০৭:৫২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কাছাকাছি গভীর নিম্নচাপ, আঘাত হানবে ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’

বঙ্গোপসাগরে চলছে ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রস্তুতি। লঘুচাপ রূপ নিচ্ছে নিম্নচাপে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, এ সপ্তাহ শেষ নাগাদ ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানতে পারে দেশের উপকূলীয় বিভাগ খুলনা ও বরিশালের কয়েকটি জেলায়। ঝড়টির তীব্রতা সাধারণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও চিংড়ি চাষিদের বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

হেমন্তের শুরুতেই হঠাৎ উত্তাল বঙ্গোপসাগর। আবহাওয়া পূর্বাভাসেও মিলল অশনিসংকেত। সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ রূপ নিতে পারে নিম্নচাপে। যার প্রভাবে ভিজবে দেশের উত্তর-পূর্বাংশ। উপকূলে জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কার কথাও জানালেন আবহাওয়া গবেষকরা।

অন্যদিকে পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি সামান্য উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। নিম্নচাপটি আরও ঘনীভূত হয়ে বাংলাদেশে উপকূলের দিকে অগ্রসর হতে পারে। আজ সোমবার আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তি (৫) এসব তথ্য জানিয়েছে সংস্থাটি।

আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশীদ স্বাক্ষরিত এই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আজ সোমবার সকাল ৬টার দিকে গভীর নিম্নচাপটি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৪০ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৮০০ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭১০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭১০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল।

গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটারের এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার। যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকার সাগর উত্তাল রয়েছে।

সেজন্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরসমূহকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমুকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।

সাধারণত অক্টোবর ঘূর্ণিঝড়প্রবণ মাস। এই সময়ে কোনো নিম্নচাপ হলে তা সাধারণত ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়। যদি এই গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয় তাহলে সেটির নাম হবে ‘হামুন’।

এদিকে আরব সাগরে একটি গভীর নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড় ‘তেজ’-এ পরিণত হতে পারে। যদি এটিও ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয় তাহলে ‘তেজ’ বা ‘হামুন’ যেকোনো একটি শক্তিশালী হবে।

কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, ২৪, ২৫, ২৬ এবং এর পরবর্তী ৩ দিন খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, ঢাকা ও সিলেট বিভাগে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট এবং বরিশাল বিভাগের বরগুনা-এসব উপকূলীয় এলাকায় জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ থেকে ৫ ফুট, কোনও কোনও স্থানে ৭ ফুট পর্যন্ত হতে পারে।

এ দুর্যোগ থেকে আগাম শীতকালিন সবজি খেত রক্ষায় কৃষকদের বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ উদ্যানতত্ত্ববিদ ড. জসিম উদ্দিনের। তিনি বলেন, প্রথম কাজ হবে নিষ্কাশন ব্যবস্থা করা। পরে পানি সরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে। যাতে গোড়া পচা রোগ না হয়। মাচা শক্ত করে বেঁধে রাখতে হবে। যেন ঘূর্ণিঝড়ের বাতাসে তা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। পেঁপে ও কলাগাছে খুঁটি দিয়ে রাখতে হবে। যাতে ভেঙে না যায়।

ক্ষতির মুখে পড়তে পারে উপকূলীয় চিংড়ি ঘের ও মৎস্য সম্পদ। তাই লোকসান ঠেকাতে চাষিদের নিতে হবে বিশেষ ব্যবস্থা। মৎস্য সম্পদ বিশেষজ্ঞ ড. খন্দকার আনিছুল হক বলেন, একটা পথ হলো নেট দিয়ে ঘিরে রাখা। দ্বিতীয়ত, খাবার বেশি দিতে হবে। কারণ, মাছ খেতে পেলে অন্য জায়গায় যায় না। লোনা পানি ঢুকে যেতে পারে। এটি চিংড়ির জন্য উপযুক্ত নয়। ফলে সেটা বের করে স্বাদু পানি ঢোকাতে হবে।

উল্লেখ্য, নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিলে এর নাম হবে ‘হামুন’। নামটি দিয়েছে ইরান।

কাছাকাছি গভীর নিম্নচাপ, আঘাত হানবে ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’

আপডেট : ০৬:৩৪:৫৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৩

বঙ্গোপসাগরে চলছে ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রস্তুতি। লঘুচাপ রূপ নিচ্ছে নিম্নচাপে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, এ সপ্তাহ শেষ নাগাদ ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানতে পারে দেশের উপকূলীয় বিভাগ খুলনা ও বরিশালের কয়েকটি জেলায়। ঝড়টির তীব্রতা সাধারণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও চিংড়ি চাষিদের বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

হেমন্তের শুরুতেই হঠাৎ উত্তাল বঙ্গোপসাগর। আবহাওয়া পূর্বাভাসেও মিলল অশনিসংকেত। সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ রূপ নিতে পারে নিম্নচাপে। যার প্রভাবে ভিজবে দেশের উত্তর-পূর্বাংশ। উপকূলে জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কার কথাও জানালেন আবহাওয়া গবেষকরা।

অন্যদিকে পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি সামান্য উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। নিম্নচাপটি আরও ঘনীভূত হয়ে বাংলাদেশে উপকূলের দিকে অগ্রসর হতে পারে। আজ সোমবার আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তি (৫) এসব তথ্য জানিয়েছে সংস্থাটি।

আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশীদ স্বাক্ষরিত এই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আজ সোমবার সকাল ৬টার দিকে গভীর নিম্নচাপটি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৪০ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৮০০ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭১০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭১০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল।

গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটারের এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার। যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকার সাগর উত্তাল রয়েছে।

সেজন্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরসমূহকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমুকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।

সাধারণত অক্টোবর ঘূর্ণিঝড়প্রবণ মাস। এই সময়ে কোনো নিম্নচাপ হলে তা সাধারণত ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়। যদি এই গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয় তাহলে সেটির নাম হবে ‘হামুন’।

এদিকে আরব সাগরে একটি গভীর নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড় ‘তেজ’-এ পরিণত হতে পারে। যদি এটিও ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয় তাহলে ‘তেজ’ বা ‘হামুন’ যেকোনো একটি শক্তিশালী হবে।

কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, ২৪, ২৫, ২৬ এবং এর পরবর্তী ৩ দিন খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, ঢাকা ও সিলেট বিভাগে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট এবং বরিশাল বিভাগের বরগুনা-এসব উপকূলীয় এলাকায় জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ থেকে ৫ ফুট, কোনও কোনও স্থানে ৭ ফুট পর্যন্ত হতে পারে।

এ দুর্যোগ থেকে আগাম শীতকালিন সবজি খেত রক্ষায় কৃষকদের বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ উদ্যানতত্ত্ববিদ ড. জসিম উদ্দিনের। তিনি বলেন, প্রথম কাজ হবে নিষ্কাশন ব্যবস্থা করা। পরে পানি সরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে। যাতে গোড়া পচা রোগ না হয়। মাচা শক্ত করে বেঁধে রাখতে হবে। যেন ঘূর্ণিঝড়ের বাতাসে তা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। পেঁপে ও কলাগাছে খুঁটি দিয়ে রাখতে হবে। যাতে ভেঙে না যায়।

ক্ষতির মুখে পড়তে পারে উপকূলীয় চিংড়ি ঘের ও মৎস্য সম্পদ। তাই লোকসান ঠেকাতে চাষিদের নিতে হবে বিশেষ ব্যবস্থা। মৎস্য সম্পদ বিশেষজ্ঞ ড. খন্দকার আনিছুল হক বলেন, একটা পথ হলো নেট দিয়ে ঘিরে রাখা। দ্বিতীয়ত, খাবার বেশি দিতে হবে। কারণ, মাছ খেতে পেলে অন্য জায়গায় যায় না। লোনা পানি ঢুকে যেতে পারে। এটি চিংড়ির জন্য উপযুক্ত নয়। ফলে সেটা বের করে স্বাদু পানি ঢোকাতে হবে।

উল্লেখ্য, নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিলে এর নাম হবে ‘হামুন’। নামটি দিয়েছে ইরান।