টানা দু’সপ্তাহের আটকে থাকার পর অবশেষে মিসর সীমান্ত দিয়ে গাজায় প্রবেশ করতে শুরু করেছে ত্রাণবাহী ট্রাক। শনিবার রাফাহ সীমান্ত খুলে দেওয়ার পর এই ট্রাক প্রবেশ করতে দেখা যায়। তবে মোট কয়টি ট্রাক প্রবেশ করবে এবং কতক্ষণ সীমান্ত খোলা থাকবে— এ ব্যাপারে কিছুই জানা যায়নি। তবে সাহায্যের পরিমাণে হতাশ ফিলিস্তিনিরা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (টুইটারের নতুন নাম) এ নিয়ে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরা। তাতে দেখা যায়, ত্রাণবাহী একটি ট্রাক মিসর থেকে গাজা উপত্যকায় প্রবেশ করছে। তাতে কী রয়েছে, তা জানা যায়নি।
রামাল্লার লোকজন বলছেন, রাফাহ ক্রসিং খুলে দেওয়াটা ছিল আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একটি লোক দেখানো প্রক্রিয়া। যেখানে দেখানো হচ্ছে যে তারা গাজার বিষয়ে যত্নশীল।
এর আগে গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের জনসংযোগ বিভাগ থেকে দেওয়া এক বার্তায় এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ‘আজ রাফাহ ক্রসিং দিয়ে ত্রাণ পণ্যবাহী ২০টি ট্রাক প্রবেশের কথা রয়েছে। এসব ট্রাকে ওষুধ, চিকিৎসা সামগ্রী ও সীমিত পরিমাণে ক্যানজাত খাবার রয়েছে।’
শনিবার (২১ অক্টোবর) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার প্রতিবেদক হানি আবু ইশেবা বলেন, গাজার ফিলিস্তিনিরা খুবই হতাশ কারণ সেখানে ১০০টি ট্রাক প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মাত্র ২০টি ট্রাক ঢুকতে দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও জানান, খাবার এবং চিকিৎসা সামগ্রী পাঠানো হলেও নেই কোন জ্বালানি। এরইমধ্যে জ্বালানীর অভাবে ৫টি হাসপাতাল পরিষেবার বাইরে রয়েছে। বাকী দুটি হাসপাতালেও খুবই কম জ্বালানি রয়েছে।
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির নির্বাহী পরিচালক সিন্ডি ম্যাককেইনও জানিয়েছেন, মানবিক সহায়তায় ট্রাক বহর গাজায় প্রবেশকে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে তিনি সতর্ক করেছেন যে ২০টি ট্রাক সাহায্যের জন্য যথেষ্ট নয়।
এদিকে কাতারের হামাদ বিন খলিফা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মার্ক ওয়েন জোনস আল-জাজিরাকে বলেন, যে ২০টি ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করছে তা একদম নগণ্য সংখ্যা।
তিনি আরও বলেন, প্রায় ১ লাখ টন সাহায্য এক সপ্তাহের জন্য অর্ধ মিলিয়ন মানুষকে টিকিয়ে রাখার জন্য যথেষ্ট। গাজায় যদি দুই মিলিয়ন লোক থাকে তবে এ সাহায্য কতদিন চলবে ভেবে দেখার বিষয়।
মার্ক ওয়েন জোনস বলেন, গাজার মজুত ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে। এখন যে সাহায্য যাচ্ছে তা সমুদ্রের মধ্যে একটি ফোঁটা মাত্র।
এদিকে মিসর থেকে ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করলেও কোনো ফিলিস্তিনি যেতে পারছেন না মিসরে।
গাজার নিয়ন্ত্রক গোষ্ঠী হামাসের জনসংযোগ কার্যালয় জানিয়েছে, ‘ত্রাণ বহনকারী যে গাড়িবহরটির আজ গাজায় প্রবেশের কথা ছিল, তাতে মোট ২০টি ট্রাক রয়েছে। এসব ট্রাকে ওষুধ, বিভিন্ন চিকিৎসা সরঞ্জাম ও সামান্য পরিমাণ খাদ্য সহায়তা এসেছে।’
গত বুধবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির সঙ্গে বৈঠকের পর এটা খুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে প্রবেশ করে নজিরবিহীন হামলা চালায় ফিলিস্তিনির স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস। হামাসের হামলার পর পাল্টা হামলা চালায় ইসরায়েল। তাদের হামলায় গাজার হাজার হাজার সাধারণ নাগরিকের মৃত্যু হয়। জাতিসংঘ বলছে, গাজায় বাস্তুচ্যুত হয়েছে প্রায় ১০ লাখ নাগরিক। গাজায় স্থল হামলা করার হুমকি দিয়ে নাগরিকদের সরে যেতে বলেছে ইসরায়েল। এরপর অনেকে মিসর ও গাজার রাফাহ সীমান্তে যেতে শুরু করেছে। অন্য সব সীমান্ত আপাতত বন্ধ করে রেখেছে ইসরায়েল। একমাত্র পথ হিসেবে রাফাহ সীমান্ত রয়েছে গাজাবাসীর জন্য।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে দেশটির বার্তা সংস্থা ওয়াফা নিউজ জানিয়েছে, যুদ্ধের গত ১৪ দিনে এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ২ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও অন্তত সাড়ে ১৩ হাজার।