঙ্গুতে ২০১৯ সালে মৃত্যু হয়েছিল ১৭৯ জনের। ২০২০ সালে ৭ জন এবং ২০২১ সালে ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয় ১০৫ জনের।
এবার মৃত্যুহার এত বেশি হওয়ার কারণ কী জানতে চাইলে অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, এবারের ডেঙ্গু পরিস্থিতি সব বারের চেয়ে আলাদা। আগে যেমন জ্বরের পাশাপাশি শরীর ব্যথা, চোখব্যথা, রক্তা জমা বা র্যাশ—সেগুলো এবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে না।
যেটা অনুমান করা যাচ্ছে, আগামী দিনে আরও ভয়ংকর রূপে ডেঙ্গু আসবে। পাতলা পায়খানা, কাশির মতো লক্ষণ এবার যুক্ত হয়েছে। লক্ষণে পরিবর্তন হওয়ায় ডেঙ্গু বুঝে ওঠার ক্ষেত্রে দেরি হয়ে যাচ্ছে। আবার অনেকেই দ্বিতীয়বারের মতো আক্রান্ত হচ্ছেন। আগে যে ধরনে আক্রান্ত হয়েছেন, তিনি নতুন ধরনে আক্রান্ত হলে স্বাভাবিকভাবেই ঝুঁকি বেড়ে যায়।
উল্লেখ্য, গত বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ৬২ হাজার ৩৮২ জন। এরমধ্যে মারা গেছেন ২৮১ জন।