০২:৪৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বলিরপাঠা ফিলিস্তিনের জনগন

হামাসকে শায়েস্তার নামে, ইরান ও সিরিয়ায় হামলার পরিকল্পনা

হামাসকে নিশ্চিহ্ন করতে ইসরায়েলি সেনারা সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। ইসরায়েলের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে আমেরিকা ও যুক্তরাজ্য। মার্কিন বিমানবাহী নৌবহর জেরল্ড ফোর্ড আরও পাঁচটি রণতরী নিয়ে এখন ভূমধ্যসাগরে অবস্থান করছে। দ্বিতীয় বিমানবাহী রণতরী আইজেনহাওয়ারকে পূর্ব ভূমধ্যসাগরে মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছে মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।

এদিকে আমেরিকার নিয়মিত সঙ্গী যুক্তরাজ্য তাদের যুদ্ধজাহাজ, নজরদারী বিমান ও হেলিকপ্টার পাঠিয়েছে। সাথে আছে রাজকীয় মেরিন সেনার দল। প্রশ্ন হলো—এক হামাসকে দমন করতে এত আয়োজন? বিশ্বাস করা কঠিন। কারণ গাজা উপত্যাকার বাইরে জলে–স্থলে–আকাশে হামাসের উপস্থিতি নেই বললেই চলে।

ফলে এই ধারণা বা আশঙ্কা গভীর হচ্ছে যে, হামাসের বাইরে বড় কোনো লক্ষ্য আছে ইসরায়েল ও এর মিত্রদের। না হলে এত আয়োজন কেন? আর সেই বড় লক্ষ্যই হচ্ছে ইরান ও সিরিয়ায় শাসক পরিবর্তন। কিন্তু আমেরিকা মুখে বলছে, সংঘাত যাতে হামাসের বাইরে না যায়, সে জন্য সতর্ক ব্যবস্থা হিসেবে তারা সেখানে গেছে। ওয়াশিংটনের আশঙ্কা—হামাসের বিরুদ্ধে পুরোদমে ইসরায়েল হামলা শুরু করলে লেবাননের হিজবুল্লাহ, সিরিয়া ও ইরান এতে জড়িয়ে পড়তে পারে।

তবে মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাবেক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা মিশেল ম্যালফ রাশিয়া টুডের সাথে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, হামাসের সাথে এই সংঘাতে আমেরিকাকে সরাসরি জড়াতে চান নেতানিয়াহু। কারণ যুদ্ধের ক্ষেত্র বাড়িয়ে লেবানন ও ইরান পর্যন্ত নেওয়া যাবে। ম্যালফের বক্তব্য, যুদ্ধবিমানবাহী রণতরী জেরলফোর্ডের সাথে পাঁচটি ক্ষেপনাস্ত্রবাহী ডেস্ট্রয়ার পূর্ব ভূমধ্যসাগরে মোতায়েন করাই নেতানিয়াহুর সেই দুঃসাহসিক স্বপ্নপূরণের সাক্ষ্য দিচ্ছে।

ইসরায়েলে সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যের যেকোনো জায়গায় তাঁদের সেনারা অপারেশন চালাতে পারে। ইসরায়েলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তাঁরা গোটা মধ্যপ্রাচ্যের দিকে নজর রাখছেন। হাগারির কথা থেকে ইসরায়েলের উদ্দেশ্য সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পাওয়া যায়।

এদিকে পেন্টাগনের এক সাবেক কর্মকর্তা রাশিয়া টুডেকে বলেছেন, নেতানিয়াহু চান আমেরিকা এই সংঘাতে জড়াক। তাহলে হিজবুল্লাহকে আক্রমণ করার অছিলায় লেবাননের সাথে পুরোদস্তুর যুদ্ধে যাওয়া যাবে। ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো বোমা মেরে ধুলিস্যাৎ করে দেওয়া যাবে। ১৯৬০–এর দশকে ভিয়েতনাম যুদ্ধে যেভাবে আমেরিকা জড়িয়ে পড়েছিল, এবারও সেভাবে উপসাগরীয় যুদ্ধে বিশ্বের এই ক্ষমতাধর দেশকে জড়াতে চান নেতানিয়াহু।

পুরো বিষয়টিকে একটি কাঠামোর মধ্যে আনতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ সফর করছেন। সৌদি যুবরাজ মোহাম্মাদ বিন সালমানের সাথে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী আলোচনা হয়েছে তাঁর। এসব শেষ করে পাঁচ দিনের মধ্যে তিনি আবার ইসরায়েলে গেছেন। আগেই তিনি দেশটিকে এই বলে আশ্বস্ত করেছিলেন যে, যেকোনো বিপদে সর্বশক্তি দিয়ে ইসরায়েলের পাশে থাকবে আমেরিকা।

এদিকে ইরান ও সিরিয়ায় শাসক পরিবর্তনের খায়েশ আমেরিকা ও এর মিত্রদের আজকের নয়। ২০১১ সালে আরব বসন্তের নামে তিউনিশিয়া, মিশর ও লিবিয়ায় ক্ষমতাসীনদের ছুড়ে ফেলতে সক্ষম হয়েছিল তারা। ইন্ডিয়া ন্যারেটিভে প্রকাশিত এক নিবন্ধে অতুল আনেজা লিখেছেন, আরব বসন্ত যে কোনো স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ ছিল না, এটা যে একটা পরিকল্পিত আয়োজন, তা ধরে ফেলে রাশিয়া ও চীন। দুটি দেশই বুঝতে পারে, এর পরের লক্ষ্য প্রথমে সিরিয়া, পরে ইরান।

এটা বোঝার পরই জাতিসংঘে আনা আসাদকে সরানোর প্রস্তাবে ভেটো দেয় রাশিয়া ও চীন। সিরিয়ায় সরাসরি সামরিক হস্তক্ষেপ করেন পুতিন। আসাদ সরকার বেঁচে যায় সে যাত্রায়। পাশাপাশি এই দুই দেশ ইরানের সাথে বিশেষ সম্পর্ক গড়ে তোলে। ইরান এখন চীনের নেতৃত্বধীন সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন ও ব্রিকসের সদস্য। চীনের বিনিয়োগও সেখানে বিপুল। ফলে ইরান ও সিরিয়া টিকেই আছে আমেরিকার প্রতিদ্বন্দ্বী দুই দেশের সহযোগিতায়। এবারের সংকট কত দূর গড়াবে বা ইসরায়েল–আমেরিকা–যুক্তরাজ্য এই ত্রয়ীর সামনে কে টিকে থাকতে পারবে আর কে পারবে না, তা কিছু দিনের মধ্যে পরিষ্কার হয়ে যাবে।

বলিরপাঠা ফিলিস্তিনের জনগন

হামাসকে শায়েস্তার নামে, ইরান ও সিরিয়ায় হামলার পরিকল্পনা

আপডেট : ০৫:২২:১২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৩

হামাসকে নিশ্চিহ্ন করতে ইসরায়েলি সেনারা সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। ইসরায়েলের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে আমেরিকা ও যুক্তরাজ্য। মার্কিন বিমানবাহী নৌবহর জেরল্ড ফোর্ড আরও পাঁচটি রণতরী নিয়ে এখন ভূমধ্যসাগরে অবস্থান করছে। দ্বিতীয় বিমানবাহী রণতরী আইজেনহাওয়ারকে পূর্ব ভূমধ্যসাগরে মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছে মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।

এদিকে আমেরিকার নিয়মিত সঙ্গী যুক্তরাজ্য তাদের যুদ্ধজাহাজ, নজরদারী বিমান ও হেলিকপ্টার পাঠিয়েছে। সাথে আছে রাজকীয় মেরিন সেনার দল। প্রশ্ন হলো—এক হামাসকে দমন করতে এত আয়োজন? বিশ্বাস করা কঠিন। কারণ গাজা উপত্যাকার বাইরে জলে–স্থলে–আকাশে হামাসের উপস্থিতি নেই বললেই চলে।

ফলে এই ধারণা বা আশঙ্কা গভীর হচ্ছে যে, হামাসের বাইরে বড় কোনো লক্ষ্য আছে ইসরায়েল ও এর মিত্রদের। না হলে এত আয়োজন কেন? আর সেই বড় লক্ষ্যই হচ্ছে ইরান ও সিরিয়ায় শাসক পরিবর্তন। কিন্তু আমেরিকা মুখে বলছে, সংঘাত যাতে হামাসের বাইরে না যায়, সে জন্য সতর্ক ব্যবস্থা হিসেবে তারা সেখানে গেছে। ওয়াশিংটনের আশঙ্কা—হামাসের বিরুদ্ধে পুরোদমে ইসরায়েল হামলা শুরু করলে লেবাননের হিজবুল্লাহ, সিরিয়া ও ইরান এতে জড়িয়ে পড়তে পারে।

তবে মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাবেক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা মিশেল ম্যালফ রাশিয়া টুডের সাথে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, হামাসের সাথে এই সংঘাতে আমেরিকাকে সরাসরি জড়াতে চান নেতানিয়াহু। কারণ যুদ্ধের ক্ষেত্র বাড়িয়ে লেবানন ও ইরান পর্যন্ত নেওয়া যাবে। ম্যালফের বক্তব্য, যুদ্ধবিমানবাহী রণতরী জেরলফোর্ডের সাথে পাঁচটি ক্ষেপনাস্ত্রবাহী ডেস্ট্রয়ার পূর্ব ভূমধ্যসাগরে মোতায়েন করাই নেতানিয়াহুর সেই দুঃসাহসিক স্বপ্নপূরণের সাক্ষ্য দিচ্ছে।

ইসরায়েলে সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যের যেকোনো জায়গায় তাঁদের সেনারা অপারেশন চালাতে পারে। ইসরায়েলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তাঁরা গোটা মধ্যপ্রাচ্যের দিকে নজর রাখছেন। হাগারির কথা থেকে ইসরায়েলের উদ্দেশ্য সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পাওয়া যায়।

এদিকে পেন্টাগনের এক সাবেক কর্মকর্তা রাশিয়া টুডেকে বলেছেন, নেতানিয়াহু চান আমেরিকা এই সংঘাতে জড়াক। তাহলে হিজবুল্লাহকে আক্রমণ করার অছিলায় লেবাননের সাথে পুরোদস্তুর যুদ্ধে যাওয়া যাবে। ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো বোমা মেরে ধুলিস্যাৎ করে দেওয়া যাবে। ১৯৬০–এর দশকে ভিয়েতনাম যুদ্ধে যেভাবে আমেরিকা জড়িয়ে পড়েছিল, এবারও সেভাবে উপসাগরীয় যুদ্ধে বিশ্বের এই ক্ষমতাধর দেশকে জড়াতে চান নেতানিয়াহু।

পুরো বিষয়টিকে একটি কাঠামোর মধ্যে আনতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ সফর করছেন। সৌদি যুবরাজ মোহাম্মাদ বিন সালমানের সাথে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী আলোচনা হয়েছে তাঁর। এসব শেষ করে পাঁচ দিনের মধ্যে তিনি আবার ইসরায়েলে গেছেন। আগেই তিনি দেশটিকে এই বলে আশ্বস্ত করেছিলেন যে, যেকোনো বিপদে সর্বশক্তি দিয়ে ইসরায়েলের পাশে থাকবে আমেরিকা।

এদিকে ইরান ও সিরিয়ায় শাসক পরিবর্তনের খায়েশ আমেরিকা ও এর মিত্রদের আজকের নয়। ২০১১ সালে আরব বসন্তের নামে তিউনিশিয়া, মিশর ও লিবিয়ায় ক্ষমতাসীনদের ছুড়ে ফেলতে সক্ষম হয়েছিল তারা। ইন্ডিয়া ন্যারেটিভে প্রকাশিত এক নিবন্ধে অতুল আনেজা লিখেছেন, আরব বসন্ত যে কোনো স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ ছিল না, এটা যে একটা পরিকল্পিত আয়োজন, তা ধরে ফেলে রাশিয়া ও চীন। দুটি দেশই বুঝতে পারে, এর পরের লক্ষ্য প্রথমে সিরিয়া, পরে ইরান।

এটা বোঝার পরই জাতিসংঘে আনা আসাদকে সরানোর প্রস্তাবে ভেটো দেয় রাশিয়া ও চীন। সিরিয়ায় সরাসরি সামরিক হস্তক্ষেপ করেন পুতিন। আসাদ সরকার বেঁচে যায় সে যাত্রায়। পাশাপাশি এই দুই দেশ ইরানের সাথে বিশেষ সম্পর্ক গড়ে তোলে। ইরান এখন চীনের নেতৃত্বধীন সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন ও ব্রিকসের সদস্য। চীনের বিনিয়োগও সেখানে বিপুল। ফলে ইরান ও সিরিয়া টিকেই আছে আমেরিকার প্রতিদ্বন্দ্বী দুই দেশের সহযোগিতায়। এবারের সংকট কত দূর গড়াবে বা ইসরায়েল–আমেরিকা–যুক্তরাজ্য এই ত্রয়ীর সামনে কে টিকে থাকতে পারবে আর কে পারবে না, তা কিছু দিনের মধ্যে পরিষ্কার হয়ে যাবে।