দুই সপ্তাহ পার হলেও সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে এখনও মিলছে না আলু-পেঁয়াজ। ডিমের দাম কিছুটা কমলেও তা নাগালে আসেনি। ভোক্তা অধিকারের অভিযানেও সুফল মিলছে না বাজারে। গত ১৪ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো ডিম, আলু ও পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল সরকার। কিন্তু সেই নির্দেশনা উপেক্ষা করে আগের বাড়তি দামেই এগুলো বিক্রি হচ্ছে বাজারে। প্রতিটি ফার্মের ডিমের দাম ১২ টাকা, আলু খুচরা পর্যায়ে ৩৫-৩৬ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজ ৬৪-৬৫ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। অথচ নির্ধারণ করে দেওয়ার ১৫ দিন পরেও বাজারে এসব দ্রব্যের দাম কার্যকর হয়নি।
কাঁচাবাজার থেকে মুদি- সব পণ্যের দামই এখন উর্ধ্বমুখী। তাই নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের কষ্ট যেমন বেড়েছে, তেমনি বাজারে বিক্রি ও ক্রেতার সংখ্যা উলেখযোগ্য হারে কমেছে। এতে হতাশ বিক্রেতারাও। ক্রেতাদের অভিযোগ ব্যবসায়ীদের সাথে সরকার পেরে উঠছেনা বলেই বাজারে কোনো পণ্যের দামে নিয়ন্ত্রণ নেই।
জীবন ও জীবিকার তাগিদে প্রতিদিন মানুষের ছুটে চলা একটু ভালো থাকার আশায়। কিন্তু ভালো থাকাতো দূরের কথা নিত্যপণ্যের দামের উর্ধ্বগতিতে প্রতিদিন অস্থিরতায় কাটছে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের। বৈশ্বিক নানা কারণ দেখিয়ে গত দুই বছরে কাঁচাবাজার থেকে মুদি সব পণ্যের দামই উর্ধ্বমুখী।
ক্রেতাদের অভিযোগ, ভোক্ত অধিকারের লোকজন বাজারে ঢুকলে অনেক ব্যবসায়ী কিছুক্ষণের জন্য সটকে পড়েন। অনেকে ব্যবসায়ী অভিযান চলাকালীন নির্ধারিত মূল্যে পণ্য বিক্রি করেন। ভোক্ত অধিকারের লোকজন চলে গেলে আবারও বেশি দামে পণ্য বিক্রি শুরু করেন ব্যবসায়ীরা।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মন্ডল বলেন, বাজার তদারকিতে রাজধানীতে প্রতিদিন ৩টি দলে কাজ করছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
ট্রেডিং কর্পোরেশন অফ বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, সবশেষ কর্মদিবসে বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ৮৫ টাকা কেজি দরে, আর আলু বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ৪৫ টাকা কেজি দরে। সেই সঙ্গে ডিম প্রতি হালি সর্বোচ্চ ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
টিসিবির সহকারী পরিচালক (বাজার তথ্য) নাসির উদ্দিন জানান, যেই পেঁয়াজ বর্তমান বাজারে সর্বোচ্চ ৮৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। গত বছর এই সময় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩৮ থেকে ৪৫ টাকায়। সেই হিসেবে এক বছরে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৯৮ দশমিক ৮০ শতাংশ।
শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ফার্মের ডিম প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকায়। আর প্রতি হালি (৪ পিচ) বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকায়। দেশি মুরগির ডিমের হালি ৮০ টাকায়। আর গরুর মাংস কেজি প্রতি ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা এবং খাসির মাংস কেজি প্রতি ১ হাজার ৫০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে আলু বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫০ টাকা, যেখানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এর দাম বেঁধে দিয়েছিল ৩৫-৩৬ টাকা। ফলে নির্ধারিত দামের চেয়ে কেজিতে ১৪ /১৫ টাকা বেশি বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে দেশি পেঁয়াজের দাম সরকার ৬৪/৬৫ টাকা বেধে দিলেও বাজারে এর চেয়ে ১৫ থেকে ২৫ টাকা বাড়িয়ে ৮০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
শীতকালে বাজারে সাধারণত লাউ, মিষ্টি কুমড়া, ফুলকপি, বাঁধাকপি, দেশি পেঁয়াজ, ভারতীয় পেঁয়াজ, বেগুন, মূলা, লালশাক, পালংশাক, পটোল, ঢেড়স, বরবটি, ঝিঙা, পেঁপে, আলু, করলা, কচু, শসাসহ বিভিন্ন ধরনের সবজিতে ভরপুর থাকে। বাজারে ছোট বাঁধাকপি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ছোট ফুলকপি ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি মুলা ৪০ টাকা, শিম ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা, পাকা টমেটো প্রকারভেদে ১০০ থেকে ১৪০ টাকা, কচুরমুখী ৮০ টাকা এবং গাজর ১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি শিম ২০০ টাকা, চায়না গাজর ১৪০ টাকা, মূলা ৬০-৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি পিস ফুলকপি ও বাঁধাকপির দাম ৬০ টাকা। এ ছাড়া, প্রতি কেজি গোল বেগুন ১০০ টাকা, লম্বা বেগুন ৮০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, পটল ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, ঝিঙে ৬০ টাকা, ধুন্দল ৬০ টাকা, কচুরমুখি ৯০ টাকা এবং কচুর লতি ৮০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। প্রতি পিস জালি কুমড়া (চাল কুমড়া) ৬০ টাকা ও লাউ ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাঁচা কলা প্রতি হালি ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লেবুর হালি ১০ থেকে ২০ টাকা, ধনে পাতা ৪০০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সরকার দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ বলেই বাজারের এমন দূরাবস্থা বলে অভিযোগ ক্রেতাদের। ভালো নেই বিক্রেতারাও, সব পণ্যের দাম বাড়ায় বাজারে ক্রেতা ও বিক্রি দুটোই কমেছে। তাই হতাশ তারাও।
গত সপ্তাহের তুলনায় দেশি মুরগি কেজিতে ২০ টাকা কমেছে। এ ছাড়া সোনালি মুরগিরও দাম কমেছে। সোনালি ৩০০ টাকা, সোনালি হাইব্রিড ২৯০ টাকা, দেশি মুরগি ৫০০ টাকা কেজি এবং লেয়ার ৩৪০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে।
প্রতি কেজি শিং মাছ (আকারভেদে) ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা, রুই দাম বেড়ে (আকারভেদে) ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা, মাগুর ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, মৃগেল ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা, পাঙাশ ১৯০ থেকে ২৫০ টাকা, ইলিশ (আকারভেদে) ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা, চিংড়ি ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা, বোয়াল ৬০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, কাতল ৩৫০ থেকে ৮০০ টাকা, পোয়া ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ টাকা, কই ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা, মলা ৪৫০ টাকা, বাতাসি-টেংরা ১ হাজার ২০০ টাকা, কাচকি ৬০০ টাকা এবং পাঁচমিশালি চাষের মাছ ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।