রণক্ষেত্র অধিকৃত গাজা উপত্যকা। ফিলিস্তিনের সশস্ত্র ইসলামপন্থী গোষ্ঠী হামাস ও ইসরায়েলি বাহিনীর মধ্যকার সংঘাতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৫৩২ জনে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া আহত হয়েছেন ৩ হাজারের বেশি মানুষ।
হামাসের ছোঁড়া ৭ হাজার রকেটে এ পর্যন্ত ৩০০ ইসরায়েলি নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে আরও প্রায় ১৬০০ ইসরায়েলি। ইসরায়েলের পাল্টা হামলায় অন্তত ২৩২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আহত দুই হাজারের বেশি মানুষ। অন্তত হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি ইসরায়েলে প্রবেশ করেছ বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে আল জাজিরা।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ২৩২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ১ হাজার ৬৯৭ জন। আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তবে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
চলমান সংঘর্ষে যেকোনো খারাপ পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছে হামাস।
এ ছাড়া কয়েক ডজন বেসামরিক নাগরিক এবং ইসরায়েলি সৈন্যদের আটক করে গাজায় নিয়ে গেছে হামাস। হামাস বলেছে, আটক ইসরায়েলিদের সংখ্যা জেরুসালেম যা জানে তার চেয়েও অনেক বেশি।
শনিবার ভোরে গাজা, তেল আবিব, অবরুদ্ধ পূর্ব জেরুজালেমে বেজে ওঠে বিমান হামলার সাইরেন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই গাজা থেকে ছোড়া রকেটে ছেয়ে যায় আকাশ। এই হামলাকে অপারেশন 'আল আকসা ফ্লাড' নাম দিয়েছে হামাস। আল-আকসায় চলমান উস্কানি এবং ইসরায়েলি কারাগারে ফিলিস্তিনি বন্দীদের প্রতি নিপীড়নের জবাবে এই অভিযান।
অধিকৃত পশ্চিম তীরে সবাইকে ইসরায়েল বিরোধী অভিযানে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে তারা। সেডরোটের পুলিশ স্টেশনের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার দাবি করেছে হামাস। সেইসঙ্গে এক ভিডিওতে গাজায় ইসরায়েলি সাঁজোয়া যানের দখল নিতে দেখা গেছে ফিলিস্তিনি বন্দুকধারীদের।
এদিকে হামাসের সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে পাল্টা হামলা শুরু করেছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। সক্রিয় করা হয়েছে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের বাড়ির বাইরে বের না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী। চলমান পরিস্থিতিকে যুদ্ধাবস্থা ঘোষণা করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, কোনো অভিযান বা মহড়া নয়, আমরা যুদ্ধে আছি। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আশ্চর্যজনক আক্রমণ চালিয়েছে হামাস। অনুপ্রবেশকারী সন্ত্রাসীদের হঠাতে কাজ করছে সেনাবাহিনী। শত্রুদের যে মূল্য দিতে হবে তা তাদের ধারণার বাইরে।
অন্যদিকে, ইসরায়েলের পাল্টা আক্রমণ ভয়াবহ রূপ নিতে পারে শঙ্কায় বাড়িঘর ছাড়তে শুরু করেছেন গাজার ফিলিস্তিনিরা। হামলার প্রতিক্রিয়ায় উল্লাস করেছে পশ্চিমতীরের নাবলুসের ফিলিস্তিনিরা।
গাজা উপত্যকায় বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েল সেনাবাহিনী।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বিবিসিকে জানায়, সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এমন নির্দেশনার পর বহু ফিলিস্তিনি তাদের পরিবার নিয়ে জাতিসংঘের তৈরি স্কুলগুলোতে আশ্রয়ের জন্য ছুঁটছে।
হামাস রকেট হামলা চালানোর পর গাজায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েল। এছাড়া জ্বালানি এবং পণ্য সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু’র অফিসের বরাত দিয়ে স্থানীয় মিডিয়ার খবরে এ তথ্য বলা হয়েছে।
শনিবার থেকেই গাজাবাসী অন্ধকারে দিন কাটাচ্ছে। মিশরের পাশাপাশি, নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে ২০০৭ সাল থেকে গাজা উপত্যকা অবরোধ করে রেখেছে ইসরায়েল।
গাজার আকাশসীমা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে ইসরায়েল। এছাড়া সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। কারা সীমান্ত দিয়ে কী নিয়ে প্রবেশ করছে তার তল্লাশি চালানো হচ্ছে। অন্যদিকে মিশরও তাদের সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে।
হামাসের এই হামলার জেরে শনিবার বাতিল হয়েছে ইসরায়েলের বিচার বিভাগীয় সংশোধনী পরিকল্পনার বিরুদ্ধে আয়োজিত সাপ্তাহিক বিক্ষোভ।