ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) আগামী নির্বাচনে পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক দল না পাঠানোর যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে শঙ্কা জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের। বৃহস্পতিবার দুপুরে বনানীতে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে পেশাজীবী সমাজের সঙ্গে মতবিনিময়ে এ শঙ্কার কথা জানান তিনি।
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক দল না পাঠানোর সিদ্ধান্তের কথা নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) জানিয়েছে ইইউ। বাজেট স্বল্পতার কারণে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে এক চিঠিতে ইসিকে জানানো হয়েছে। বিষয়টি বৃহস্পতিবারই গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম।
ইসি সচিব বলেন, ‘২০২৩-২৪ অর্থবছরে তাদের (ইইউ) পূর্ণাঙ্গ একটি মিশন নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য পাঠানোর আর্থিক বিষয় ছিল। তবে বাজেট স্বল্পতার কারণে তা না মঞ্জুর করা হয়েছে, বা আপাতত না পাঠানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ অব্যাহত থাকবে বলেও ইইউ জানিয়েছে।’
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গত জুলাইয়ে ঢাকা সফর করে ইইউর একটি প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল। প্রায় দুই সপ্তাহের এ সফরে কূটনীতিক, রাজনীতিবিদ, নির্বাচন কমিশন, নাগরিক সমাজ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গণমাধ্যম এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠক করে পর্যবেক্ষক দলটি।
অবশ্য ইইউ থেকে পর্যবেক্ষক আসা বা না আসায় নির্বাচনে কোনো প্রভাব পড়বে না বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তিনি জানান, নির্বাচনে পর্যবেক্ষক ইস্যুতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো চিঠি পায়নি বাংলাদেশ। ইইউর অনুপস্থিতিতেও বাংলাদেশের গ্রহণযোগ্য নির্বাচন বাধাগ্রস্ত হবে না।
দেশে গণতন্ত্র চর্চার কোন পরিবেশ নেই বলে অভিযোগ করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের, আগামী জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে বড় ধরনের সহিংসতার আশঙ্কার কথাও জানান।
কাদের বলেন, ‘বিদেশ থেকেও কথাগুলো এসেছে, আমাদের কথার ওপরেও কথা বলছে। তারা নিজস্ব স্টাডি থেকেও বলছে, সেটা হলো বাংলাদেশে এখন গণতন্ত্রের অভাব, গণতন্ত্র নেই। গণতন্ত্রের চর্চা করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। আরেকটি জিনিস ভয়াবহভাবে সামনে এসেছে, সেটা হলো একদলীয় শাসন ব্যবস্থার দিকে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।’
বর্তমান একাদশ সংসদের মেয়াদ প্রায় শেষ। এখন পরবর্তী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি। সাংবিধানিক বাধ্যবাধতা থাকায় নির্বাচন হতে হবে এ বছরের নভেম্বর থেকে আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে। ইসি এরই মধ্যে জানিয়েছে, আগামী নভেম্বরে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। আর ভোট হবে জানুয়ারির শুরুতে।
এসময় জাতীয় পার্টি মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপি বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির টানাটানিতেই প্রমাণ হচ্ছে জাতীয় পার্টি ক্ষমতার নিয়ামক শক্তি। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি জাতীয় পার্টিকে পাশে পেতে চাচ্ছে। দল দুটি ক্ষমতার জন্য অন্ধ হয়ে গেছে।
এসময় জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, দেশের মানুষ ভালো নেই। দেশের মানুষের পেটে খাবার নেই, তারা উন্নয়ন দেখে ক্ষুধা নিবারণ করতে পারে না। দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষের মাঝে হাহাকার উঠবে। সাধারণ মানুষ দ্রব্যমূল্য নাগালের মধ্যে দেখতে চায়।
অসাধু ব্যবসায়ী ও সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর আইন করতেও সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
জাতীয় পেশাজীবী সমাজের সভাপতি ও জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ডা. মোস্তাফিকুর রহমান আকাশ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় জাতীয় পার্টির মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুল হক চুন্নু, কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, প্রেসিডিয়াম সদস্য মোস্তফা আল মাহমুদ, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা শেরীফা কাদের বক্তব্য রাখেন।