শান্তিতে নোবেলজয়ী কে এই কারাবন্দী নার্গিস
- আপডেট সময় : ১১:৩২:৩৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৬ অক্টোবর ২০২৩
- / ৪৩১ বার পড়া হয়েছে
বাড়িতে মাকে শেষ কবে দেখেছে, মনে করতে বেশ বেগ পেতে হয় ১৬ বছর বয়সী আলীকে। তবে তাঁর মনে আছে, শেষবার মা তাদের জন্য সকালের নাস্তা তৈরি করছিল। তখন তাদের বয়স ৮ বছর। সে এবং তার যমজ বোন কিয়ানা রাহমানি যখন স্কুলে যাচ্ছিল, যাওয়ার সময় মা তাদের বলেছিল, ‘ভালোভাবে পড়াশোনা করো। আল্লাহ হাফেজ।’ ফিরে এসে মাকে আর দেখতে পায়নি তারা।
এই মা হলেন ইরানে নারীদের নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়াই এবং মানবাধিকার ও স্বাধীনতা প্রচারের জন্য এ বছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়া নার্গিস মোহাম্মদি। জীবদ্দশায় তাঁকে ১৩ বার গ্রেপ্তার করেছে ইরানের প্রশাসন। ৫ বার দোষী সাব্যস্ত করেছে, সব মিলিয়ে ৩১ বছরের কারাদণ্ড ও ১৫৪টি বেত্রাঘাত করা হয়েছে নার্গিস মোহাম্মদিকে। বলা যায়, গত দুই দশকের বেশির ভাগ সময় কারাগারেই কেটেছে নার্গিসের। এখনও কারাগারে রয়েছেন এই নারী।
ইরানে মানবাধিকার নিয়ে আন্দোলনের একজন সংগ্রামী নেত্রী এই নার্গিস। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও অধিকারের জন্য সাহসী লড়াইয়ের কারণেই বারবার প্রশাসনের রোষানলে পড়েছেন তিনি। জাতীয় নিরাপত্তা ও সরকারের বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা ছড়ানোর অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়ে ১০ বছর ৯ মাসের সাজা ভোগ করছেন।
তবে তেহরানে অবস্থিত কুখ্যাত এভিন কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠও দমিয়ে রাখতে পারেনি নার্গিসকে। গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর ইরানের নৈতিকতা পুলিশের হাতে মৃত্যু হয় ২২ বছর বয়সী তরুণী মাহসা আমিনির। হিজাব আইন না মানায় এই তরুণীকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। মাহসার মৃত্যুর প্রতিবাদে ইরানজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এই বিক্ষোভে ৫০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হন। আহত হন শত শত। গ্রেপ্তার করা হয় কয়েক হাজার বিক্ষোভকারীকে।
মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর কারাগারেই প্রতিবাদ গড়ে তোলেন নার্গিস। কারাগার থেকে তাঁর নেতৃত্বে স্লোগান আসতে থাকে, ‘ওম্যান, লাইফ, ফ্রিডম’। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে উনিশ শতকে গাওয়া ‘বেলা সিয়াও’ গান শোনা যায় বন্দীদের কণ্ঠে।
এ ব্যাপারে নার্গিসের মন্তব্য জানতে কারাগারেই প্রশ্ন পাঠায় মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন। ১৯৭২ সালে ইরানের জঞ্জনে জন্ম নেওয়া এই নারী বলেন, ‘কারাগারেই এখন দারুণ প্রতিবাদ চলছে। মনে হচ্ছে দেশের প্রতিবাদের ইতিহাসে সেরা সময়টা পার করছি আমরা।’
শেষবার কারাগারে যাওয়ার আগে ইরানে নিষিদ্ধ ডিফেন্ডারস অব হিউম্যান রাইটস সেন্টারের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন নার্গিস। এই কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন শান্তিতে আরেক নোবেলজয়ী ইরানী নারী শিরিন এবাদি।
কারাগারে নারীদের শারীরিকভাবে যে হেনস্তা করা হয়, সেটি গণমাধ্যমের সামনে আনেন নার্গিস। এ কারণে শাস্তি আরও বাড়ে। বাইরে থাকতে ইরানের বাধ্যতামূলক হিজাব প্রথা ও এর শাস্তির বিরুদ্ধে তো লড়াই করেছেনই। জেলেও সেই ধারা বজায় রেখেছেন।
তবে দুই সন্তানের জন্য সবসময় মন কাঁদে নার্গিসের। ৮ বছর ধরে তাদের সঙ্গে দেখা নেই। এমনকি এদের সঙ্গে ফোনে কথা বলতেও দেয় না কারা কর্তৃপক্ষ। এর মানে গত দেড় বছরে একবারও ছেলেমেয়ের কণ্ঠ শুনেননি নার্গিস।
গত সেপ্টেম্বরে এক সাক্ষাৎকারে নার্গিস বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা গণতন্ত্র, সাম্য ও স্বাধীনতা অর্জন করতে না পারব, ততক্ষণ পর্যন্ত এই সংগ্রাম ও উৎসর্গ চালিয়েই যাব।’