০২:৩১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পারমাণবিক কেন্দ্রের শান্তিপূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করব: শেখ হাসিনা

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের শান্তিপূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য রাশিয়া ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ জানান।

বাংলাদেশের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিউক্লিয়ার জ্বালানি বা ইউরেনিয়াম হস্তান্তর অনুষ্ঠানে আজ বৃহস্পতিবার এসব কথা বলেন শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের জন্য আজ গর্ব ও আনন্দের দিন। রাশিয়ান ফেডারেশন ও জনগণকে কৃতজ্ঞতা জানাই। স্বাধীন বাংলাদেশস গড়ে তুলতে তারা সব সময় সহযোগিতা করেছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা এই প্রকল্পের পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। ওয়াজেদ মিয়াকে পরিচালকের দায়িকত্বও দিয়েছিলেন। ৯৬’এ যখন সরকার গঠন করি, সবার জন্য বিদ্যুৎ এ চিন্তা করে কাজ শুরু করি। জ্বালানিনীতিতে পারমাণবিক নীতি গ্রহণ করি। নিউক্লিয়ার পাওয়ার অ্যাকশন প্ল্যান গঠন করা হয়। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) সহযোগিতা চাই। সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা করা হয়। সে সময় কাজ শেষ করতে পারিনি। ২০০৯ এ সরকার গঠন করে আবার প্রকল্প হাতে নেই।

‘রাশিয়া এটি বাস্তবায়নে এগিয়ে এসেছে। আইএইএ শুরু থেকেই পরামর্শ ও সহযোগিতা দিয়েছে। রুশ ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট পুতিনকে ব্যক্তিগতভাবে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও ধন্যবাদ জানাই। ভারতও আমাদের সহযোগিতা করে যাচ্ছে।’

সরকার প্রধান বলেন, এটি আমরা শান্তিপূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করব। পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন করেছি। স্বাধীন কর্তৃপক্ষ করা হয়েছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে। ২০২৪ সালে প্রথম ও ২০২৬ সালে দ্বিতীয় ইউনিট চালু হবে। এটি পরিবেশ বান্ধব। এটাই সবচেয়ে বড় কথা। পৃথক আইনের মাধ্যমে একটি কোম্পানি গঠন করেছি।

শেখ হাসিনা বলেন, রাশিয়া আমাদের পরীক্ষিত বন্ধু। প্রেসিডেন্ট পুতিন উপস্থিত থেকে আমাদের সম্মানিত করেছেন।

এর আগে দুপুরে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ ভার্চ্যুয়ালি যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

ঈশ্বরদীর প্ল্যান্ট সাইটে চলমান এ অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি আরও যুক্ত আছেন আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রসি। এছাড়া উপস্থিত আছেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, রোসাটমের মহাপরিচালক অ্যালেক্সি লিখাচেভও।

গত ২৮ সেপ্টেম্বর রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য পারমাণবিক জ্বালানির প্রথম চালানটি আসে। এরপর তা কঠোর নিরাপত্তাবলয়ের মধ্য দিয়ে নেওয়া হয় রূপপুরে।

দেশের সবচেয়ে বড় একক প্রকল্প রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। ১ লাখ ৪৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুটি ইউনিটের উৎপাদন ক্ষমতা ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট।

সরকার আশা করছে, রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ও দ্বিতীয় ইউনিটটি ২০২৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে চালু হবে। প্রকল্পটিতে ৭ হাজার পেশাদারসহ ৩০ হাজার কর্মী কাজ করছেন।

এই প্রকল্পের মাধ্যমে পারমাণবিক ক্লাবে প্রবেশ করবে বাংলাদেশ। যা বাংলাদেশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে সক্ষম হবে। কারণ এটি কার্বন নিঃসরণ হ্রাস লক্ষ্যমাত্রা পূরণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হবে। একই সময়ে এটি ফ্ল্যাশের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ কমিয়ে দেবে।

রাশিয়ান ঠিকাদার হিসেবে রোসাটম রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করে।

ওয়ার্ল্ড নিউক্লিয়ার অ্যাসোসিয়েশনের ওয়েবসাইট অনুসারে পরমাণু শক্তি ব্যবহারকারী দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে- আমেরিকা, চীন, ফ্রান্স, রাশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, কানাডা, ইউক্রেন, জার্মানি, জাপান, স্পেন, সুইডেন, বেলজিয়াম, যুক্তরাজ্য, ভারত, চেক প্রজাতন্ত্র, ফিনল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, বুলগেরিয়া, পাকিস্তান, হাঙ্গেরি, স্লোভাকিয়া, ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা, মেক্সিকো, রোমানিয়া, আর্জেন্টিনা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বেলারুশ, স্লোভেনিয়া, নেদারল্যান্ডস, ইরান ও আর্মেনিয়া।

একবার পারমাণবিক জ্বালানি পাওয়ার প্ল্যান্টের চুল্লিতে দেওয়া হলে এক বছরের জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যেতে পারে। এর পরে ফের জ্বালানি দিতে হয়।

২০২১ সালের অক্টোবরে ইউনিটের কাঠামোর মধ্যে চুল্লি স্থাপনের মাধ্যমে রূপপুর ইউনিট-১ প্রায় সম্পন্ন হয়। এটি এআইইএ’র মান অনুযায়ী স্থাপন করা হয়। গত বছরের অক্টোবরে দ্বিতীয় ইউনিটের চুল্লি স্থাপন করা হয়।

পারমাণবিক কেন্দ্রের শান্তিপূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করব: শেখ হাসিনা

আপডেট : ১০:৫৬:৪৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৩

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের শান্তিপূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য রাশিয়া ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ জানান।

বাংলাদেশের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিউক্লিয়ার জ্বালানি বা ইউরেনিয়াম হস্তান্তর অনুষ্ঠানে আজ বৃহস্পতিবার এসব কথা বলেন শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের জন্য আজ গর্ব ও আনন্দের দিন। রাশিয়ান ফেডারেশন ও জনগণকে কৃতজ্ঞতা জানাই। স্বাধীন বাংলাদেশস গড়ে তুলতে তারা সব সময় সহযোগিতা করেছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা এই প্রকল্পের পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। ওয়াজেদ মিয়াকে পরিচালকের দায়িকত্বও দিয়েছিলেন। ৯৬’এ যখন সরকার গঠন করি, সবার জন্য বিদ্যুৎ এ চিন্তা করে কাজ শুরু করি। জ্বালানিনীতিতে পারমাণবিক নীতি গ্রহণ করি। নিউক্লিয়ার পাওয়ার অ্যাকশন প্ল্যান গঠন করা হয়। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) সহযোগিতা চাই। সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা করা হয়। সে সময় কাজ শেষ করতে পারিনি। ২০০৯ এ সরকার গঠন করে আবার প্রকল্প হাতে নেই।

‘রাশিয়া এটি বাস্তবায়নে এগিয়ে এসেছে। আইএইএ শুরু থেকেই পরামর্শ ও সহযোগিতা দিয়েছে। রুশ ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট পুতিনকে ব্যক্তিগতভাবে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও ধন্যবাদ জানাই। ভারতও আমাদের সহযোগিতা করে যাচ্ছে।’

সরকার প্রধান বলেন, এটি আমরা শান্তিপূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করব। পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন করেছি। স্বাধীন কর্তৃপক্ষ করা হয়েছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে। ২০২৪ সালে প্রথম ও ২০২৬ সালে দ্বিতীয় ইউনিট চালু হবে। এটি পরিবেশ বান্ধব। এটাই সবচেয়ে বড় কথা। পৃথক আইনের মাধ্যমে একটি কোম্পানি গঠন করেছি।

শেখ হাসিনা বলেন, রাশিয়া আমাদের পরীক্ষিত বন্ধু। প্রেসিডেন্ট পুতিন উপস্থিত থেকে আমাদের সম্মানিত করেছেন।

এর আগে দুপুরে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ ভার্চ্যুয়ালি যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

ঈশ্বরদীর প্ল্যান্ট সাইটে চলমান এ অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি আরও যুক্ত আছেন আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রসি। এছাড়া উপস্থিত আছেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, রোসাটমের মহাপরিচালক অ্যালেক্সি লিখাচেভও।

গত ২৮ সেপ্টেম্বর রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য পারমাণবিক জ্বালানির প্রথম চালানটি আসে। এরপর তা কঠোর নিরাপত্তাবলয়ের মধ্য দিয়ে নেওয়া হয় রূপপুরে।

দেশের সবচেয়ে বড় একক প্রকল্প রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। ১ লাখ ৪৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুটি ইউনিটের উৎপাদন ক্ষমতা ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট।

সরকার আশা করছে, রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ও দ্বিতীয় ইউনিটটি ২০২৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে চালু হবে। প্রকল্পটিতে ৭ হাজার পেশাদারসহ ৩০ হাজার কর্মী কাজ করছেন।

এই প্রকল্পের মাধ্যমে পারমাণবিক ক্লাবে প্রবেশ করবে বাংলাদেশ। যা বাংলাদেশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে সক্ষম হবে। কারণ এটি কার্বন নিঃসরণ হ্রাস লক্ষ্যমাত্রা পূরণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হবে। একই সময়ে এটি ফ্ল্যাশের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ কমিয়ে দেবে।

রাশিয়ান ঠিকাদার হিসেবে রোসাটম রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করে।

ওয়ার্ল্ড নিউক্লিয়ার অ্যাসোসিয়েশনের ওয়েবসাইট অনুসারে পরমাণু শক্তি ব্যবহারকারী দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে- আমেরিকা, চীন, ফ্রান্স, রাশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, কানাডা, ইউক্রেন, জার্মানি, জাপান, স্পেন, সুইডেন, বেলজিয়াম, যুক্তরাজ্য, ভারত, চেক প্রজাতন্ত্র, ফিনল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, বুলগেরিয়া, পাকিস্তান, হাঙ্গেরি, স্লোভাকিয়া, ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা, মেক্সিকো, রোমানিয়া, আর্জেন্টিনা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বেলারুশ, স্লোভেনিয়া, নেদারল্যান্ডস, ইরান ও আর্মেনিয়া।

একবার পারমাণবিক জ্বালানি পাওয়ার প্ল্যান্টের চুল্লিতে দেওয়া হলে এক বছরের জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যেতে পারে। এর পরে ফের জ্বালানি দিতে হয়।

২০২১ সালের অক্টোবরে ইউনিটের কাঠামোর মধ্যে চুল্লি স্থাপনের মাধ্যমে রূপপুর ইউনিট-১ প্রায় সম্পন্ন হয়। এটি এআইইএ’র মান অনুযায়ী স্থাপন করা হয়। গত বছরের অক্টোবরে দ্বিতীয় ইউনিটের চুল্লি স্থাপন করা হয়।