ঢাকা ০৩:১১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

এমন কেউ বাদ নেই যে পয়সা খাচ্ছে না: ওসি

রাজশাহী প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ০৬:৫৫:১৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩
  • / ৩৭৫ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

রাজশাহীর চারঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুল আলমের বিরুদ্ধে আব্দুল আলিম কালু নামের এক আসামির স্ত্রী সাহারা বেগমকে ডেকে ৭ লাখ টাকা চাওয়ার একটি অডিও ফাঁস হয়েছে। এসময় ওসি সাহারা বেগমকে মাদক ব্যবসার পরামর্শ দেন এবং নির্বিঘ্নে ব্যবসার জন্য জেলা ডিবির এক ওসিকে বদলি করে দেওয়ারও আশ্বাস দেন। এরই মধ্যে সাহারা বেগমের করা লিখিত অভিযোগ আমলে নিয়ে অভিযুক্ত ওসি মাহবুবুলকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।

গতকাল শনিবার রাজশাহী পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন সাহারা বেগম। অভিযোগের অনুলিপি সরাসরি ও ডাকযোগে পুলিশের আইজিপি, রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি ও স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের পাঠানো হয়েছে। অভিযোগের সঙ্গে ৬ মিনিটি ৫০ সেকেন্ডের একটি অডিও রেকর্ডও পাঠানো হয়েছে।

সাহারা বেগম চারঘাট থানার চামটা গ্রামের আব্দুল আলিম কালুর স্ত্রী। কালু মাদক মামলায় কারাগারে আছেন।

অভিযোগে সাহারা বেগম উল্লেখ করেন, গত ১৩ সেপ্টেম্বর চাঁদাবাজির অভিযোগ করতে তাঁর ছেলে রাব্বিসহ তাঁকে চারঘাট থানার ওসি নিজের শয়নকক্ষে ডেকে নেয়। এরপর তাদের কাছ থেকে ওসি মোবাইল ফোন নিয়ে নেন ও অর্থ দাবি করেন।

ওই অডিওতে ওসি মাহবুবুল আলমকে বলতে শোনা যায়, ‘নির্বাচন করতে মন্ত্রী আমাকে গাইবান্ধা থেকে এখানে নিয়ে এসেছেন। আমি তাঁর কথা ছাড়া কারও কথা শুনি না।’ এসময় চারঘাট এলাকায় গিয়ে মাদক ব্যবসায়ীদের ধরে মামলা দেওয়ার কারণে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসির সমালোচনা করেন তিনি। এরপর মাহবুবুল বলেন, ‘দুই লাখ টাকা দেন, কালকেই ডিবির ওসিকে বদলি করে দেব।’

সাহারা বেগমকে ওসি বলেন, ‘আপনার স্বামী আমার অনেক ক্ষতি করে গেছে (ওসির বিরুদ্ধে এসপি অফিসে অভিযোগ করেছিলেন)। এবার আপনার পরিবারের কাউকে ধরলে ১০ লাখ টাকার কমে ছাড়াতে পারব না।’ এরপর ওসি বলেন, ‘এখনো তোমার গায়ে আঁচড় দেইনি। বহুত ফাঁকি দিয়েছ। কালকে ৫ লাখ টাকা নিয়ে আসবা। এখন সেরকম সময় নয় যে কেউ পয়সা খায় না। সবাই পয়সা খাচ্ছে। এমন কেউ বাদ নেই যে পয়সা খাচ্ছে না। পুরো জেলা পয়সা খাচ্ছে। এখানে আমার থানা চালাতে মাসিক অনেক টাকা লাগছে। আমি স্যারকে কথা দিয়ে এসেছি। স্যারকে বলেছি, এখানে মাদক ছাড়া কিছু নেই।’ মুক্তা (চারঘাটের মাদক সম্রাট নামে পরিচিত) অ্যাকশন নিতে পারবে না, শুভ (ছাত্রলীগ নেতা ও মাদক কারবারি) অ্যাকশন নিতে পারবে না। তোমরা ৫ লাখ টাকা দিতে পারবা? ধরে ওদের চালান দিয়ে দেব। থাকি না থাকি ওদের সাইজ করব। তোমরা বাইরে থেকে ব্যবসা (মাদক ব্যবসা) করবে।’

জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি আতিকুর রেজা সরকার আতিকের আবারও সমালোচনা করে ওসিকে বলতে শোনা যায়, ‘নির্বাচনের আগে শুভকে ধরতে পারব না। কথা সব ভেঙে বলব না। কথা সব হয়ে গেল; যদি আতিকের বদলি চাও ২ লাখ টাকা দাও। কালকেই আতিকের বদলি হয়ে যাবে।’

ওসিকে বলতে শোনা যায়, ‘৫ লাখ আর ২ লাখ— ৭ লাখ টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করো। আতিক বাদ, ওই দুইজনকে (মুক্তা ও শুভ) ট্যাকেল দেওয়ার দায়িত্ব আমার। নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পরে মন্ত্রীকে বলে ওই দুইজনকে ধরে অ্যারেস্ট করে চালান করে দেব। আমার সব ওপরের লাইন। যে টাকা দিবা এই টাকাই ওপরে কাজ করবে।’

অডিওতে গৃহবধূ সাহারা বেগমের ‘সুন্দর চেহারা’ নিয়েও মন্তব্য করতে শোনা যায় ওসিকে।

এ বিষয়ে চারঘাট থানার ওসি মাহবুবুল আলমের ফোন নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।

রাজশাহী জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল আলম বলেন, আমরা অডিও রেকর্ডসহ একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগ তদন্ত করা হচ্ছে। ঘটনা সত্য হলে ওসির বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বর্তমানে তাঁকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

এমন কেউ বাদ নেই যে পয়সা খাচ্ছে না: ওসি

আপডেট সময় : ০৬:৫৫:১৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩

রাজশাহীর চারঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুল আলমের বিরুদ্ধে আব্দুল আলিম কালু নামের এক আসামির স্ত্রী সাহারা বেগমকে ডেকে ৭ লাখ টাকা চাওয়ার একটি অডিও ফাঁস হয়েছে। এসময় ওসি সাহারা বেগমকে মাদক ব্যবসার পরামর্শ দেন এবং নির্বিঘ্নে ব্যবসার জন্য জেলা ডিবির এক ওসিকে বদলি করে দেওয়ারও আশ্বাস দেন। এরই মধ্যে সাহারা বেগমের করা লিখিত অভিযোগ আমলে নিয়ে অভিযুক্ত ওসি মাহবুবুলকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।

গতকাল শনিবার রাজশাহী পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন সাহারা বেগম। অভিযোগের অনুলিপি সরাসরি ও ডাকযোগে পুলিশের আইজিপি, রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি ও স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের পাঠানো হয়েছে। অভিযোগের সঙ্গে ৬ মিনিটি ৫০ সেকেন্ডের একটি অডিও রেকর্ডও পাঠানো হয়েছে।

সাহারা বেগম চারঘাট থানার চামটা গ্রামের আব্দুল আলিম কালুর স্ত্রী। কালু মাদক মামলায় কারাগারে আছেন।

অভিযোগে সাহারা বেগম উল্লেখ করেন, গত ১৩ সেপ্টেম্বর চাঁদাবাজির অভিযোগ করতে তাঁর ছেলে রাব্বিসহ তাঁকে চারঘাট থানার ওসি নিজের শয়নকক্ষে ডেকে নেয়। এরপর তাদের কাছ থেকে ওসি মোবাইল ফোন নিয়ে নেন ও অর্থ দাবি করেন।

ওই অডিওতে ওসি মাহবুবুল আলমকে বলতে শোনা যায়, ‘নির্বাচন করতে মন্ত্রী আমাকে গাইবান্ধা থেকে এখানে নিয়ে এসেছেন। আমি তাঁর কথা ছাড়া কারও কথা শুনি না।’ এসময় চারঘাট এলাকায় গিয়ে মাদক ব্যবসায়ীদের ধরে মামলা দেওয়ার কারণে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসির সমালোচনা করেন তিনি। এরপর মাহবুবুল বলেন, ‘দুই লাখ টাকা দেন, কালকেই ডিবির ওসিকে বদলি করে দেব।’

সাহারা বেগমকে ওসি বলেন, ‘আপনার স্বামী আমার অনেক ক্ষতি করে গেছে (ওসির বিরুদ্ধে এসপি অফিসে অভিযোগ করেছিলেন)। এবার আপনার পরিবারের কাউকে ধরলে ১০ লাখ টাকার কমে ছাড়াতে পারব না।’ এরপর ওসি বলেন, ‘এখনো তোমার গায়ে আঁচড় দেইনি। বহুত ফাঁকি দিয়েছ। কালকে ৫ লাখ টাকা নিয়ে আসবা। এখন সেরকম সময় নয় যে কেউ পয়সা খায় না। সবাই পয়সা খাচ্ছে। এমন কেউ বাদ নেই যে পয়সা খাচ্ছে না। পুরো জেলা পয়সা খাচ্ছে। এখানে আমার থানা চালাতে মাসিক অনেক টাকা লাগছে। আমি স্যারকে কথা দিয়ে এসেছি। স্যারকে বলেছি, এখানে মাদক ছাড়া কিছু নেই।’ মুক্তা (চারঘাটের মাদক সম্রাট নামে পরিচিত) অ্যাকশন নিতে পারবে না, শুভ (ছাত্রলীগ নেতা ও মাদক কারবারি) অ্যাকশন নিতে পারবে না। তোমরা ৫ লাখ টাকা দিতে পারবা? ধরে ওদের চালান দিয়ে দেব। থাকি না থাকি ওদের সাইজ করব। তোমরা বাইরে থেকে ব্যবসা (মাদক ব্যবসা) করবে।’

জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি আতিকুর রেজা সরকার আতিকের আবারও সমালোচনা করে ওসিকে বলতে শোনা যায়, ‘নির্বাচনের আগে শুভকে ধরতে পারব না। কথা সব ভেঙে বলব না। কথা সব হয়ে গেল; যদি আতিকের বদলি চাও ২ লাখ টাকা দাও। কালকেই আতিকের বদলি হয়ে যাবে।’

ওসিকে বলতে শোনা যায়, ‘৫ লাখ আর ২ লাখ— ৭ লাখ টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করো। আতিক বাদ, ওই দুইজনকে (মুক্তা ও শুভ) ট্যাকেল দেওয়ার দায়িত্ব আমার। নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পরে মন্ত্রীকে বলে ওই দুইজনকে ধরে অ্যারেস্ট করে চালান করে দেব। আমার সব ওপরের লাইন। যে টাকা দিবা এই টাকাই ওপরে কাজ করবে।’

অডিওতে গৃহবধূ সাহারা বেগমের ‘সুন্দর চেহারা’ নিয়েও মন্তব্য করতে শোনা যায় ওসিকে।

এ বিষয়ে চারঘাট থানার ওসি মাহবুবুল আলমের ফোন নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।

রাজশাহী জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল আলম বলেন, আমরা অডিও রেকর্ডসহ একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগ তদন্ত করা হচ্ছে। ঘটনা সত্য হলে ওসির বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বর্তমানে তাঁকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।