অ্যান্টার্কটিকায় বসন্ত, কপালে ভাঁজ বিজ্ঞানীদের
- আপডেট সময় : ০৬:১০:৩৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩
- / ৪৩৪ বার পড়া হয়েছে
বরফের চাদর ফুঁড়ে উঁকি দিচ্ছে কচি পাতা, ফুল। শুষ্ক শীতের পর এমন দৃশ্য বসন্তের আগমন মনে করিয়ে দিয়ে কবিদের খাতায় নতুন কবিতা আনতে পারে। কিংবা কেউ গেয়ে উঠতে পারেন ‘বসন্ত এসে গেছে’। কিন্তু বিজ্ঞানীরা পড়েছেন শঙ্কায়। কারণ, যেখানে এই ঘটনা ঘটেছে সেই অ্যান্টার্কটিকায় এমন বিষয় কপালে ভাঁজ ফেলার মতেই ব্যাপার।
এর আগে তীব্র শীতল এই অঞ্চলে এত দ্রুত কখনো কোনো উদ্ভিদের বৃদ্ধি হয়নি। কিন্তু শুধু বৃদ্ধি নয়, চরম শীতল আবহাওয়ায় ফুলও ফুটতে শুরু করেছে। আর এতেই বুক কাঁপছে পরিবেশবিদদের। এই ফুল ফোটা কি তবে অ্যান্টার্কটিকার বাস্তুতন্ত্র বদলে যাওয়ার ইঙ্গিত? বরফে ঢাকা এই মহাদেশে ফুল ফোটা এক প্রকার অসম্ভব। আর সে কারণেই ভ্রু কুঁচকে রয়েছেন বিজ্ঞানী থেকে পরিবেশবিদরা।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, সিগনি দ্বীপে মূলত দুই ধরনের উদ্ভিদ জন্মাতে দেখা গিয়েছে। তাতে ফুল ফুটেছে। ১৯৬০ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত এই অঞ্চলে যে হারে এই উদ্ভিদের জন্ম হয়েছে, ২০০৯ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত তার ১০ গুণ উদ্ভিদ জন্মেছে। অ্যান্টার্কটিকায় অন্য ধরনের উদ্ভিদের জন্মের হারও বেড়েছে। আগের তুলনায় এখন ওই অঞ্চলে বিভিন্ন উদ্ভিদের বৃদ্ধি বেড়েছে পাঁচ গুণ।
স্কটিশ অ্যাসোসিয়েশন ফর মেরিন সায়েন্সের বিজ্ঞানী ম্যাথিউ ডেবি বলেন, ‘পরিবর্তন যে হচ্ছে, এবং সেটা কত দ্রুত হচ্ছে সেটা আমরা এখন বুঝতে পারছি।’
সারা বছর হিমাঙ্কের অনেক নীচে তাপমাত্রা থাকে অ্যান্টার্কটিকায়। সে কারণে মস, লিচেন জাতীয় শৈবালেরই জন্ম হয়। তারাই ওই অঞ্চলের পুরনো বাসিন্দা।
কিন্তু এবার অ্যান্টার্কটিকায় নতুন ধরনের উদ্ভিদের দেখা মিলছে। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, জলবায়ুর পরিবর্তনের সুযোগ নিয়ে সেখানে নতুন ধরনের উদ্ভিদের জন্ম হচ্ছে। এর ফলে কোপ পড়তে পারে সেখানকার মস, লিচেনের বৃদ্ধিতে। ফলে অ্যান্টার্কটিকার বাস্তুতন্ত্র ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, নতুন এই উদ্ভিদের বৃদ্ধির কারণে চিরতরে সেখান থেকে অবলুপ্ত হতে পারে পুরনো বাসিন্দারা। মাটির চরিত্র বদলে যেতে পারে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ইতালির ইনসাবরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানীও বিষয়টি নিয়ে গবেভণা করছেন। ওই দলের নেতা নিকোলেত্তা ক্যানোনি বলেন, ‘অ্যান্টার্কটিকার জীববৈচিত্র্য এবং দৃশ্যপট দ্রুত বদলে যেতে পারে।’
গবেষকরা বলছেন, এই ধরনের উদ্ভিদ পচে মাটির সঙ্গে মিশলে মাটির অম্লত্বের পরিমাণ বদলে যেতে পারে। তাতে নতুন ধরনের ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে পারে। তার প্রভাব পড়তে পারে পরিবেশে, অ্যান্টার্কটিকার বাস্তুতন্ত্রে।
অ্যান্টার্কটিকার বুকে এই ফুল প্রথম লক্ষ্য করেন অস্ট্রেলিয়ার ওলংগং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা। তারা খেয়াল করেন, অ্যান্টার্কটিকায় মূলত দুই ধরনের উদ্ভিদের বৃদ্ধি হচ্ছে আগের তুলনায় বেশি হারে। প্রথম দিকে নির্দিষ্ট একটি অঞ্চলে দেখা যেতো এই উদ্ভিদ। এখন তার বাইরেও বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা যাচ্ছে এই উদ্ভিদ।
গত ২০ বছর ধরে অ্যান্টার্কটিকায় খুব ধীরে ধীরে এই উদ্ভিদের প্রসার লক্ষ্য করছেন বিজ্ঞানীরা। আগে ঠান্ডার কারণে এই উদ্ভিদ খুব বেশি দিন বাঁচত না। সম্প্রতি তার আয়ুষ্কাল বেড়েছে। ফুলও ফুটছে।
এই পরিবর্তনের কারণ হিসাবে বিজ্ঞানীরা বিশ্ব উষ্ণায়নের পাশাপাশি মানুষকেও দায়ী করেন। তাদের মতে, অ্যান্টার্কটিকায় গবেষকদের সঙ্গে অভিযাত্রীদের আনাগোনাও বেড়েছে। তাদের সঙ্গেই এই উদ্ভিদের বীজ ছড়িয়ে পড়েছে। হচ্ছে বংশবৃদ্ধি।
বিজ্ঞানীদের একাংশ মনে করেন, এই উদ্ভিদের বীজ সম্ভবত বহু বছর আগে গবেষক এবং অভিযানকারীদের সঙ্গেই অ্যান্টার্কটিকায় এসেছিল। অতীতে তীব্র ঠান্ডার কারণে তা উদ্ভিদে পরিণত হতে পারেনি।
জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে এই অঞ্চলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। তখনই বীজ থেকে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে গাছ। ঘটেছে বংশবৃদ্ধি।
গবেষকদের একটা অংশের মতে, সিল মাছের সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণেও বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদের বৃদ্ধি ঘটেছে। সিল মাছ শৈবাল-সহ বিভিন্ন উদ্ভিদের উপর দিয়ে মাড়িয়ে চলত। সে কারণে সেগুলো মরে যেতো। এখন সিল মাছের সংখ্যাও কমেছে। যার অন্যতম কারণ খাদ্যাভাব। সে কারণে বেড়েছে উদ্ভিদের সংখ্যা, যাতে বিপদ দেখছেন বিজ্ঞানীরা। (ইউনিল্যাড ডটকম, টাইমস অব ইন্ডিয়া অবলম্বনে)