ফিলিস্তিনির ইসলামপন্থী দল হামাস গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালানোর পর বিশ্বজুড়ে ইসলামফোবিয়াকে উসকে দিয়েছে। এমন সময়ে এই যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার গ্রিক অর্থোডক্স গির্জাটি হয়ে উঠেছে মানবতার প্রতীক।
হামাসের হামলার জেরে গাজায় অনবরত বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। এ হামলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ওয়ালা সোবেহ-এর বাড়ি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাঁর আশপাশের বেশিরভাগ ঘরবাড়িও। প্রাণ বাঁচাতে পরিবার নিয়ে ওয়ালার মতো অনেকেই খুঁজছিলেন নিরাপদ আশ্রয়। তাদের জন্য দরজা খুলে দিয়েছে গাজার প্রাচীনতম একটি গির্জা।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, সেন্ট পোরফিরিয়াসের নামের ওই গির্জাটিতে কেবল নিরাপত্তাই খুঁজে পাননি ওয়ালা। বরং তিনি সেখানে একটি পরিবারের সঙ্গে থাকার অনুভূতি পাচ্ছেন। ওয়ালার মতো অনেকে ইসরায়েলের আক্রমণ থেকে বাঁচতে আশ্রয় নিয়েছেন সেন্ট পোরফিরিয়াস গির্জায়।
ওয়ালা গির্জার এমন পরিবেশ দেখে তাঁর মুসলিম প্রতিবেশীদেরকেও সেখানে আসতে ফোন করেন।
ওয়ালা বলেন, 'আমরা এখানে এক একটি দিন কাটাচ্ছি আর প্রতিটি রাত পার করছি জীবনের অনিশ্চয়তায়। তবে আমাদের যন্ত্রণাকে কিছুটা কমিয়ে দিচ্ছে আশপাশের সবার নরম ও উষ্ণ মনোভাব। গির্জার পাদ্রি ও অন্যরা স্বেচ্ছাসেবক হয়ে আশ্রয় নেয়া লোকজনের সেবায় দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন। আমাদের তারা প্রচুর সহায়তা করছেন।’
গাজার বহু অবকাঠামো ইসরায়েলের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এখনও ক্ষেপণাস্ত্র পড়েনি সেন্ট পোরফিরিয়াস গির্জাটিতে । আর ভেতরে আশ্রয় নেয়া সবাই হয়ে উঠেছে একটি পরিবার।
সেইন্ট পোরফিরিয়াস গির্জার পাদ্রি ফাদার এলিয়াস বলেন, ‘ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর বোমায় অনেক নিরাপদ আশ্রয়স্থল গুড়িয়ে গেছে। এই গির্জায় এখনও বোমা পড়েনি, তবে শেষ পর্যন্ত এটি টিকে যাবে কিনা তা আমি নিশ্চিত না।’
ইসরায়েলি বোমা হামলায় গাজায় এ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি মসজিদ ও স্কুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ফাদার এলিয়াস বলেন, 'আমাদের গির্জায় হামলা হলে তা কেবল ধর্মের ওপরই নয়, মানবতার ওপর হামলা হিসেবেও গণ্য করা হবে, যা জঘন্য কাজ। আমাদের মানবিকতা প্রয়োজনে মানুষকে শান্তি ও স্বস্তি দিতে আমদের উদ্বুদ্ধ করে।’
সেন্ট পোরফিরিয়াস গির্জাটি ১১৫০ থেকে ১১৬০ সালে দিকে নির্মিত। গাজার পঞ্চম শতাব্দির বিশপ সেইন্ট পোরফিরিয়াসের নামে এর নামকরণ।
গির্জাটিতে আশ্রয় নেয়া ফিলস্তিনি খ্রিস্টান পরিবারের চার সন্তানের বাবা জর্জ শ্যাবেন জানান, ইসরায়েলের তিনটি বিমান হামলার আঘাতে লণ্ডভণ্ড হয় তাঁর এলাকা। কোনো রকমে প্রাণ বাঁচিয়ে পরিবার নিয়ে তিনি পৌঁছেছেন গির্জায়।
শ্যাবেন বলেন, ‘এখানে এসে জীবন রক্ষা হয়েছে। রাত হলে এখানে আশ্রয় নেওয়া সবাই আমরা একসঙ্গে আড্ডা দেই। আমরা মুসলমান, খ্রিস্টান, তরুণ, বৃদ্ধ সবাই মিলে নিরাপত্তা ও শান্তির জন্য প্রার্থনা করি।’
ওয়ালা বলেন, ‘ইসরায়েলের চাইছে আমাদের সম্প্রদায়কে ছিন্নভিন্ন করে আমাদের বাস্তুচ্যূত করতে। তারা হয়ত আমাদের মেরে ফেলতেও পারে। তবে জীবিত বা মৃত, মুসলমান বা খ্রিস্টান, যে কোনো অবস্থাতেই আমরা ফিলিস্তিনের বাসিন্দা হয়ে সহাবস্থানে থাকব।’