ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার একটি হাসপাতালে ইসরায়েলের ভয়াবহ হামলার ঘটনায় বিশ্বজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের কর্তৃপক্ষের মতে, মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) গাজার আল-আহলি আরব হাসপাতালে ইসরায়েলি বিমান হামলায় কমপক্ষে ৫০০ জন নিহত হয়েছেন।
ইতোমধ্যে ন্যাক্কারজনক সেই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘসহ একাধিক মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা। এরই মধ্যে তাতে শামিল হয়েছেন মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান। মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
এতে বলা হয়, গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে নজিরবীহিন হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস। পাল্টা জবাবে গাজায় অনবরত হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। যার সবচেয়ে ভয়ংকর পরিণতি সর্বশেষ ঘটনা।
আল-আহলি হাসপাতালে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ। একে ‘গণহত্যা’ বলে অভিহিত করেছে তিনি। বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ বলেন, এ পরিস্থিতিতে কেউ চুপ থাকতে পারে না। এভাবে সাধারণ মানুষকে হত্যা করা মানবতার জন্য লজ্জাজনক।
গাজায় হাসপাতালে শত শত মানুষের মৃত্যুকে ‘জঘন্য অপরাধ’ বলে আখ্যায়িত করেছে সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বেসামরিক লোক নিহতের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে কাতার। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রলায় বলেছে, গাজার হাসপাতাল, স্কুল ও জনবহুল এলাকায় মরিয়া হয়ে হামলা করছে ইসরায়েল। তাতে সংঘাত ভয়ানক রূপ ধারণ করছে। সেটা আরও বিস্তৃত হচ্ছে।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়ের এরদোয়ান বলেন, ন্যূনতম মানবিক মূল্যবোধের তোয়াক্কা করছে না ইসরায়েল। গাজায় হাসপাতালে তাদের সবশেষ হামলা সেটারই উদাহরণ। সেখানে ‘নজিরবিহীন নৃশংসতা’ বন্ধে আহ্বান জানান তিনি।
আল–আহলি হাসপাতালে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানিয়েছে মিসর। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, গাজার বেসামরিক নাগরিকদের ওপর নির্বিচার হামলা ‘আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের চরম লঙ্ঘন’।
মিসরের প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাত্তাহ আল–সিসি বলেন, ইসরায়েলের এ হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। এ ঘটনায় ধিক্কার জানিয়েছে ইরান। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, নির্বিচারে বিমান হামলা চালিয়ে গাজার নিরস্ত্র ও অসহায় মানুষদের হত্যা করছে ইসরায়েল। জঘন্য এ অপরাধের মাধ্যমে ইহুদী রাষ্ট্রটি আরেকবার বিশ্ব দরবারে তাদের অমানবিক ও পাশবিকতাকে তুলে ধরেছে।
সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের কার্যালয় এ হামলাকে ‘মানবতার বিরুদ্ধে সবচেয়ে নৃশংস, জঘন্য, রক্তক্ষয়ী গণহত্যাগুলোর একটি’ উল্লেখ করেছে। গাজার হাসপাতালের হামলার তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করেছে আরব লীগ। সংস্থাটির প্রধান আহমেদ ঘেতি বলেন, বিশ্বনেতাদের অবিলম্বে এ ‘ট্রাজেডি’ বন্ধ করতে হবে।
এ হামলার পর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে জরুরি বৈঠকে বসার অনুরোধ করেছে স্থানীয় সদস্য রাশিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। হাসপাতালে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর এমন হামলাকে ‘যুদ্ধাপরাধ’ হিসেবে বর্ণনা করেছে ফিলিস্তিনের মানবাধিকার সংস্থা আল–মিজান।
গাজার হাসপাতালে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালক তেদরোস আধানম গেব্রেয়াসুস। অবিলম্বে বেসামরিক মানুষের সুরক্ষা নিশ্চিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বানও জানান তিনি।
এ ঘটনাকে ‘ভয়ংকর’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। তিনি বলেন, এটা একেবারে অগ্রহণযোগ্য। হাসপাতালে প্রাণঘাতী হামলার নিন্দা জানিয়েছে ফ্রান্স। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, মানবাধিকবিষয়ক আন্তর্জাতিক আইন সবার জন্য প্রযোজ্য।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গাজার হাসপাতালে ইসরায়েলের বিমান হামলাকে নিরস্ত্র ও অরক্ষিত মানুষের ওপর হামলা বলে নিন্দা করেছে। ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম এই তথ্য সামনে এনেছে।
এছাড়া গাজা শহরের আল-আহলি আরব হাসপাতালে ‘এক হাজারেরও বেশি নিরপরাধ নারী ও শিশুর ওপর গণহত্যা চালানোর’ পর ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আবদুল্লাহিয়ান ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী সাবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
ইসরায়েলের এমন নির্বিচার বোমা বর্ষণকে ‘যুদ্ধাপরাধ’ হিসেবে অভিহিত করেছে হামাস। গাজার শাসকগোষ্ঠীর প্রধান ইসমাইল হানিয়া বলেন, এজন্য যুক্তরাষ্ট্রও দায়ী। ইসরায়েলকে আগ্রাসন চালানোর সুযোগ করে দিয়েছে ওয়াশিংটন।
তবে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর দাবি, গাজার ওই হাসপাতালে তারা হামলা চালায়নি। ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী ইসলামিক জিহাদের নিক্ষেপ করা রকেট সেখানে আঘাত করে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুও একই দাবি করেছেন।