এশিয়া কাপে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বশেষ জয় ছিল সেই ২০১২ সালে। ওই যে, শচীন টেন্ডুলকারের শততম শতক পাওয়ার ম্যাচটা! এরপর এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বসূচক এই টুর্নামেন্টে অন্য সব দলকে হারালেও রোহিত-কোহলিদের আর হারাতেই পারছিল না বাংলাদেশ। আজ ঘুচল সে আক্ষেপ। ৭ রানে ভারতকে হারিয়েছে বাংলাদেশ।
শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে ২৬৬ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় ভারত। তানজিদ হাসান তামিমের শিকার হয়ে ফেরেন রোহিত শর্মা ও তিলক ভার্মা। পরে শুভমান গিলকে নিয়ে খেলা ধরেন লোকেশ রাহুল। তবে হঠাৎই থেমে যান রাহুল। দলীয় ৭৪ রানে মাহেদীর বলে আউট হন তিনি। পরক্ষণেই ইনফর্ম ইশান কিষানকে ফিরিয়ে দেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
তানজিমের পরের শিকার তিলক ভার্মা, তানজিমের মতই আজ ওয়ানডে অভিষেক হয়েছিল যার। কিন্তু তানজিমের বলের লেংথ না বুঝে ছাড়তে গিয়েছিলেন, সেটাই কাল হয়েছে। অফ স্টাম্পে লেগেছিল সে বল। এর আগে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে দেখা হয়েছিল দুজনের। সেখানেও তিলককে আউট করেছিলেন তানজিম সাকিব। তিন বছর পরও নিজের ভাগ্যে বদল আনতে পারেননি এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।
লোকেশ রাহুলকেও ‘প্রায়’ আউট করেই ফেলেছিলেন তানজিম সাকিব। কিন্তু রাহুলের ব্যাট মিস করে প্যাডে লাগা বলটা উইকেটে আঘাত হানত না, দেখিয়েছে বল ট্র্যাকার। তাই রিভিউ নিয়েও কাজ হয়নি বাংলাদেশের। প্রথম স্পেলে টানা ছয় ওভার বল করে মাত্র ১৫ রান দিয়েছেন অভিষিক্ত এই পেসার, আর তাতেই হাঁসফাঁস করেছে ভারত।
একপ্রান্তে শুভমান গিল দাঁড়িয়ে ছিলেন ঠায়, সেই ওপেনিং থেকেই। আরেক প্রান্ত থেকে একের পর এক ব্যাটসম্যান আসছিলেন আর যাচ্ছিলেন। শুরুতে তানজিম সাকিবের তোপে খেই হারানো ভারতকে পরে কেউই তেমন আশা দিতে পারেননি। লোকেশ রাহুলকে নিয়ে গিল ইনিংস মেরামত করা শুরু করেছিলেন বটে, কিন্তু সেই জুটি পঞ্চাশ পেরোনোর পরেই ছোবল হানেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ৩৯ বলে ১৯ করা রাহুল যখনই হাত খুলে খেলা শুরু করতে চাইলেন, তখনই শামীম হোসেনের হাতে ধরা পড়েন মিড উইকেটে।
ইশান কিষাণেরও একই দশা। পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে দুর্দান্ত খেলা এই বাঁহাতি গোটা টুর্নামেন্টে আর ঝলক দেখাতে পারেননি, সুযোগও পাননি তেমন। আজ দলের গুরুতর মুহূর্তে হাসেনি তাঁর ব্যাট। ১৫ বলে ৫ রান করে বিদায় নিয়েছেন মিরাজের বলে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে, এলবিডব্লিউ হয়ে।
ভারতের চার নম্বর পজিশনে জায়গা পাকা করার সুযোগ ছিল সূর্যকুমার যাদবের সামনে। আজ যদিও চার নম্বরে নামেননি, তাও ‘অডিশন’-এ ভালো করলে বিশ্বকাপে ভারতের মূল একাদশে জায়গা মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যেত। সেদিকেই এগোচ্ছিলেন এই ডানহাতি। শুরু থেকেই সুইপ খেলার দিকে আগ্রহী সূর্যকুমারের সঙ্গে গিলের জুটিটা বেশি চিন্তার কারণ হওয়ার আগেই দৃশ্যপটে সাকিব। ৩৪ বলে ২৬ রান করেই সাকিবের বলে বোল্ড হন সূর্যকুমার। জুটি থামে ৪৫ রানে। জাদেজাকে কিছুক্ষণ পর বোল্ড করে ম্যাচের লাগাম ভালোভাবেই বাংলাদেশের হাতে এনে দেন মোস্তাফিজ।
গিলও টিকতে পারেননি শেষমেশ। ধারাভাষ্যকক্ষে ভারতের সাবেক কোচ রবি শাস্ত্রী নিশ্চিত ছিলেন, শুভমান গিল বাংলাদেশের কোনো না কোনো বোলারকে ‘টার্গেট’ করে পেটানো শুরু করবেনই। কারণ, তাঁর সেই ক্ষমতা আছে। বোলার নির্বাচন করে মাথা ঠাণ্ডা রেখে ইনিংসের গতি বাড়াতে পারেন তিনি। শাস্ত্রীর কথামতো শেখ মেহেদি হাসানকে পেটানো শুরু করেওছিলেন গিল। কিন্তু ওই পর্যন্তই। পরের বলেই দুর্দান্ত কামব্যাক মেহেদির। তাওহীদ হৃদয়ের হাতে গিলকে ক্যাচ বানিয়ে আউট করেছেন এই ডানহাতি অফস্পিনার। ১৩৩ বলে ১২১ রান করেই থেমেছে গিলের প্রতিরোধ।
এরপরেই হাল ধরেন অক্ষর প্যাটেল আর শার্দুল ঠাকুর। ব্যাট হাতে দুজনই যে একদম নবিশ, বলা যাবে না। বরং ইনিংসের শেষ দিকে ব্যাট চালানোর টুকটাক অভ্যাস দুজনেরই আছে। অক্ষর অন্তত সেটাই দেখিয়েছেন। ৪৮ তম ওভারের শেষ দুই বলে শেখ মেহেদিকে টানা চার-ছক্কা মেরে ম্যাচের লাগাম আবারও ভারতের হাতে এনে দেন এই বাঁহাতি।
কিন্তু অক্ষরকে সঙ্গ দিতে পারেননি শার্দুল ঠাকুর। ৪৯তম ওভারের প্রথম বলেই মিরাজের হাতে স্কোয়্যার লেগে শার্দুলকে ক্যাচ বানান মোস্তাফিজ।
কিন্তু বাংলাদেশের কাঁটা হয়ে অক্ষর ছিলেন তখনও। ওভারের তৃতীয় বলে মোস্তাফিজকে লং অফ দিয়ে চার মেরে সে ভয়টা বাড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনিই। কিন্তু মোস্তাফিজই বা কেন হার মানবেন! পরের বলেই অক্ষরকে তানজিদ তামিমের হাতে ক্যাচ বানিয়ে আবারও আঘাত হানেন মোস্তাফিজ। ৩৪ বলে ৪২ রান করে বিদায় নেন অক্ষর।
এরপর মোহাম্মদ শামি আর প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ চেষ্টা করেও দলকে জেতাতে পারেননি। শেষ ওভারে তানজিম সাকিবের বলে একটাই চার মারতে পেরছিলেন শামি, পরের বলে রান আউট হয়ে দলের বিদায় নিশ্চিত করেন তিনিই।