অঘটনটা ঘটিয়েই দিল আফগানিস্তান
- আপডেট সময় : ০৫:২৫:৫৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৩
- / ৪১৭ বার পড়া হয়েছে
একটা-দুটা অঘটন না ঘটলে আবার বিশ্বকাপ কীসের! এবার গ্রুপ পর্বের সূচিই এমন যে, ধারে-ভারে পিছিয়ে থাকা কোনো দল যে ‘গোলিয়াথ’দের বিপক্ষে ‘ডেভিড’ হয়ে অবিশ্বাস্য কোনো গল্প লিখে সেমিফাইনালে উঠে যাবে, সে সম্ভাবনা একেবারে নেই বললেই চলে। তা না হলেও অন্তত একটা-দুটা অঘটন তো হতে পারে। দিল্লিতে আজ সে অঘটনের স্বাদ বিশ্বকাপ পেল আফগানিস্তানের সৌজন্যে।
২৮৫ রানের লক্ষ্য তেমন বড় কিছু নয়। কিন্তু ইংলিশ স্পিনাররাই প্রথম ইনিংসে যেভাবে দাপট দেখিয়েছেন, সেখানে আফগানিস্তানের রশিদ খান, মুজিব উর রহমান, মোহাম্মদ নবীর মতো স্পিনার কেমন ছড়ি ঘোরাতে পারেন, সেটাই ছিল দেখার। রশিদ সেভাবে না পারলেও মুজিব-নবীর স্পিনে খাবি খেয়েছে ইংল্যান্ড, দারুণ বোলিং করেছেন আফগান পেসাররাও। সব মিলিয়ে ফল? ইংল্যান্ড হেরে গেল ৬৯ রানে। ২০২৩ বিশ্বকাপ সাক্ষী হলো প্রথম অঘটনের, তা এমনই ব্যবধানে যে, ৩ ম্যাচ শেষে ১ জয় পাওয়া ইংল্যান্ড রানরেটেও পিছিয়ে গেল অনেকটা।
আফগানিস্তানের হয়ে রশিদ খান প্রথম দশ ওভারের পাওয়ার প্লে-তে বোলিংয়ে আসতেই চান না – এটা আফগানিস্তানকে ভুগিয়েছে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে। সেদিন দশ ওভারের মধ্যেই রোহিত শর্মার ঝড়ে ম্যাচ আফগানিস্তানের নাগালের বাইরে চলে গিয়েছিল। মজার ব্যাপার, রোহিতের বিপক্ষে রশিদের রেকর্ডও ভালো। তা যা-ই হোক, ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানদের স্পিন খেলার দক্ষতা তো আর রোহিতের মতো নয়। আজ মুজিব উর রহমান শুরুতেই নাড়িয়ে দিয়েছেন ইংল্যান্ডকে। পাশাপাশি আফগান পেসারদের সুইং আর সিম মুভমেন্টেও খাবি খেয়েছে ইংল্যান্ড।
শুরুটা পেসার ফজলহক ফারুকির হাত ধরেই। ইনিংসের দ্বিতীয় – নিজের প্রথম – ওভারের প্রথম বলেই ফারুকির ভেতরে ঢোকা বলে ফ্লিক করতে গিয়ে এলবিডাব্লিউ জনি বেয়ারস্টো। স্কোরবোর্ডে রান তখন ৩, এক ডেঞ্জারম্যানের বিদায়! দিল্লির গ্যালারিতে তখনো অবশ্য নড়েচড়ে বসার মতো কিছু হয়নি। ইংল্যান্ডের ব্যাটিং লাইনআপে একেবারে দশ নম্বরে নামা ক্রিস উডও কিছুটা ব্যাট চালাতে পারেন, এক ব্যাটসম্যানের বিদায়ে আর কী হবে!
কিন্তু কিছুটা নড়েচড়ে বসতে বাধ্য হলো ইংল্যান্ড, যখন সপ্তম ওভারে মুজিবের বলে স্টাম্পের সামনে একেবারে ‘ফ্ল্যাট ফুটেড’ হয়ে যাওয়া রুট নিচু হয়ে যাওয়া বলটা আর সামলাতে পারলেন না। বোল্ড! ক্রিকইনফো দেখাচ্ছিল, প্রথম দশ ওভারে এমনিতেই ব্যাটিংয়ে নামতে হলে রুট অস্বস্তিতে পড়ে যান – ২০১৯ বিশ্বকাপের পর এ পর্যন্ত ১৫ ওয়ানডেতে দশ ওভারের মধ্যে নামতে হয়েছে, তার মধ্যে আটবারই রুট আউট হয়ে গেছেন পাওয়ার প্লে-র মধ্যে! গড় দুই অঙ্কের নিচে। আজ ‘গড়ে’র একটু ওপরেই ছিলেন বটে – ১১ রান করেছেন রুট।
পাওয়ার প্লে-তে ইংল্যান্ডের রান এল ৫২, তা নিয়ে অবশ্য ভাবার কিছু ছিল না। ডাওইড ম্যালান ততক্ষণে সেট হয়ে গেছেন, চারে নেমে হ্যারি ব্রুকও পাল্টা আক্রমণ শুরু করেছেন। ইংল্যান্ডের তখনো তাই শঙ্কা জেঁকে বসেনি। কিন্তু বাংলাদেশকে ভোগানো ম্যালানও ১৩তম ওভারে আউট হয়ে গেলেন ৩২ রান করে। কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর মতো আউটই বটে, অফ স্টাম্পের বাইরের বলে এক্সট্রা কাভারে ক্যাচ প্র্যাকটিস করিয়ে ফিরেছেন ম্যালান। ইংল্যান্ড ৬৮/৩, একটু একটু করে তখন অঘটনের শঙ্কা জাগছে।
শঙ্কা ভালোভাবেই জেঁকে বসল, যখন ১৮তম ওভারে নাভিন উল হকের স্টাম্প সোজা বলে বোল্ড হয়ে গেলেন জস বাটলারও (৯)। চতুর্থ স্টাম্পে বলটা আসবে ভেবেছিলেন বাটলার, নাভিনের বলটা আঘাত হানল মিডল স্টাম্পে। ইংল্যান্ড ৯১/৪। আগের ৮ ওয়ানডে ইনিংসে সব মিলিয়ে ৯৬ রান করা ব্রুক ততক্ষণে এক প্রান্তে বেশ পাল্টা আক্রমণ করে যাচ্ছেন, চার-ছক্কাও মারছেন। দেখে মনে হচ্ছিল যেন ব্রুক অন্য পিচে ব্যাটিং করছেন, অন্য এক দলের বিপক্ষে। ৪৫ বলে ফিফটিও হয়ে গেল ব্রুকের।
অথচ আরেক প্রান্তে কী চলছিল? ইংলিশদের আসা-যাওয়া। রশিদের দ্রুতগতির ফ্ল্যাট বল বুঝতে না পেরে এলবিডাব্লিউ লিভিংস্টোন – ইংল্যান্ডের অর্ধেক ব্যাটসম্যানের ড্রেসিংরুমে ফেরা সারা ১১৭ রানের মধ্যে। ২৮তম ওভারের প্রথম বলে নবির অসাধারণ ফ্লাইটেড ডেলিভারিতে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন স্যাম কারেনও। পাগলা ঘণ্টা ততক্ষণে বেজে গেছে ইংলিশ ড্রেসিংরুমে, ইংলিশ সমর্থকদের মনে।
বোলিংয়ে বেধড়ক মার খাওয়া ক্রিস ওকসও বেশিক্ষণ টিকলেন না। তবু ব্রুক ছিলেন বলে, আর অন্যপ্রান্তে আদিল রশিদও ব্যাটিংটা ভালোই পারেন বলে, ইংল্যান্ডের তবু ক্ষীণ আশা ছিল – এই জুটিটা যদি দাঁড়িয়ে যায়! আশার গুড়ে বালি! ৩৫তম ওভারে মুজিব ইংলিশদের সব আশা ধুয়েমুছেই দিলেন। তাঁর তৃতীয় শিকারের নাম যে হ্যারি ব্রুক! মুজিবের ক্যারম বলে ধোঁকা খেয়ে গেলেন ব্রুক। লেগ সাইডে খেলতে চেয়েছিলেন, কিন্তু বলটা উল্টো দিকে ঘুরে যাওয়ায় ব্যাটের কানায় লেগে উইকেটের পেছনে ক্যাচ। ব্রুক ফিরলেন ৬১ বলে ৬৬ রান করে, ফিরলেন ইংল্যান্ডের সব আশা-ভরসা নিয়ে।
অঘটন ঘটছেই – সেটা তখন সম্ভবত ক্রিকেটীয় অনিশ্চয়তাকে একপাশে রেখেও নিশ্চিত করে দেওয়া যাচ্ছিল। আদিল রশিদ (১৩ বলে ২০) শুধু সেটিকে একটু বিলম্বিত করলেন। মার্ক উড (২২ বলে ১৮) আর রিস টপলি (৭ বলে ১৫) ইংল্যান্ডকে দুই শ পার করালেন।
আফগানিস্তানের উৎসব তাতে রঙ হারায়নি মোটেও।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
আফগানিস্তান : ৪৯.৫ ওভারে ২৮৪/১০ (গুরবাজ ৮০, জাদরান ২৮, রহমত ৩, শাহিদী ১৪, ওমরজাই ১৯, ইকরাম ৫৮, নবী ৯, রশিদ ২৩, মুজিব ২৮, নবীন ৫, ফারুকী ২; ওকস ৪-০-৪১-০, টপলি ৮.৫-১-৫২-১, কারান ৪-০-৪৬-০, রশিদ ১০-১-৪২-৩, উড ৯-০-৫০-২, লিভিংস্টোন ১০-০-৩৩-১, রুট ৪-০-১৯-১)
ইংল্যান্ড : ৪০.৩ ওভারে ২১৫/১০ (বেয়ারস্টো ২, মালান ৩২, রুট ১১, ব্রুক ৬৬, বাটলার ৯, লিভিংস্টোন ১০, কারান ১০, ওকস ৯, রশিদ ২০, উড ১৮, টপলি ১৫; মুজিব ১০-১-৫১-৩, ফারুকী ৭-০-৫০-১, নবীন ৬-১-৪৪-১, নবী ৬-০-১৬-২, রশিদ ৯.৩-১-৩৭-৩, ওমরজাই ২-০-১৩-০)
ফলাফল : আফগানিস্তান ৬৯ রানে জয়ী।