শিশু ও বৃদ্ধের পাশাপাশি যে কোনো বয়সের মানুষ দাঁতের ব্যথায় ভোগান্তি পড়েন। এ সময় দাঁত ব্যথার পাশাপাশি মাড়ি ফুলে যাওয়া, পোকা হওয়া ও ছোট ছোট গর্তের সমস্যা দেখা দেয়। এ বাইরে নানা কারণে দাঁতের মধ্যে গর্ত দেখা দিতে পারে।
দাঁতের গর্তের অন্যতম কারণ দন্তক্ষয় বা ডেন্টাল ক্যারিজ। ডেন্টাল ক্যারিজ প্রাথমিক অবস্থায় খুবই ছোট কালো গর্তের মতো দেখায়, এগুলোকে ক্যাভিটি বলে। এ অবস্থায় কোনো ব্যথা বা অসুবিধা না থাকায় রোগীরা, বিশেষ করে শিশুরা বুঝতে পারে না যে গর্ত তৈরি হচ্ছে। জটিলতা হওয়ার পরই কেবল ধরা পড়ে। এ ক্ষেত্রে দাঁত ভেঙে যাওয়ার পর বেশিরভাগ রোগী সেটা বুঝতে পারে।
ক্যাভিটি বা দাঁতের গর্ত ব্যাকটেরিয়ার কারণে হয়ে থাকে। তাই প্রতিবার খাওয়ার পর দাঁত পরিষ্কার করে নিন। এ ছাড়া দাঁতের ফাঁকে যেন খাবার জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখুন। এ কারণে খাওয়ার পর সুতা বা ডেন্টাল ফ্লস দিয়ে জমে থাকা ময়লা বের করে আনার চেষ্টা করুন। এই জমে থাকা খাদ্যকণা দাঁতে ব্যাকটেরিয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী। এই ব্যাকটেরিয়া থেকেই প্লাক নামক একটি পুরু স্তর তৈরি হয় দাঁতে। এই স্তরটি আমাদের দাঁতে ক্ষয় সৃষ্টি করে।
চিকিৎসা
শুরুতেই ক্যাভিটি বা গর্তের চিকিৎসা না করা হলে ক্ষয় বাড়তে শুরু করে। দাঁতের ভেতরের স্তরে পৌঁছায়, যাকে ডেন্টিন বলে। ক্যাভিটি হচ্ছে বুঝতে পারলে সময় নষ্ট না করে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। তা না হলে চিকিৎসাব্যবস্থাও জটিল হয়ে পড়বে। ভাঙা দাঁতকে আজকাল ফিলিং ম্যাটেরিয়াল বা লাইট কিউর দিয়ে সুন্দরভাবে পূরণ করা যায়। যা দেখতে অবিকল স্বাভাবিক রঙের হয়। রুট ক্যানেল চিকিৎসা করা দাঁতের ক্রাউন বা ক্যাপ বসাতে দেরি করা উচিত নয়।
ক্যাভিটি প্রতিরোধের ৫ উপায়
১. সঠিক নিয়মে প্রতিদিন দুই বেলা দাঁত ব্রাশ করা।
২. চিনিযুক্ত পানীয় বা আঠালো খাবার, অম্লযুক্ত খাবার, কফি ইত্যাদি এড়িয়ে চলা বা খাওয়ার পর কুলি করে মুখ ধুয়ে ফেলা।
৩. শুধু ব্রাশ নয়, সুতা বা ডেন্টাল ফ্লস দিয়ে দাঁতের ফাঁক পরিষ্কার করা।
৪. ধূমপান বর্জন করা।
৫. ছয় মাস পর পর নিকটবর্তী বিডিএস ডেন্টাল ডাক্তার দ্বারা নিয়মিত দাঁত পরীক্ষা করা।
দাঁত ভালো রাখার কিছু ঘরোয়া উপায়
১. কুসুম গরম লবণপানি দাঁতের সমস্যায় খুব ভালো কাজ করে। এই লবণপানি মুখের ভেতরে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে দেয় না ও ক্যাভিটি ভালো করে। লবণপানি অ্যাসিড সরিয়ে আমাদের মুখে পিএইচ স্তরকে নিরপেক্ষ করে।
২. ভিটামিন সি সমৃদ্ধ লেবু জীবাণু ধ্বংস করতে সাহায্য করে। ক্যাভিটি থেকে যন্ত্রণা হলে সেটিও সরিয়ে তোলে লেবু। মুখে এক টুকরো লেবু নিয়ে চিবোতে থাকুন। এর পর কুসুম গরম পানি দিয়ে কুলি করুন।
৩. নিম কাঠি দিয়ে অনেকেই দাঁত মাজেন, যা দাঁত ভালো রাখে। নিমে থাকা ফাইবার দাঁতে প্লাক হতে দেয় না। কয়েকটা নিমপাতা চিবিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। তেতো স্বাদের জন্য নিম অনেকে পছন্দ না করলেও এটা ক্যাভিটি সারাতে খুব ভালো কাজ করে।
৪. গবেষণায় দেখা গেছে, ভিটামিন ডি ক্যাভিটির সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে। আপনি যেসব খাবার খাচ্ছেন, সেসব খাবার থেকে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস সংগ্রহ করতে সাহায্য করে ভিটামিন ডি।
৫. ফ্লুরাইড ক্যাভিটির সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে এবং দাঁতের এনামেল রক্ষা করতে খুব ভালো কাজ করে। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন ফ্লুরাইড টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত মাজলে ক্যাভিটি হয় না।
৬. মিষ্টিজাতীয় খাবার বেশি খাবেন না। মিষ্টি খাবার দাঁতের সব থেকে বেশি ক্ষতি করে।
৭. তিল বা নারিকেল তেল ১০ মিনিটের মতো দাঁতে লাগিয়ে রাখুন। তারপর কুলকুচি করে ধুয়ে ফেলুন। ক্লিনিকাল ট্রায়ালে দেখা গেছে, তিলের তেল দিয়ে এটা করলে প্লাক, জিঞ্জিভাইটিস এবং মুখের ব্যাকটেরিয়া কমায়।
৮. ক্যাভিটি দূর করতে লবঙ্গ দারুণ উপকারী। এর মধ্যে থাকা অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান ক্যাভিটি ছড়াতে দেয় না।
লেখক: ডেন্টাল সার্জন, সিকদার ডেন্টাল কেয়ার, ঢাকা