ঢাকা ০১:৪০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

সংগীতের উজ্জ্বল নক্ষত্র সুচিত্রা মিত্র

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৯:২৭:৪৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩
  • / ৩৬৮ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

সুচিত্রা মিত্র ছিলেন একজন স্বনামধন্য সংগীতশিল্পী। দীর্ঘকাল তিনি ছিলেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে রবীন্দ্রসংগীত বিভাগের প্রধান। তাঁর জীবনের একটা বড় অংশ জুড়ে ছিল রবীন্দ্রসংগীতের সাধনা। সংগীত বিষয়ে তাঁর বেশ কিছু গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। শেষ জীবনে তিনি রবীন্দ্রসংগীতের তথ্যকোষ রচনার কাজে নিজেকে নিযুক্ত করেন। ১৯২৪ সালের এই দিনে (১৯ সেপ্টেম্বর) তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তাঁর দৃপ্ত কণ্ঠে গাওয়া ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি’ গানটি সকলকে অনেক অনুপ্রেরণা দেয়।

সুচিত্রা মিত্র ছোটবেলা থেকে রবীন্দ্রসংগীতের চর্চা শুরু করেন। তাঁর বাবা ছিলেন রবীন্দ্র অনুরাগী। তাঁর মা ও গান করতেন। তাঁদের বাড়িতে সবসময় সংগীত চর্চা চলত। সুচিত্রা বসে বসে সে গান শুনতেন। সংগীতে তাঁর প্রথম শিক্ষাগুরু ছিলেন পিতৃবন্ধু পঙ্কজ কুমার মল্লিক। তারপর শৈলজানন্দ, শান্তিদেব ঘোষের মতো মহারথীরা তাঁকে সংগীত শিক্ষা দেন। ১৯৪১ সালে দশম শ্রেণীতে পড়ার সময় তিনি শান্তিনিকেতনের সংগীত ভবন থেকে বৃত্তি লাভ করেন। ১৯৪৩ সালে শান্তিনিকেতনে পড়ার সময় প্রাইভেটে ম্যাট্রিক পরীক্ষা দেন। ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হিসাবে প্রাইভেটে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা দেন। একই বছর রবীন্দ্র সংগীতে ডিপ্লোমা লাভ করেন৷ এরপর স্কটিশ চার্চ কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকেই অর্থনীতিতে সম্মানসহ বিএ পাস করেন।

তিনি রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করেন। দীর্ঘ একুশ বছর শিক্ষকতার পর ১৯৮৪ সালে তিনি রবীন্দ্রভারতী থেকে অবসর নেন। রবীন্দ্রভারতীতে অধ্যাপক হিসাবে কর্মরত থাকাকালে তিনি বাংলায় এমএ পাস করেন।

কলেজ-জীবনে সুচিত্রা মিত্র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের অভিযোগে যারা গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তাঁদের মুক্তির জন্য তিনি পতাকা হাতে রাস্তায় রাস্তায় মিছিল করেন।

তাঁর বয়স যখন একুশ বছর, তখন তাঁর গানের প্রথম রেকর্ড বের হয়। সেটি ছিল রবীন্দ্রসংগীতের রেকর্ড। তাঁর পিতার লেখা গান নিয়ে দ্বিতীয় রেকর্ডটি বের হয়। তাঁর সর্বমোট সাড়ে চারশোরও বেশি রবীন্দ্রসংগীতের রেকর্ড বের হয়।

সুচিত্রা মিত্রের গায়কী ঢং ছিল একেবারেই আলাদা। তাঁর কণ্ঠ মাধুর্যের সঙ্গে ছিল এক ধরনের দৃঢ়তা। রবীন্দ্রসংগীত ছাড়াও তাঁর গলায় প্রাণ পেয়েছে অতুলপ্রসাদ, ব্রহ্মসংগীত, আধুনিক বাংলা গান। দীর্ঘদিন তিনি ভারতীয় গণনাট্য সংঘ সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন।

১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে ভারত সরকার তাঁকে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করে। ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে সঙ্গীত নাটক অকাদেমি এ্যাওয়ার্ড পান তিনি। এইচএমভি গোল্ডেন ডিস্ক এ্যাওয়ার্ড, বিশ্বভারতী থেকে দেশিকোত্তম এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছ থেকে আলাউদ্দিন পুরস্কার লাভ করেন। এ ছাড়া সাম্মানিক ডি-লিট পেয়েছেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ও বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

সংগীতের উজ্জ্বল নক্ষত্র সুচিত্রা মিত্র

আপডেট সময় : ০৯:২৭:৪৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩

সুচিত্রা মিত্র ছিলেন একজন স্বনামধন্য সংগীতশিল্পী। দীর্ঘকাল তিনি ছিলেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে রবীন্দ্রসংগীত বিভাগের প্রধান। তাঁর জীবনের একটা বড় অংশ জুড়ে ছিল রবীন্দ্রসংগীতের সাধনা। সংগীত বিষয়ে তাঁর বেশ কিছু গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। শেষ জীবনে তিনি রবীন্দ্রসংগীতের তথ্যকোষ রচনার কাজে নিজেকে নিযুক্ত করেন। ১৯২৪ সালের এই দিনে (১৯ সেপ্টেম্বর) তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তাঁর দৃপ্ত কণ্ঠে গাওয়া ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি’ গানটি সকলকে অনেক অনুপ্রেরণা দেয়।

সুচিত্রা মিত্র ছোটবেলা থেকে রবীন্দ্রসংগীতের চর্চা শুরু করেন। তাঁর বাবা ছিলেন রবীন্দ্র অনুরাগী। তাঁর মা ও গান করতেন। তাঁদের বাড়িতে সবসময় সংগীত চর্চা চলত। সুচিত্রা বসে বসে সে গান শুনতেন। সংগীতে তাঁর প্রথম শিক্ষাগুরু ছিলেন পিতৃবন্ধু পঙ্কজ কুমার মল্লিক। তারপর শৈলজানন্দ, শান্তিদেব ঘোষের মতো মহারথীরা তাঁকে সংগীত শিক্ষা দেন। ১৯৪১ সালে দশম শ্রেণীতে পড়ার সময় তিনি শান্তিনিকেতনের সংগীত ভবন থেকে বৃত্তি লাভ করেন। ১৯৪৩ সালে শান্তিনিকেতনে পড়ার সময় প্রাইভেটে ম্যাট্রিক পরীক্ষা দেন। ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হিসাবে প্রাইভেটে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা দেন। একই বছর রবীন্দ্র সংগীতে ডিপ্লোমা লাভ করেন৷ এরপর স্কটিশ চার্চ কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকেই অর্থনীতিতে সম্মানসহ বিএ পাস করেন।

তিনি রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করেন। দীর্ঘ একুশ বছর শিক্ষকতার পর ১৯৮৪ সালে তিনি রবীন্দ্রভারতী থেকে অবসর নেন। রবীন্দ্রভারতীতে অধ্যাপক হিসাবে কর্মরত থাকাকালে তিনি বাংলায় এমএ পাস করেন।

কলেজ-জীবনে সুচিত্রা মিত্র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের অভিযোগে যারা গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তাঁদের মুক্তির জন্য তিনি পতাকা হাতে রাস্তায় রাস্তায় মিছিল করেন।

তাঁর বয়স যখন একুশ বছর, তখন তাঁর গানের প্রথম রেকর্ড বের হয়। সেটি ছিল রবীন্দ্রসংগীতের রেকর্ড। তাঁর পিতার লেখা গান নিয়ে দ্বিতীয় রেকর্ডটি বের হয়। তাঁর সর্বমোট সাড়ে চারশোরও বেশি রবীন্দ্রসংগীতের রেকর্ড বের হয়।

সুচিত্রা মিত্রের গায়কী ঢং ছিল একেবারেই আলাদা। তাঁর কণ্ঠ মাধুর্যের সঙ্গে ছিল এক ধরনের দৃঢ়তা। রবীন্দ্রসংগীত ছাড়াও তাঁর গলায় প্রাণ পেয়েছে অতুলপ্রসাদ, ব্রহ্মসংগীত, আধুনিক বাংলা গান। দীর্ঘদিন তিনি ভারতীয় গণনাট্য সংঘ সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন।

১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে ভারত সরকার তাঁকে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করে। ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে সঙ্গীত নাটক অকাদেমি এ্যাওয়ার্ড পান তিনি। এইচএমভি গোল্ডেন ডিস্ক এ্যাওয়ার্ড, বিশ্বভারতী থেকে দেশিকোত্তম এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছ থেকে আলাউদ্দিন পুরস্কার লাভ করেন। এ ছাড়া সাম্মানিক ডি-লিট পেয়েছেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ও বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।