নিত্যপণ্যের বাজার সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। তাই বাধ্য হয়ে আলু, পেঁয়াজ ও ডিমের দাম বেঁধে দেয় সরকার। কিন্তু শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকালে বাজার ঘুরে দেখা যায় আলু, পেঁয়াজ ও ডিম বিক্রি হচ্ছে আগের বাড়তি দামেই। নতুন দামের নির্দেশনা ব্যবসায়ীরা পেলেও, মানছে না কেউই। শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর বাড্ডা এলাকার একাধিক বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বাণিজ্য মন্ত্রণালয় খুচরা বাজারে প্রতিটি ডিমের দাম ১২ টাকা, আলুর দাম প্রতিকেজি ৩৫-৩৬ টাকা এবং পেঁয়াজের দাম ৬৪-৬৫ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। ঘোষণার পর থেকেই বাজারে এ দাম কার্যকর হওয়ার কথা। তবে পরের দিন শুক্রবারও সেটা হয়নি।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর টাউনহল বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি হালি ডিম আগের মতো ৫০ থেকে ৫২ টাকা এবং ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা। প্রতি কেজি সাদা আলু ৫০ টাকা এবং লাল আলু ৫৫ টাকায় রয়ে গেছে। কমেনি পেঁয়াজের দামও। ভারতের আমদানি করা পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৭০ থেকে ৭৫ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজ ৯০ থেকে ৯৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
মধ্যবাড্ডা কাঁচাবাজারে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, যথারীতি আলু বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৫০ টাকা করে, যেখানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা করে। এছাড়াও ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা করে, যেখানে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা। এছাড়াও ডিম বিক্রি হচ্ছে প্রতি হালি ৫৫ টাকা করে, যেখানে সরকারি নির্ধারিত দাম ৪৮ টাকা।
এসব বিষয়ে বাজার করতে আসা সোহরাব নামের একজন বেসরকারি চাকরিজীবী বলেন, এর আগেও করোনার সময় সরকার একবার আলুর দাম বেঁধে দিয়েছিল। তেল চিনির দামও নিয়মিত বেঁধে দেয়া হয়, কিন্তু বাজারে এসব বিক্রেতারা মানেন না।
সরকারের বেঁধে দেয়া দামে পণ্য বিক্রি করছেন না কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে বিক্রেতাদের অজুহাতের শেষ নেই। কয়েকজন বিক্রেতা আবার বলছেন তারা নাকি বেঁধে দেয়া দামের বিষয়টি জানেন-ই না। তবে অধিকাংশরা বলছেন বেঁধে দেয়া দাম কার্যকর হতে কিছুটা সময় লাগবে।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি শিং মাছ (আকারভেদে) ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা, রুই মাছ (আকারভেদে) ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা, মাগুর মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, মৃগেল ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকায়, পাঙাশ ১৯০ থেকে ২২০ টাকা, ইলিশ (আকারভেদে) ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা, চিংড়ি ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা, বোয়াল ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, কাতলা ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, পোয়া ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ টাকা, কই মাছ ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা, মলা ৪৫০ টাকা, ট্যাংরা ১ হাজার ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে সবজির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। বাজারে প্রতি কেজি বেগুন ৮০ থেকে ১২০ টাকা, করলা ৬০ থেকে ৮০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৪০ থেকে ৬০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, ধুন্দল ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, শসা ৫০ থেকে ৮০ টাকা, প্রতিটি লাউ ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পেঁপের কেজি ৪০ টাকা, লেবুর হালি ১০ থেকে ২০ টাকা, ধনে পাতার কেজি ৪০০ টাকা, কলার হালি ৩০ টাকা, জালি কুমড়া প্রতিটি ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারগুলোতে শীতকালীন সবজি কিছুটা চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। ছোট বাঁধাকপি প্রতিটি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ছোট আকারের ফুলকপি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, মুলার কেজি ৪০ টাকা, শিম ২০০ থেকে ২৪০ টাকা, পাকা টমেটো প্রকারভেদে ১০০ থেকে ১৬০ টাকা ও গাজর ১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায়, সোনালি মুরগি প্রতি কেজি ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকা, লেয়ার প্রতি কেজি ৩৫০ টাকা, কক মুরগি লাল ৩৫০ থেকে ৩৬০ টাকায় প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া দেশি মুরগি প্রতি কেজি মানভেদে ৬৫০ থেকে ৬৮০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে এলাকাভেদে গরুর মাংস প্রতি কেজি ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। আর খাসি মানভেদে ১০০০ টাকা থেকে ১১০০ টাকায় প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে।
মুরগির দোকানগুলোতে দেখা যায়— কেউ কিনছেন ব্রয়লার, কেউ দাম জানছেন সোনালি, কক, লেয়ার মুরগির। দোকানিরা জানান মুরগির পাশাপাশি গিলা, কলিজা, পা, মাথার ক্রেতা আগের তুলনায় বেড়েছে।
দোকান থেকে যেসব ক্রেতা মুরগি কিনে কেটে নিয়ে এসব পা মাথা, গিলা কলিজাগুলো নেন না সেগুলোই মূলত একত্রিত করে পরে অন্য সাধারণ ক্রেতাদের কাছে মুরগির চেয়ে কম দামে বিক্রি করা হয়। যারা দাম বেশির কারণে আস্ত মুরগি কিনতে পারেন না, তারাই মূলত এগুলো কেজি দরে কিনে নেন। বাজারে এসব গিলা কলিজা, পা, মাথা এক সঙ্গে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা করে। আর যদি কেউ শুধু গিলা কলিজা কিনতে চান সেক্ষেত্রে কিনতে হবে ১৫০ টাকা কেজিতে। অন্যদিকে শুধু পা আর মাথা মিলিয়ে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৮০ টাকায়।
রাজধানীর গুলশান সংলগ্ন লেকপাড় বাজারে মুরগি বিক্রেতা জাহিদুল ইসলাম বলেন, এক সময় কোনো গরিব অসহায় মানুষ এসে এগুলো চেয়ে নিয়ে যেত। আর এখন এগুলো নিয়মিত বিক্রি হয় কেজি হিসেবে। মূলত ব্রয়লার মুরগির দাম যখন থেকে বেড়েছে তখন থেকে এসব বিক্রি শুরু হয়েছে বেশি। এখন সব দোকানেই এগুলো রেখে পরে আলাদাভাবে বিক্রি করে। মূলত নিম্ন আয়ের মানুষরাই নিয়মিত এগুলো কিনে নিয়ে যায়। এখন এসবের আলাদা রকমের চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে।