বাজারে সবকিছুর এত দাম বেড়েছে যে আমাদের মতো নিম্ন আয়ের ক্রেতাদের জন্য যেন কিছুই কেনার নেই। এমনকি সবজি কিনতে এসেও বিচার বিবেচনা করতে হয় কোন সবজিটা কিনব। সব সবজিগুলোরই বেশি দাম। বরবটি, করলা, বেগুন কিনতে যেয়ে দেখলাম বেশি দাম, তাই বাধ্য হয়ে তুলনামূলক কম দামি সবজি পেঁপে আর মিষ্টি কুমড়া কিনলাম। অন্যদিকে এক ব্রয়লার ছাড়া অন্যান্য সব কিছুর দামই বাড়তি। যে কারণে মাছ-মাংস কেনাও যায় না। আগে তাও সবজির দাম কিছুটা কম ছিল, অন্তত সবজি কিনে খাওয়া যেত। এখন তো দাম বাড়তির কারণে সবজি কেনারও উপায় নেই। কথাগুলো বলছিলেন গার্মেন্টসে চাকরি করেন খোরশেদ আলম। তিনি রাজধানীর গুলশান সংলগ্ন লেকপাড় বাজারে এসেছেন।
বাজারে এমন কোনো সবজি নেই যারা দাম বাড়তি না। বলতে গেলে বাজারে ৬০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই। তুলনামূলক কম দাম বলতে শুধু মাত্র পেঁপে আর মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৪০ টাকা। আর বরবটি, টমেটো তো প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। এছাড়া সেঞ্চুরি ক্রস করে ১২০-এ গাজর, বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। সব মিলিয়ে অন্যান্য নিত্যপণ্যের সঙ্গে সব সবজির দামও বলতে গেলে আকাশ ছোঁয়া।
শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে বাজারে সব ধরনের সবজির দাম বাড়তি, ফলে সবজি কিনতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে সাধারণ ক্রেতাদের।
শুক্রবারের বাজারে প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়, যার মধ্যে লম্বাকৃতির বেগুন প্রতি পিস ৬০ টাকা, বরবটি প্রতি কেজি ১০০ টাকা। করলা বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়, পটল প্রতি কেজি ৬০ টাকায়, ঢেঁড়স প্রতি কেজি ৬০ টাকায় এবং ঝিঙ্গা প্রতি কেজি ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া প্রতি পিস জালি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়, লাউ প্রতি পিস ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। বাজারে সবজির মধ্যে সবচেয়ে কম দাম বলতে পেঁপে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। কাঁচা কলা প্রতি হালি (৪ টি) ৪০ থেকে ৫০ টাকায়, মূলা প্রতি কেজি ৬০ টাকা, ধুন্দল প্রতি কেজি ৬০ টাকা, কচুর মুখি প্রতি কেজি ৮০ টাকা, কচুর লতি প্রতি কেজি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি মিষ্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৪০ টাকা, গাজর প্রতি কেজি ১২০ টাকা, টমেটো প্রতি কেজি ১০০ টাকা, শসা প্রতি কেজি ৬০ টাকা আর কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ১৬০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৬০ টাকা আর আগের আলু প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। অন্যদিকে, দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকায় আর আমদানি করা পেঁয়াজ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়। এছাড়া ডিম প্রতি হালি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় প্রতিটি মাছের দাম বেড়েছে। কিছুদিন আগে ৩২০ টাকা কেজিদরে বিক্রি হওয়া রুই মাছ কেজিপ্রতি ৫০ থেকে ৬০ টাকা বাড়িয়ে ৩৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি সাইজের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৫০০ টাকা কেজিদরে। বড় সাইজের ইলিশ কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার থেকে শুরু করে ২ হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত, তবে ছোট সাইজের কিছু ৮০০ টাকা কেজিদরে পাওয়া যাচ্ছে। কেজিপ্রতি ৪০০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে বাটা মাছ।
গত সপ্তাহেও এ মাছ ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। বড় সাইজের ট্যাংরা বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৮০০ টাকা দরে। তবে মানভেদে এ মাছ ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা কেজিতেও বিক্রি করতে দেখা গেছে। এছাড়া ছোট পুঁটিমাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। অপরদিকে, ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজিদরে বিক্রি হচ্ছে মলা মাছ। তবে ভালো মানের কোনো ছোট মাছই ৫০০ টাকা কেজিদরের নিচে মিলছে না।
এদিকে, আবারও বাড়তে শুরু করেছে ব্রয়লার মুরগির দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে বেড়েছে ২০-২৫ টাকা।এছাড়াও বেড়েছে লেয়ার ও পাকিস্তানি মুরগীর দাম। তবে অপরিবর্তিত রয়েছে গরুর মাংসের দাম। প্রতি কেজি ৮০০ টাকা। যা নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের নাগালের বাইরে চলে গেছে।
শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায় ব্রয়লার মুরগী প্রতি কেজি ২১০-২২০ টাকা, লেয়ার ৩৪০-৩৫০ টাকা, পাকিস্তানি মুরগী ৩৪০-৩৫০ টাকা। গরুর মাংস ৮০০ টাকা, খাসির মাংস ১১০০ টাকা। যা গত সপ্তাহে ১৮৫-১৯৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে ব্রয়লার মুরগী।
সবজির বাড়তি দামের বিষয়ে মহাখালী কাঁচা বাজারের সবজি বিক্রেতা হুমায়ন কবীর বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে বাজারে সবজির দাম বাড়তি যাচ্ছে। এর মূল কারণ- এখন অনেক সবজির মৌসুম না, ফলে এগুলোর দাম বেশি। মূলত শীতকাল আসার আগ পর্যন্ত সবজির দাম এমন বাড়তিই থাকে। কারওয়ান বাজারসহ অন্যান্য সব পাইকারি বাজারে সব ধরনের সবজিই প্রতি পাল্লায় দাম বেড়েছে। সে কারণে আমাদের কেনার খরচ আগের চেয়ে বেশি লেগে যাচ্ছে। এরপর তা পরিবহনসহ শ্রমিক খরচ, রাস্তা খরচ, যেখানে দোকান বসাচ্ছি তার খরচ সব মিলিয়ে খুচরা বাজারে সবজির দাম বাড়তি যাচ্ছে।