ছোট্ট ঘোষণায় ফিলিস্তিনের ভূমিতে ইসরাইলের পত্তন
- আপডেট সময় : ০৭:৫৯:০৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২১ অক্টোবর ২০২৩
- / ৪৩৯ বার পড়া হয়েছে
বিংশ শতাব্দীর শুরুতে ফিলিস্তিন ছিলো তুর্কি অটোমান সাম্রাজ্যের অধীনে। এটি মুসলিম, ইহুদী এবং খ্রিস্টান- এই তিন ধর্মের মানুষের কাছেই পবিত্র ভূমি হিসেবে বিবেচিত। সেসময় ইউরোপে বসবাসকারী ইহুদীরা ব্যাপক বিদ্বেষ-নির্যাতনের শিকার হয়েছিল। সেখান থেকেই ‘জিওনিজম’ বা ইহুদীবাদী আন্দোলনের শুরু। তাদের লক্ষ্য ছিল ইউরোপের বাইরে কেবলমাত্র ইহুদীদের জন্য একটি রাষ্ট্রের পত্তন করা।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর তুর্কী অটোমান সাম্রাজ্য কার্যত ভেঙ্গে পড়ে। তখন যে ‘লিগ অব নেশন’ গঠিত হয়েছিল, সেই বিশ্ব সংস্থার পক্ষ থেকে ব্রিটেনকে ফিলিস্তিন শাসন করার ক্ষমতা দেয়া হয়। এদিকে সেসময় জার্মানিতে ইহুদীদের ওপর নিপীড়ন বাড়ছিলো। ১৯১৭ সালে ব্রিটেন ইহুদীদের জন্য একটি পৃথক রাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বেলফোর ঘোষণা প্রকাশ করেন। মাত্র ৬৭ শব্দের এই ঘোষণা মাধ্যমে ফিলিস্তিনের ভূমিতে ইহুদিদের জন্য একটি ‘জাতীয় আবাসভূমি’ প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। সেই সাথে বলা হয়, সেখানে বসবাসরত অন্যান্য জাতির ধর্মীয় ও নাগরিক অধিকার ক্ষুন্ন করা হবে না। বেলফোর ঘোষণার ভাষা খুবই অস্পষ্ট। ধারণা করা হয়, ইচ্ছাকৃতভাবেই এর ভাষাকে অস্পষ্ট রাখা হয়েছিল। এতে স্পষ্ট করে ইহুদি রাষ্ট্র গঠনের কথা বলা হয়নি, বরং ‘জাতীয় আবাসভূমি’ শব্দগুলো ব্যবহার করা হয়েছে।
এদিকে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে লাখ লাখ ইহুদী নিহত হলে তাদের জন্য একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় চাপ বাড়তে থাকে। ব্রিটিশ ম্যান্ডেটের অধীনে থাকা অঞ্চলটি তখন ফিলিস্তিনি আর ইহুদীদের মধ্যে ভাগ করার সিদ্ধান্ত নেয় লিগ অব নেশনস। এই সিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই ১৯৪৮ সালের ১৪ই মে প্রতিষ্ঠিত হয় ইসরাইল। ইহুদিরা মোট ভূখণ্ডের ১০ শতাংশের মালিক হলেও তাদের দেয়া হয় মোট জমির অর্ধেক। কিন্তু আরবদের জনসংখ্যা এবং জমির মালিকানা ছিল ইসরাইলিদের দ্বিগুণ। স্বভাবতই আরবরা এ সিদ্ধান্ত মেনে নেয়নি। তারা জাতিসংঘের এ সিদ্ধান্ত খারিজ করে দেয়।
আর তাই পরদিনই মিশর, জর্ডান, সিরিয়া এবং ইরাক মিলে অভিযান চালায় ব্রিটিশ ম্যান্ডেটের অধীনে থাকা অঞ্চলটিতে। সেটাই ছিল প্রথম আরব-ইসরাইল যুদ্ধ। ইহুদীদের কাছে এটি স্বাধীনতার যুদ্ধ হিসেবে পরিচিত। জাতিসংঘ প্যালেস্টাইনে আরবদের জন্য যে অঞ্চলটি বরাদ্দ করেছিল, এই যুদ্ধের পর তার অর্ধেকটাই চলে যায় ইসরাইল বা ইহুদীদের দখলে।
সেখান থেকেই শুরু হয় ফিলিস্তিনের জাতীয় বিপর্যয়, দীর্ঘমেয়াদী সংঘাতের সূচনা। সেসময় প্রায় সাড়ে সাত লাখ ফিলিস্তিনি প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশ্রয় নেয়।