‘গণতান্ত্রিক নারীমঞ্চ’ নামের সংগঠনের আত্মপ্রকাশ
- আপডেট সময় : ১১:২৫:৪৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৩
- / ৪৮৭ বার পড়া হয়েছে
নারীর অধিকার, ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ হতে ১২ দফা দাবি নিয়ে ‘গণতান্ত্রিক নারীমঞ্চ’ নামের একটি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। শনিবার (১৪ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর পুরানা পল্টনে দারুস সালাম আর্কেডে নাগরিক ঐক্য কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে ১২ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়।
এসময় ৬টি নারী সংগঠন সম্মিলিত হয়ে নারীদের নিয়ে কাজ করার অঙ্গীকার করে। এসব সংগঠনের মধ্যে রয়েছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক নারী জোট, নাগরিক নারী ঐক্য, শ্রমজীবী নারী মৈত্রী, নারী সংহতি, ভাসানী নারী মুক্তি পরিষদ, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের নারী প্রতিনিধিবৃন্দ।
এসময় গণতান্ত্রিক নারীমঞ্চের সমন্বয়ক বহ্নিশিখা জামালী বলেন, নারীরা বহু জায়গায় বঞ্চিত হচ্ছে। বর্তমান সরকারও নারীদের বিভিন্নভাবে হেয় করছে। সরকারের কাছে নয়, রাষ্ট্রের কাছে চাওয়া নারীদেরকে তাদের সঠিক সম্মান দিতে হবে।
ভোটাধিকার, গণতন্ত্র ও নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ হোন শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে ১২ টি দাবি তুলে ধরেন তিনি। সেগুলো হলো-
১. রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনের সকল ক্ষেত্রে নারীর প্রতি পুরুষতান্ত্রিক ও শ্রেণীগত শোষণ ও বৈষম্যের অবসান ঘটাতে হবে। নারীদের মজুরি বৈষম্যের অবসান করতে হবে। পরিবার ও গৃহস্থালী শ্রমের উপযুক্ত স্বীকৃতি ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে
অভিবাসী নারীদের দক্ষতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে। বিদেশে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
২. জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন এক তৃতীয়াংশ বৃদ্ধি ও সেসব আসনে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। নির্বাচনে প্রতিটি দল থেকে কমপক্ষে এক তৃতীয়াংশ নারী সদস্য মনোনয়ন দিতে হবে।
৩. সম্পত্তির উপর নারীদের সমঅধিকার নিশ্চিত করতে হবে। বিদ্যমান পারিবারিক আইন ও উত্তরাধিকার আইনের ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করে ‘ইউনিফর্ম সিভিল কোড’ চালু করতে হবে।
৪. নারীর গণতান্ত্রিক অধিকার ও মর্যাদা বিরোধী সকল আইন ও বিধিবিধান বিলোপ করতে হবে। নারীর অধিকার, মর্যাদা ও সম্মানহানিকর যাবতীয় বিজ্ঞাপন ও ধর্মান্ধ প্রচারণা বন্ধ করতে হবে। নারীর সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী ফতোয়া নিষিদ্ধ করতে হবে। ঘরে, বাইরে, কর্মস্থলে নারীর পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
৫. নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত ও কর্মস্থলে শিশু পরিচর্যা কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে। প্রজনন স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিশেষ পরিকল্পনা ও উদ্যোগ নিতে হবে। বাল্যবিবাহ রোধে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে।
৬. যৌন নিপীড়ন, ধর্ষণ, হত্যা, সন্ত্রাস, নারী ও শিশু অপহরণ – পাচারের বিরুদ্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। যৌন নিপীড়ন বিরোধী নীতিমালা যথাযথভাবে কার্যকর করতে হবে। নারীর বিরুদ্ধে অপরাধের বিচার দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের সামাজিক সুরক্ষা দিয়ে তাদের মর্যাদা ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। নারীর পোশাক নিয়ে কটূক্তি ও অরুচিকর যাবতীয় তৎপরতা বন্ধ করতে হবে।
৭. আদিবাসী ও প্রান্তিক নারীদের অধিকার, সম্মান ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের ভাষা ও সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য নিশ্চিত করতে হবে।
৮. পারিবারিক ও সামাজিক বিরোধ মীমাংসায় পারিবারিক আদালত চালু ও তা কার্যকর করতে হবে।
৯. খাদ্যসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম কমাতে হবে। গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির দাম ও বাসাভাড়া কমাতে হবে। মুনাফাখোর বাজার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। আয়ের সাথে সংগতিহীন সকল অর্থসম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে। খেলাপীঋণ, কালো টাকা ও পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে।
১০. জাতীয় অর্থনীতিতে বিদেশ নির্ভরতা কমিয়ে আনতে হবে। নারীদের আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করতে হবে। নারী উদ্যোক্তাদেরকে বিশেষ প্রনোদনা ও সহযোগিতা প্রদান করতে হবে।
১১. সাইবার সিকিউরিটি আইনসহ হয়রানি ও নিপীড়নমূলক সকল কালো আইন দ্রুত বাতিল করতে হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার ও সাজাপ্রাপ্ত সকল মামলা প্রত্যাহার করে তাদের মুক্তি দিতে হবে।
১২. ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন বিদায় দিয়ে জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সরকার ও ব্যবস্থা পরিবর্তনে যুগপৎ আন্দোলনের এক দফা ও ৩১ দফা বাস্তবায়ন করতে হবে।