ফাইনাল অব দ্য ইয়ারে বিজয় দেখল বাংলাদেশ। মালদ্বীপকে ২-১ গোলে হারিয়ে পৌঁছাল বিশ্বকাপ ফুটবলের বাছাইপর্বে। আজ মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) ঢাকার কিংস অ্যারেনায় প্রথমার্ধের ১-১ সমতা চাপে ফেললেও দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ঘুচে যায় তা। পরে সেই ধারা অব্যাহত রেখে জয় ছিনিয়ে নেয় লাল-সবুজের দল।
প্রথমার্ধের খেলা ১-১ গোলের সমতায় শেষ হলেও জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে জামাল ভূঁইয়ারা। ম্যাচের ১১ মিনিটে বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম গোলটি করেন রাকিব। আর দ্বিতীয়ার্ধে জয়সূচক গোলটি আসে ফাহিমের পা থেকে। এর আগে, মালদ্বীপের মালেতে প্রথম লেগের ম্যাচ ১-১ গোলে ড্র হয়েছিল।
ম্যাচ শুরুর মাত্র ১১ মিনিটের মাথায় লিড পায় বাংলাদেশ। এ সময় সাদ উদ্দিনের বাড়িয়ে দেয়া বল পেয়ে যান ফয়সাল আহমেদ ফাহিম। তিনি সেখান থেকে রাকিব হোসেনকে বাড়িয়ে দেন কাটব্যাক করে। রাকিব দুর্দান্ত প্লেসিং শটে গোল করে এগিয়ে যায় স্বাগতিকরা।
ম্যাচের ২৯ মিনিটে আরও একটি গোলের দারুণ সুযোগ পেয়েছিলেন রাকিব। গোলরক্ষককে একা পেয়েছিলেন। শটও নিয়েছিলেন। কিন্তু মালদ্বীপের গোলরক্ষক তার ডান পা বাড়িয়ে দিয়ে রুখে দেন বল। রাকিব হন গোল বঞ্চিত।
তবে ম্যাচের ৩৬ মিনিটে সমতা ফেরায় মালদ্বীপ। এ সময় কর্নার পায় তারা। কর্নার থেকে উড়ে আসা বলে হেড নিয়ে জালে জড়ান ইব্রাহিম হাইসাম। এরপর উভয় দল আরও বেশ কয়েকটি সুযোগ তৈরি করে। কিন্তু গোল আদায় করে নিতে পারেনি। তাতে ১-১ গোলের সমতা নিয়ে শেষ হয় প্রথমার্ধের খেলা।
৫৮ মিনিটে সোহেল রানা লাল কার্ড দেখলে ১০ জনের দলে পরিণত হয় বাংলাদেশ। তবু, আক্রমণ থামায়নি তারা। ৬৪ মিনিটে জামাল-রাকিব-সোহেলের ছোট ছোট পাসে প্রতিপক্ষের রক্ষণের ফাঁক খোঁজার চেষ্টা করে হাভিয়ের কাবরেরার শিষ্যরা। তবে, তা ফল আনেনি। বরং ৬৬ মিনিটে হামজা মোহাম্মদের দূরপাল্লার শট বার ঘেঁষে যায়। ৭১ মিনিটে আইসাম ইব্রাহিমের শট ঠেকিয়ে দেন বাংলাদেশি গোলরক্ষক মিতুল মারমা। ৭২ মিনিটে আবারও রক্ষা করেন মিতুল। ৮৬ মিনিটে বাম প্রান্ত থেকে রাকিব হোসেন বল বাড়িয়ে দেন মজিবুর রহমান জনির কাছে। তবে, ওয়ান টু ওয়ানে মালদ্বীপ গোলরক্ষককে পরাস্ত করতে ব্যর্থ হন জনি।
ম্যাচের যোগ করা সময়ে মাঝমাঠ থেকে বল নিয়ে প্রায় ঢুকে পড়েছিলেন বক্সে। ওয়ান টু ওয়ানে তাকে ফাউল করে লাল কার্ড দেখেন মালদ্বীপের আহনাফ রশিদ। উভয় দলই পরিণত হয় ১০ জনের দলে। শেষ দুই মিনিটে আর কোনো গোল না হলে ২-১ ব্যবধানে জয় পায় বাংলাদেশ।
এর আগে প্রথমার্ধে ঘরের মাঠ কিংস অ্যারেনায় বাংলাদেশ শুরুটা করেছে মালদ্বীপের চাপ সামলে। ম্যাচের প্রথম ১০ মিনিটে বেশ কয়েকটি আক্রমণ করে মালদ্বীপ। দ্বিতীয় মিনিটেই গোল পেতে পারত তারা। রক্ষণভাগের খেলোয়াড় শাকিল আহমেদ প্রতিপক্ষের আক্রমণ বাঁচিয়েছেন কর্নারের বিনিময়ে। সপ্তম মিনিটে এগিয়ে যেতে পারত বাংলাদেশও। মাঝমাঠ থেকে বল নিয়ে মালদ্বীপের বক্সের কাছে চলে যান অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া। সেটি ক্লিয়ার করেন মালদ্বীপের ডিফেন্ডাররা।
গোল পেয়ে উজ্জ্বীবিত বাংলাদেশ বাড়ায় আক্রমণের গতি। ১৪ মিনিটে ডান প্রান্ত থেকে জামালের ক্রসে ফাহিম শট নেন। কিন্তু, তার ড্রপড শটটি কোনোমতে ঠেকিয়ে দলকে বাঁচান মালদ্বীপ গোলরক্ষক হোসেন শরীফ। ২০ মিনিটে বিপদ হতে পারত বাংলাদেশের। হামজা মোহাম্মদ তিনজনকে কাটিয়ে ডি বক্সে ঢুকে পড়েন। তার শট ব্লক করে লাল-সবুজদের রক্ষা করেন শাকিল। ৩২ মিনিটে আবারও হামজার প্রচেষ্টা। এবার বাংলাদেশের রক্ষাকর্তা গোলরক্ষক মিতুল মারমা।
৩৪ মিনিটে বাংলাদেশ আরও একটি আক্রমণ করে। আবারও ডান প্রান্ত থেকে জামালের ক্রস। গোলদাতা রাকিব এবার ফাহিমের মতোই ড্রপড শট নেন। বারে লেগে প্রতিহত হয় সেটি। এর মিনিট দুই পর কর্নার থেকে মালদ্বীপকে এগিয়ে নেন আইসাম ইব্রাহিম। ৩৬ মিনিটে হামজার কর্নার কিকে ইব্রাহিমের হেডে সমতায় ফেরে সফরকারীরা। প্রথমার্ধের বাকি সময় আর কোনো গোল না হওয়ায় ১-১ সমতা নিয়ে বিরতিতে যায় দুদল।
বাংলাদেশের কোচ ও খেলোয়াড় ঘোষণা দিয়েছিলেন, মালদ্বীপের বিপক্ষে ম্যাচটি হতে চলেছে ফাইনাল অব দ্য ইয়ার। বছরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে নিজেদের সেরাটাই দিয়েছেন লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।