সাউথ আফ্রিকাকে হারিয়ে ইতিহাস গড়লো নেদারল্যান্ডস
- আপডেট সময় : ০৪:৩৫:৫৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৩
- / ৫০৬ বার পড়া হয়েছে
বিশ্বকাপে বড় অঘটন, সাউথ আফ্রিকাকে ৩৮ রানে হারিয়ে ইতিহাস গড়লো নেদারল্যান্ডস। ধর্মশালায় বৃষ্টি বিঘ্নিত ম্যাচে ২৪৬ রানের টার্গেটে ২০৭ রানে অলআউট প্রোটিয়ারা। আফগানিস্তানের কাছে ইংল্যান্ডের হারের পর নেদারল্যান্ডের কাছে সাউথ আফ্রিকার পরাজয় বিশ্বকাপ জমিয়ে দিলো।
একটা-দুটা অঘটন না হলে বিশ্বকাপকে সম্ভবত ঠিক বিশ্বকাপ মনে হয় না। সে ক্ষেত্রে আফগানিস্তান আর নেদারল্যান্ডসের বড় ধন্যবাদ প্রাপ্য। গত পরশু ইংল্যান্ডকে হারিয়ে আফগানিস্তান প্রথম অঘটনের স্বাদ দিয়েছে এবারের বিশ্বকাপকে। আফগান রূপকথার দুদিন না যেতেই বিশ্বকাপ আজ ধর্মশালায় দেখল ডাচ রূপকথা!
ব্যাটিংয়েই অবিশ্বাস্য এক গল্প লিখেছে নেদারল্যান্ডস। বৃষ্টির কারণে ৪৩ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে ২৭ ওভার শেষে তাদের স্কোর ছিল ৬ উইকেটে ১১২। সেখান থেকে শেষ ১৭ ওভারে অধিনায়ক স্কট এডওয়ার্ডের (৬৯ বলে ৭৮) অসাধারণ ইনিংসের পাশাপাশি ফন ডার মারউই ও আরিয়ান দত্তর দুই দুর্দান্ত ক্যামিওতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে দিয়েছে ২৪৬ রানের লক্ষ্য।
এরপর বল হাতে অবিশ্বাসকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে নেদারল্যান্ডস। দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২০৭ রানে অলআউট করে দিয়ে ম্যাচটা জিতে গেছে ৩৮ রানে! তাতে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের সমীকরণও এলোমেলো হয়ে গেছে। দক্ষিণ আফ্রিকার ৩ ম্যাচে হলো ৪ পয়েন্ট, নেদারল্যান্ডসের পয়েন্ট এখন বাংলাদেশ, অস্ট্রেলিয়া, আফগানিস্তান আর ইংল্যান্ডের সমান! শ্রীলঙ্কাই যা এখনো বিশ্বকাপে পয়েন্টহীন থেকে গেল।
নেদারল্যান্ডস ২৪৫ রান তুলে ফেলার পরই অঘটনের আলোচনা শুরু হয়ে গেছে, তবে তা তখনো তেমন গুরুত্ব পায়নি। তার কারণও আছে। একে তো দুই দলের শক্তিতে-অভিজ্ঞতায় মেরু-ব্যবধান, তারওপর আগের দুই ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকা রান তুলেছে ৪২৮ (বিশ্বকাপে রেকর্ড) ও ৩১১। অন্যদিকে নেদারল্যান্ডস প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানকে ২৮৬ রানে আটকে দিলেও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দিয়েছে ৩২২ রান। দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং লাইনআপে ডি কক, মার্করাম, মিলারদের উপস্থিতিও পৌনে ছয় (৫.৭২) আস্কিং রেইটটাকে অত ঝুঁকিপূর্ণ মনে করতে না দেওয়ার আরেক কারণ।
কিন্তু রান করার – বা ঝড় তোলার – জন্য তো তাঁদের ক্রিজে টিকে থাকতে হবে! ফন ডার মারউই, বাস ডে লেইডে, ফন মিকেরেনরা সেটাই হতে দেননি। ডেভিড মিলার (৫২ বলে ৪৩) আর নয় নম্বরে নামা কেশব মহারাজ (৩৭ বলে ৪০) ছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকার কোনো ব্যাটসম্যান ৩০-এর ঘরে যেতে পারেননি। পঞ্চম উইকেটে ক্লাসেনের সঙ্গে মিলারের ৪৫ রানের আর শেষ উইকেটে মহারাজ-এনগিডির ৪১ রানের জুটির বাইরে কোনো জুটিতে ৪০ পেরোয়নি। এর মধ্যে শেষ জুটির আগেই তো সব হিসেব-নিকেশ প্রায় শেষ, জুটিটা শুধু দক্ষিণ আফ্রিকার হারের ব্যবধানই কমিয়েছে!
অষ্টম ওভারের শেষ বলে কুইন্টন ডি ককের বিদায়ে ৩৬ রানে উদ্বোধনী জুটি ভাঙার পর স্কোরবোর্ডে ৪৪ রানে যেতে যেতেই আরও তিন উইকেট হারিয়ে ফেলেছে দক্ষিণ আফ্রিকা – অঘটনের হিসেব-নিকেশ তখন থেকেই জোরেশোরে শুরু হয়ে গেছে। ডেভিড মিলার আর হেনরিখ ক্লাসেনের ব্যাটেই তখন যা অঘটন এড়ানোর আশা ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার। তা আর হলো কই! ২৪তম ওভারে ফন ডার মারউইর বলে লং অনে যখন মিলারের ক্যাচ ফেলেন ডে লেইডে, তখনো মনে হচ্ছিল – দক্ষিণ আফ্রিকা ঘুরে দাঁড়াতেও পারে। ক্যাচ ফসকে উল্টো চার হয়ে যাওয়া মিলারের রান তখন হলো ২৭, দক্ষিণ আফ্রিকার ১০৭/৫। কিন্তু প্রাপ্ত জীবনে খুব বেশিদূর যাওয়া হলো না মিলারের।
এ-ই যখন অবস্থা, ঝড়-টড়ের হিসাব আর কোত্থেকে আসবে! দুই অঙ্কে গেছেন – দক্ষিণ আফ্রিকার এমন ছয় ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ১০০-র ওপর স্ট্রাইক রেইট ছিল শুধু ক্লাসেন (২৮ বলে ২৮) আর শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হওয়া মহারাজের (৩৭ বলে ৪০)।
মহারাজের ইনিংসের গুরুত্ব তো আগেই বলা হলো – দক্ষিণ আফ্রিকার নেট রান রেটে যা সাহায্য করল সেটি।