হালের ফুটবলের ডেটা নিয়ে কাজ করা বিশ্লেষকদের কাছে প্রত্যাশিত গোল বা ‘এক্স-জি’ বেশ পছন্দের এক টপিক। দুর্ভাগ্য, এই অঞ্চলের ফুটবলে এত পুঙ্খানুপুঙ্খ ডেটা একেবারে হাতের নাগালে পাওয়া যায় না। গেলে আজ মালেতে মালদ্বীপ-বাংলাদেশের ম্যাচের এক্স-জি দেখার মতোই হওয়ার কথা!
দুই দল যে বেশ কয়েকটি সুযোগ পেয়েছে ম্যাচে! সুযোগগুলো ঠিকভাবে কাজে লাগানো গেলে ম্যাচে ৫-৬টি গোল হয়ে যায়! সেখানে গোল হয়েছে দুটি।
তবে সে দুই গোলই আজ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের প্রথম রাউন্ডের ম্যাচটা আবেগের চূড়ান্ত দেখিয়ে দিয়েছে। নির্ধারিত সময়ের তিন মিনিট আগে বাংলাদেশ গোল খেয়ে যায়, তখন তো মনে হচ্ছিল, মালদ্বীপ থেকে হেরেই ফিরছে বাংলাদেশ। কিন্তু যোগ করা সময়ে আবার বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীদের উচ্ছ্বাসে ভেসে যাওয়ার উপলক্ষ তৈরি করে দিলেন সাদ উদ্দীন।
ম্যাচের শুরু থেকেই দুই দল আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ করে গেছে। শুরুতে মালদ্বীপের পায়েই বল বেশি ছিল, তবে ধীরে ধীরে পাল্টা আক্রমণে গোলের সুযোগ তৈরি করেছে বাংলাদেশ। ৩৫ মিনিটে কর্নার থেকে রাকিবের হেড যায় পোস্ট ঘেঁষে। ৪০ মিনিটে ফাহিম তো ‘গোল্ডেন চান্স’ মিস করেছেন – গোলকিপারকে একা পেয়েও গোল করতে পারেননি।
দুই মিনিট পর সেই ফাহিমই বক্সের অনেক বাইরে থেকে অযথা শট নিতে গিয়ে দারণ একটি আক্রমণের সম্ভাবনা নস্যাত করে দিয়েছেন, অথচ ডান উইংয়ে খেলোয়াড় ফাঁকা জায়গায়ই ছিলেন। প্রথমার্ধের শেষদিকে বাংলাদেশের ‘মুদ্রাদোষ’ই হয়ে উঠেছিল এটি – অন্তত দু-তিনবার দারুণ আক্রমণের সম্ভাবনা নষ্ট হয়েছে কখনো ভুল পাসে, কখনো বল নিয়ন্ত্রণে নিতে না পারায়।
দ্বিতীয়ার্ধে ৫৩ মিনিটে গোল্ডেন চান্স পেয়েও কাজে লাগাতে না পারার অপরাধে অপরাধী রাকিব, ডানদিক থেকে তাঁর অ্যাক্রস দ্য পোস্ট শট গেছে বাঁ পোস্টে বাতাস লাগিয়ে। এরপর অবশ্য মালদ্বীপ বেশ কয়েকটি দারুণ আক্রমণ করেছে। ৬৫ মিনিটে শাকিলের ক্লিয়ারেন্স আর ৭৭ মিনিটে মিতুলের সেইভের কথা তো আগেই বলা হলো।
আক্রমণের এই ধারা ধরে রেখেই ৮৭ মিনিটে যখন গোল পেয়ে যায় মালদ্বীপ, মনে হচ্ছিল, হার নিয়েই বুঝি ফিরতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। গোলটা হলো বাংলাদেশের জন্য হতাশার এক উপায়ে। ডান দিক থেকে ক্রস এসেছিল, ডিফেন্ডার তারিক কাজী হেড করে তা ক্লিয়ার করার চেষ্টাও করেছিলেন। কিন্তু তাঁর হেড গিয়ে লাগল বক্সেই দাঁড়াল মালদ্বীপ ফরোয়ার্ড আলি ফাসিরের পিঠে! পড়বি তো পড় মালির ঘাঁড়ে – পড়ুন হাসান নাজিমের পায়ে। আলি ফাসিরের পিঠে লেগে বলটা চলে গেলে ছয় গজের বক্সে ফাঁকায় দাঁড়িয়ে থাকা বদলি ফরোয়ার্ড হাসানের পায়ে। বলটা জালে জড়াতে তাঁর মোটেও বেগ পেতে হলো না।
সেখান থেকে যে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াতে পারবে, সে বিশ্বাস তখন ছিল সামান্যই। কিন্তু ওই অল্প বিশ্বাসকেই পুঁজি করে বাংলাদেশকে উচ্ছ্বাসে ভাসালেন সাদ। বাঁদিক থেকে রাকিবের নিচু ক্রস এল বক্সে, মালদ্বীপের দুই ফরোয়ার্ডকে ফাঁকি দিয়ে তা পোস্টের সামনে চলে এল। দৌড়ে উঠতে থাকা সাদ ঠান্ডা মাথার দারুণ ফিনিশিংয়ে বল জালে ঢুকিয়ে দিলেন গোলকিপারের দু-পায়ের ফাঁক গলে।
মালদ্বীপে সমতা, এখন বসুন্ধরার মাঠে আগামী মঙ্গলবার বাংলাদেশের স্বপ্নের পরীক্ষা। জিতলে বাছাইপর্বের গ্রুপ পর্ব এবং বেশ কয়েকটি ম্যাচ। হেরে গেলে...আপাতত দু-তিন বছরের জন্য নির্বিকার দর্শক বনে যাবে বাংলাদেশ!