ইসরায়েলের বিরুদ্ধে এক হলেন আরব নেতারা
- আপডেট সময় : ০৩:৩৩:০৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ অক্টোবর ২০২৩
- / ৪২৪ বার পড়া হয়েছে
গাজা উপত্যকায় দুই সপ্তাহ ধরে চলা ইসরায়েলের হামলার নিন্দা জানিয়েছে আরব নেতারা। শনিবার (২১ অক্টোবর) মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং বছরের পর বছর ধরে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে চলা সংঘাত সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন তারা। খবর আরব নিউজ
মিশরের কায়রোতে অনুষ্ঠিত ওই সম্মেলনে জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের হামলার পর বিশ্ব নেতাদের নীরবতার প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে তিনি এ সংকট সমাধানে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, আরব বিশ্ব পশ্চিমাদের কাছ থেকে যে বার্তা শুনতে পাচ্ছে তার অর্থ হলো ইসরায়েলিদের জীবনের থেকে ফিলিস্তিনিদের জীবনের মূল্য কম। এ সময় তিনি গাজায় নিরীহ মানুষকে হত্যা এবং ইসরায়েলের পশ্চিম তীরে চালানো হামাসের হামলায় যারা প্রাণ হারিয়েছে তাদের জন্য শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেন।
জর্ডানের বাদশা তার উদ্বোধনী বক্তৃতায় আরও বলেন, ফিলিস্তিনিদের জোর করে বাস্তুচ্যুত করা যুদ্ধাপরাধের শামিল। ইসরায়েল কর্তৃপক্ষের অবশ্যই ভাবা উচিত একটি রাষ্ট্র ক্রমাগত অন্যায় কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে না। আমরা অবশ্যই ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলে ভবিষ্যত নিরাপত্তা এবং শান্তি চাই।
আব্দুল্লাহ ইসরায়েলের বোমা হামলার সমালোচনা করে বলেছেন, ‘গাজায় অব্যাহত বোমা হামলা সবদিক বিবেচনায় নিষ্ঠুরতা। এটি অবরুদ্ধ ও নিরীহ মানুষের ওপর সামষ্টিক শাস্তি। যা আন্তর্জাতিক আইনের সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন। এটি যুদ্ধাপরাধ। নিষ্ঠুরতার মাত্রা যত ছাড়াচ্ছে বিশ্ব যেন এটির ওপর ততই কম নজর দিচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অন্য কোথাও যদি বেসামরিক অবকাঠামোতে হামলা এবং ইচ্ছাকৃতভাবে মানুষকে ক্ষুধার্ত রাখা, বিদ্যুৎ, পানি ও প্রয়োজনীয় পণ্য থেকে বঞ্চিত করা হতো তাহলে এর নিন্দা জানানো হতো। তাৎক্ষণিকভাবে দোষীদের দায়ী করা হতো। অন্য দ্বন্দ্বগুলোর ক্ষেত্রে এটি করা হয়েছে। কিন্তু গাজার ক্ষেত্রে নয়।’
জর্ডানের বাদশা বলেন, ‘ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের ক্ষুধার্ত রাখছে। কিন্তু গত কয়েক দশক ধরে ফিলিস্তিনিরা স্বাধীনতা, আশা ও ভবিষ্যতের জন্য ক্ষুধার্ত হয়ে আছে।’
‘ইসরায়েলের বোমা হামলা বন্ধ হওয়ার পর তাদের কখনও দায়ী করা হয় না। দখলদারিত্ব ও অবিচার চলতে থাকে এবং পরবর্তী সংঘাত শুরু না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ব দূরে থাকে,’ যোগ করেন তিনি।
জর্ডানের এই বাদশা বলেন, ফিলিস্তিনি সংকটের কোনও রাজনৈতিক সমাধান করতে না পারার কারণেই আজ এই রক্তক্ষরণ দেখা যাচ্ছে।
ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেন, ফিলিস্তনিদেরকে তাদের মাতৃভূমি থেকে বিতাড়িত করা যাবে না। ‘আমরা কখনওই তা ছাড়ব না, আমরা কখনওই তা ছাড়ব না’।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে স্মরণকালের ভয়াবহ হামলা চালায় হামাস। এতে ১৪০০ ইসরায়েলি নিহত হয়।
কায়রো যদিও ইসরায়েল ও গাজার মধ্যে যুদ্ধ বন্ধের উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু এই যুদ্ধ বন্ধে মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউরোপীয় নেতারা একমত হতে পারবে না।
কায়রোতে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে ইসরায়েলকে সমর্থনকারী যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা নেতাদের কেউ উপস্থিত ছিলেন না। এতেই ধারণা করা হচ্ছে এ সম্মেলনের ভবিষ্যত ফলাফল কী হতে পারে।
এমন এক সময়ে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো যখন গাজায় ইসরায়েল স্থল অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। ইতোমধ্যে ইসরায়েলের হামলায় ৪১০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। দেখা দিয়েছে মানবিক বিপর্যয়।
পশ্চিমাদের সমালোচনা করে মিসরের প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাত্তাহ এল-সিসি বলেন, ‘আমরা আজ কায়রোতে মিলিত হয়েছি খুবই কঠিন একটি পরিস্থিতিতে। যেটি আমাদের মানবিকতা এবং মানবিকতার উপর বিশ্বাসের দাবির পরীক্ষা নিচ্ছে।’
মিশরের প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাত্তাহ এল-সিসি কায়রোতে একটি শান্তি সম্মেলনের আয়োজন করেন। এ সম্মেলনে তিনি বিভিন্ন নেতাদের আহ্বান করেন। এ সম্মেলনের মাধ্যমে তিনি মূলত গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য একটি রোডম্যাপ তৈরির আহ্বান জানান। যে রোডম্যাপের মাধ্যমে গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছানো এবং যুদ্ধ বন্ধ হবে।