সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের প্রতিশোধমূলক হামলায় অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় গত ১৩ দিনে নিহত হয়েছেন তিন হাজার ৭৮৫ ফিলিস্তিনি, যাদের অধিকাংশই শিশু ও নারী। নিহতদের মধ্যে এক হাজার ৫২৫ শিশু এবং এক হাজার নারী। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) এ তথ্য জানায়। গাজায় ইসরায়েলি হামলা ১৪তম দিনে গড়িয়েছে।
অপরদিকে, হামাসের হামলায় এক হাজার ৪০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে বলে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এছাড়া ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চল থেকে দুই শত জনের বেশি ইসরায়েলিসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিককে অপহরণ করে হামাস যোদ্ধারা গাজায় জিম্মি করে রেখেছে বলে ইসরায়েল দাবি করছে।
এদিকে, গাজায় জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ১৮ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। ফিলিস্তিনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে আল জাজিরা এ তথ্য জানিয়েছে।
এছাড়া, মধ্য গাজার একটি আবাসিক ভবন এবং একটি গির্জা প্রাঙ্গণে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। আলাদা এ দুটি হামলায় আরও অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছে এবং ৪০ জনের বেশি আহত হয়েছেন।
গাজায় একটি গ্রীক অর্থোডক্স গির্জায় ইসরায়েলি বোমাবর্ষণে নিহতের সংখ্যা বেড়ে আটজনে দাঁড়িয়েছে এবং হামলায় আরও কয়েক ডজন মানুষের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
ফিলিস্তিনি বার্তাসংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, গাজার আল-জায়তুন এলাকায় সেন্ট পোরফিরিয়াস চার্চে হামলায় নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে। ওয়াফা বলছে, নিহত ও আহতের সংখ্যা এখনও বাড়তে পারে।
এদিকে ইসরায়েল গাজায় ‘গণহত্যার’ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে বলে অভিযোগ করেছে ফিলিস্তিনি চার্চ কমিটি। ফিলিস্তিনের হাইয়ার কমিটি ফর চার্চ অ্যাফেয়ার্স-এর প্রধান বলেছেন, গাজায় গ্রীক অর্থোডক্স চার্চের ওপর ইসরায়েলের বোমাবর্ষণের মতো কাণ্ড ‘ফিলিস্তিনি জনগণকে ধ্বংস করার ইসরায়েলি অভিপ্রায়কেই’ তুলে ধরছে।
এদিকে গাজার সেন্ট পোরফিরিয়াস গ্রীক অর্থোডক্স চার্চের প্রাঙ্গনে ইসরায়েলি বোমা হামলার নিন্দা করেছেন রামজি খৌরি। শুক্রবার ভোরে গির্জার অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি বিবৃতিতে এই নিন্দা করেন তিনি। হামলার সময় ওই গির্জায় প্রায় ৫০০ ফিলিস্তিনি মুসলমান এবং খ্রিস্টান আশ্রয় নিয়েছিলেন।
এতে আরও বলা হয়, চার্চের কাউন্সিল ভবনকে লক্ষ্য করে ইসরায়েলি হামলাটি চালানো হয়। বিবৃতিতে জোর দিয়ে বলা হয়েছে, ‘উপাসনালয়ের মতো স্থানগুলোকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো আসলে একটি যুদ্ধাপরাধ এবং যুদ্ধের নামে উপাসনালয়গুলোতে কোনও অবস্থাতেই আক্রমণ করা যাবে না বলে আন্তর্জাতিক আইনেও স্পষ্ট করে দেওয়া আছে।’
শুক্রবার ভোরে দেওয়া এই বিবৃতিতে চার্চের ঐতিহাসিক গুরুত্বও তুলে ধরা হয়েছে।
টিআরটি ওয়ার্ল্ড বলছে, গাজার আল আহলি ব্যাপটিস্ট হাসপাতাল থেকে মাত্র মিটার দূরে এই চার্চটি অবস্থিত। গত মঙ্গলবার রাতে ইসরায়েল ওই হাসপাতালে বোমা বর্ষণের মাধ্যমে ভয়ঙ্কর গণহত্যা চালায়।’
আল জাজিরা বলছে, ইসরায়েলি হামলার শিকার গাজার সেন্ট পোরফিরিয়াস গির্জাটি দুই সপ্তাহ আগে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে খ্রিস্টান এবং মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের ফিলিস্তিনিদের কাছে আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল।
এছাড়া হামলার শিকার গির্জার ভবনটির দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। এটি ১১৫০ সাল ১১৬০ সালের মধ্যে ক্রুসেডারদের মাধ্যমে নির্মিত হয়েছিল এবং গাজার পঞ্চম শতাব্দীর বিশপের নামে নামকরণ করা হয়েছিল।
অন্যদিকে গির্জা কম্পাউন্ডে হামলার কয়েকদিন আগে গ্রীক অর্থোডক্স চার্চের পুরোহিত ফাদার ইলিয়াস ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, ইসরায়েল হয়তো এই গির্জাকে লক্ষ্যবস্তু করতে পারে।
সেসময় তিনি বলেছিলেন, গির্জার ওপর কোনও হামলা হলে তা শুধু ধর্মের ওপরই আক্রমণ হবে না, এটি মানবতার ওপরও আক্রমণ হবে। যা একটি জঘন্য কাজ।’
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাস রকেট হামলা চালানোর পর গাজায় পাল্টা হামলা শুরু করে তেল আবিব। ১৪তম দিনের মতো চলছে এই হামলা। ইতোমধ্যে প্রায় ২৩ লাখ মানুষের বসতি গাজায় বন্ধ করে দেয়া হয় বিদ্যুৎ, পানি, খাবার এবং ওষুধ সুবিধা। ফলে ওই সময়ে থেকেই গাজার বাসিন্দাদের মৌলিক চাহিদা চরম হুমকিতে।