০২:৪৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পরিবেশ তৈরি হয়নি: আফরিন

মিয়ানমারে এখনও রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি বলে জানিয়েছেন সফররত আমেরিকার দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আখতার। মঙ্গলবার কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে তিনি এ কথা বলেন।

মার্কিন এই কর্মকর্তা এমন এক সময় এ মন্তব্য করলেন যখন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে ঢাকা–নেপিদো পুনরায় আলোচনা করছে। গত সেপ্টেম্বরে দুই দেশের আলোচনায় প্রাথমিকভাবে ৩ হাজার রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।

আফরিন আখতার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা আলোচনা করেছি, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন হতে হবে নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি, মিয়ানমারের পরিবেশ এখনও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের উপযুক্ত হয়নি। বার্মা সরকার এখনও দেশটির ক্যাম্পে মানবিক সহায়তা পাঠানোর অনুমোদন দেয়নি। রোহিঙ্গাদের নিজেদের পছন্দমতো গ্রামে বাস করার অনুমতিও দেওয়া হয়নি। ফলে আমরা এখনও মনে করি না যে, সেখানকার পরিস্থিতি প্রত্যাবাসনের উপযুক্ত হয়েছে। আমরা বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এই সংকটের দীর্ঘমেয়াদী সমাধান খুঁজতে কাজ করে যাব।’

প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে গত ৫ মে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের পরিবেশ-পরিস্থিতি পরিদর্শনে বাংলাদেশে বসবাসরত ২০ রোহিঙ্গাসহ ২৭ জনের একটি প্রতিনিধিদল মিয়ানমারে যান।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয় (আরআরআরসি) সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ শুরুর পর ২০১৮ সালে বাংলাদেশ মিয়ানমারের কাছে প্রত্যাবাসনে ৮ লাখ ৮২ হাজার রোহিঙ্গার একটি তালিকা দিয়েছিল। সেই তালিকা যাচাই-বাছাই করে মাত্র ৬৮ হাজার রোহিঙ্গার একটি তালিকা চূড়ান্ত করে তা বাংলাদেশের কাছে ফেরত পাঠিয়েছিল মিয়ানমার।

কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্প ও ভাসানচর মিলিয়ে দেশে বর্তমানে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছেন।

আফরিন বলেন, ‘আমি এখানে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে এসেছি। এখানে জাতিসংঘ ও আমাদের সহযোগী সংস্থাগুলোর অনেক কমকর্তার সাথে কথা হয়েছে। এত জনবহুল দেশ হওয়ার পরেও লাখ লাখ শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়ায় আমি বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমরা জানি, এর জন্য শুধু ধন্যবাদই যথেষ্ট নয়।’

আফরিন তাঁর বক্তব্যে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে হওয়া বৈঠক নিয়েও কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘ঢাকা এবং কক্সবাজার দুই জায়গাতেই সফর খুব ভালো হয়েছে। গতকাল আমি পররাষ্ট্রসচিব মোমেন এবং অন্য বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের সাথে দেখা করেছি। আমরা অনেকগুলো বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। বাংলাদেশের সাথে আমাদের একাধিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় রয়েছে, যার মধ্যে আছে অর্থনীতি, খাদ্য নিরাপত্তা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, দীর্ঘ মেয়াদী উন্নয়ন সহযোগিতা, নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন এবং আরও অনেক ইস্যু।

আফরিন আরও বলেন, ‘আমি আলোচনায় অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছি। আমরা মনে করি, নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও অবাধ অনুষ্ঠিত হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আমরা আরও আলোচনা করেছি, সুষ্ঠু নির্বাচন মানে শুধু নির্বাচনের দিনই নয়; বরং নির্বাচনের আগেও সিভিল সোসাইটি, গণমাধ্যমসহ সব পক্ষকেই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে দিতে হবে।’

গত সোমবার তিনদিনের সফরে ঢাকায় আসেন আফরিন আখতার। এর আগে গত মে মাসে আফরিন ঢাকায় এসেছিলেন। ৬ মাসের মধ্যে এটি তাঁর দ্বিতীয় দফায় বাংলাদেশ সফর।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পরিবেশ তৈরি হয়নি: আফরিন

আপডেট : ০২:১২:৪০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৩

মিয়ানমারে এখনও রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি বলে জানিয়েছেন সফররত আমেরিকার দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আখতার। মঙ্গলবার কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে তিনি এ কথা বলেন।

মার্কিন এই কর্মকর্তা এমন এক সময় এ মন্তব্য করলেন যখন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে ঢাকা–নেপিদো পুনরায় আলোচনা করছে। গত সেপ্টেম্বরে দুই দেশের আলোচনায় প্রাথমিকভাবে ৩ হাজার রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।

আফরিন আখতার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা আলোচনা করেছি, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন হতে হবে নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি, মিয়ানমারের পরিবেশ এখনও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের উপযুক্ত হয়নি। বার্মা সরকার এখনও দেশটির ক্যাম্পে মানবিক সহায়তা পাঠানোর অনুমোদন দেয়নি। রোহিঙ্গাদের নিজেদের পছন্দমতো গ্রামে বাস করার অনুমতিও দেওয়া হয়নি। ফলে আমরা এখনও মনে করি না যে, সেখানকার পরিস্থিতি প্রত্যাবাসনের উপযুক্ত হয়েছে। আমরা বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এই সংকটের দীর্ঘমেয়াদী সমাধান খুঁজতে কাজ করে যাব।’

প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে গত ৫ মে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের পরিবেশ-পরিস্থিতি পরিদর্শনে বাংলাদেশে বসবাসরত ২০ রোহিঙ্গাসহ ২৭ জনের একটি প্রতিনিধিদল মিয়ানমারে যান।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয় (আরআরআরসি) সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ শুরুর পর ২০১৮ সালে বাংলাদেশ মিয়ানমারের কাছে প্রত্যাবাসনে ৮ লাখ ৮২ হাজার রোহিঙ্গার একটি তালিকা দিয়েছিল। সেই তালিকা যাচাই-বাছাই করে মাত্র ৬৮ হাজার রোহিঙ্গার একটি তালিকা চূড়ান্ত করে তা বাংলাদেশের কাছে ফেরত পাঠিয়েছিল মিয়ানমার।

কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্প ও ভাসানচর মিলিয়ে দেশে বর্তমানে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছেন।

আফরিন বলেন, ‘আমি এখানে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে এসেছি। এখানে জাতিসংঘ ও আমাদের সহযোগী সংস্থাগুলোর অনেক কমকর্তার সাথে কথা হয়েছে। এত জনবহুল দেশ হওয়ার পরেও লাখ লাখ শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়ায় আমি বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমরা জানি, এর জন্য শুধু ধন্যবাদই যথেষ্ট নয়।’

আফরিন তাঁর বক্তব্যে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে হওয়া বৈঠক নিয়েও কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘ঢাকা এবং কক্সবাজার দুই জায়গাতেই সফর খুব ভালো হয়েছে। গতকাল আমি পররাষ্ট্রসচিব মোমেন এবং অন্য বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের সাথে দেখা করেছি। আমরা অনেকগুলো বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। বাংলাদেশের সাথে আমাদের একাধিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় রয়েছে, যার মধ্যে আছে অর্থনীতি, খাদ্য নিরাপত্তা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, দীর্ঘ মেয়াদী উন্নয়ন সহযোগিতা, নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন এবং আরও অনেক ইস্যু।

আফরিন আরও বলেন, ‘আমি আলোচনায় অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছি। আমরা মনে করি, নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও অবাধ অনুষ্ঠিত হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আমরা আরও আলোচনা করেছি, সুষ্ঠু নির্বাচন মানে শুধু নির্বাচনের দিনই নয়; বরং নির্বাচনের আগেও সিভিল সোসাইটি, গণমাধ্যমসহ সব পক্ষকেই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে দিতে হবে।’

গত সোমবার তিনদিনের সফরে ঢাকায় আসেন আফরিন আখতার। এর আগে গত মে মাসে আফরিন ঢাকায় এসেছিলেন। ৬ মাসের মধ্যে এটি তাঁর দ্বিতীয় দফায় বাংলাদেশ সফর।