গতকালই হেনরি নিকোলস সংবাদ সম্মেলন করতে এসে বলেছিলেন, উইকেট সম্পর্কে আগে থেকে কোনো ধারণা করতে চান না। প্রথম দুই ম্যাচের ভিন্ন উইকেট তাঁকে সাবধানী হতে বাধ্য করেছে। তবু তৃতীয় ম্যাচ দেখে নির্ঘাত চমকে গেছেন নিকোলসও।
প্রথমে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশের সাত উইকেটই নিয়েছেন নিউজিল্যান্ডের পেসাররা। ১৭২ তাড়া করতে নেমে কিউইরাও প্রথম দুই উইকেট হারিয়েছে পেসারদের কাছে। দ্বিতীয় ম্যাচে গুণে গুণে ৬ উইকেট নেওয়া ইশ সোধি আজ পাত্তাই পাননি, বাংলাদেশের নাসুম আহমেদরাও দাগ কাটতে পারেননি। এটা মিরপুরের উইকেট তো?
এমন এক উইকেটে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৭ উইকেটে হেরে গেছে বাংলাদেশে। নিউজিল্যান্ড ইনিংসের তখনো বাকি ১৫ ওভার। তাতে মাত্র দ্বিতীয়বারের মতো মিরপুরে কোনো ওয়ানডে না জিতে বছর শেষ করছে বাংলাদেশ। সর্বশেষ ২০০৭ সালে মিরপুরে কোনো ওয়ানডে না জিতে বছর শেষ করেছিল স্বাগতিক দল। এ বছর ঘরের মাঠে চারটি ওয়ানডে সিরিজের তিনটিই হারল বাংলাদেশ।
মুশফিকুর রহিম দুর্ভাগ্যজনকভাবে হাস্যকরভাবে আউট হয়েছেন। সর্বোচ্চ ৭৬ রান করা অধিনায়ক নাজমুল শান্ত রিভার্স শটের ফাঁদে পড়েছেন। বাদবাকি উইকেটগুলো নিউজিল্যান্ড আদায় করে নিয়েছে। অথচ দ্বিতীয় ওয়ানডের উইকেটেই খেলা হচ্ছে বলে স্পিনাররা বাড়তি সাহায্য পাবেন মনে হয়েছিল।
কিন্তু বিশ্বকাপের আগে শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের অ্যাডাম মিলনের সামনে কেঁপে উঠেছে ব্যাটিং লাইনআপ। সাড়ে ৬ ওভারেই ৪ উইকেট পেয়েছেন মিলনে। বাংলাদেশের জন্য সান্ত্বনা, বিশ্বকাপ স্কোয়াডে না থাকা মিলনেকে ভারতে খেলতে হবে না বাংলাদেশকে। ট্রেন্ট বোল্টের বেলায় সেটা বলার সুযোগ নেই। তাঁর বলেই খোঁচা মারার লোভ সামলাতে পারেননি বিশ্বকাপে ওপেনারদের তালিকায় থাকা তানজিদ হাসান তামিম।
১৭১ রানে গুটিয়ে যাওয়ার হতাশা বোলাররা ভুলিয়ে দিতে পারতেন। তবে আগের দুই ম্যাচে ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত দেওয়া মোস্তাফিজুর রহমান আজ ছিলেন না। প্রথম ওভারে শরীফুল ইসলামকে ছন্দ পেতেই দেননি ফিন অ্যালেন। কবজির জোরের দুর্দান্ত প্রদর্শনীতে প্রথম ওভারে তিনটি চার মেরেছেন। কিন্তু মিরপুরের গ্যালারি শরীফুলকে অনুপ্রেরণা দিয়েছে সমানতালে।
দশম ওভারে শরীফুলের প্রতিশোধ। নিখুঁত বাউন্সারে অ্যালেনকে ফাইন লেগে ক্যাচ দিতে বাধ্য করলেন। আজই অভিষিক্ত ডিন ফক্সক্রফট মিডল স্টাম্পে পরা শরীফুলের বলের সুইং মিস করলেন, বোল্ড। অভিষেকে গোল্ডেন ডাক ফক্সক্রফটের। হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা শরীফুলের। পরের বলটি হেনরি নিকোলসের ব্যাটের পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেল। পুরো বাংলাদেশ দল আবেদন করতে করতে ছুটে গেল আম্পায়ারের দিকে। গ্যালারি তখন গর্জন তুলছে, কিন্তু আম্পায়ার অনড়। রিপ্লেও দেখাল, চুল পরিমাণ ফাঁক রয়ে গেছে ব্যাট ও বলের মধ্যে।
তাড়া করতে নামা নিউজিল্যান্ড ৪৯ রানে ২ উইকেট হারিয়ে ফেলায় প্রত্যাবর্তনের একটা স্বপ্ন জেগেছিল। পেসাররা ভয় জাগাচ্ছেন, মিরপুরের উইকেটে স্পিনাররা কি কিছু করবেন না?
কিন্তু স্পিনারদের বিরুদ্ধ্বেই উল্টো স্বচ্ছন্দ উইল ইয়াং ও হেনরি নিকোলস। বাউন্ডারি নেওয়ার চিন্তা মাথায় না এনে শুধু দ্রুত সিঙ্গেল বের করে নেওয়ার বুদ্ধিতে এগোলেন তাঁরা। ইয়াং এগোলেন আগ্রাসী ঢংয়ে, নিকোলস রক্ষণাত্মক। মাঝে খালেদ আহমেদ এসে তাঁদের আত্মবিশ্বাস টলিয়ে দেওয়া চেষ্টা করলেও তা সফল হয়নি।
এ জুটি থামাতে নাসুমকে বিশেষ কিছু করতে হলো। মিডল স্টাম্পে পরা বল ব্যাকফুটে খেলতে চেয়েছিলেন ইয়াং। কিন্তু বলটা এতটাই বাক নিল যে ইয়াং চেষ্টা করেও ব্যাটে লাগাতে পারলেন না, অফ স্টাম্প নড়িয়ে দিল বল। ৮০ বলে ১০ চার ও ১ ছক্কায় ৭০ রান করা ইয়াং ফিরে গেলেন দলকে ১৩০ রানে রেখে। বাকি ১২৫ বলে তখন নিউজিল্যান্ডের দরকার ৪২ রান।
নিকোলস রয়েসয়েই সেটা নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ১৫ বছর পর বাংলাদেশের মাটিতে সিরিজ জয়ের জন্য তর সইলো না টম ব্লান্ডেলের। ৮৬ বলে ৫০ রানে অপরাজিত নিকোলস।