বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিন্মচাপ ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাবে লণ্ডভণ্ড কক্সবাজার। এটি আরও উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে কুতুবদিয়ার কাছ দিয়ে পরবর্তী চার থেকে ছয় ঘণ্টার মধ্যে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম শেষ করতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এর প্রভাবে শুরু হয়েছে ঝড়ের তাণ্ডব। কাঁচা ও আধা কাঁচা ঘরবাড়ির চাল উড়ে গেছে, ভেঙে পড়েছে অনেক ঘরের দেওয়াল, উপড়ে গেছে গাছপালা। সৃষ্ট ঝড়ে মাটি চাপা পড়ে কক্সবাজার একজন এবং গাছ চাপা পড়ে মহেশখালীতে একজনের মত্যু হয়েছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে নিহতদের নাম-ঠিকানা পাওয়া যায়নি।
মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) রাতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালকের পক্ষে আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক আজ মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) ১৪ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানান।
এর আগে হামুনের প্রভাবে সকাল থেকেই কক্সবাজারে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। সন্ধ্যা ৭টা থেকে ভারী বৃষ্টি ও বাতাস শুরু হয়। এতে গাছপালা উপড়ে ও ডালপালা ভেঙে পড়তে থাকে। এরপরই বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে পুরো জেলা।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ এর কারণে কক্সবাজারে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। সর্তকর্তা জারি করে করা হয়েছে মাইকিং।
ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ কিছুটা দুর্বল হয়ে ইতোমধ্যে এর মূল অংশ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করছে। এটি আরও দুর্বল হয়ে আগামী ৮-১০ ঘণ্টার মধ্যে উত্তরপূর্ব দিকে দিয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূল অগ্রসর হয়ে কুতুবদিয়ার কাছ দিয়ে ভোরে বাংলাদেশ অতিক্রম করতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১২০ কিমি; যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া আকারে ১৩০ কিমি পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে পাঁচ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো সাত নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
বিজ্ঞপ্তি আরও বলছে, ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চাল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে দুই-তিন ফুট অধিক উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছাসে প্লাবিত হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে। ভারি বর্ষণের প্রভাবে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধ্বস হতে পারে।
উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
এদিকে, কক্সবাজার শহরের সাত নম্বর ওয়ার্ডে বাড়ির দেওয়ালচাপায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত (রাত ১১টা ২৬) দুজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার পৌর মেয়র মাহবুবুর রহমান। এ ছাড়া দেওয়ালচাপা ও গাছপালা পড়ে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। সন্ধ্যার পর থেকে শহর ও আশপাশের এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান জানিয়েছেন ঘূর্ণিঝড় হামুনে সৃষ্ট ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টিতে জেলায় কাঁচা ঘরবাড়ি ও গাছপালার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কক্সবাজার শহরের সমিতিপাড়া কুতুবদিয়াপাড়াসহ জেলার উপকূল এলাকায় ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আগামীকাল ঘূর্ণিঝড় হামুনের আঘাতে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া সম্ভব বলে জানিয়েছেন তিনি।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ ইমাম উদ্দিন জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় হামুন আজ সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করতে শুরু করে। ঘূর্ণিঝড় হামুন সাগরে গতিপথ পরিবর্তন করে এটি কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সমুদ্র উপকূলের দিকে যেতে শুরু করে। পরে কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ছয় নম্বরের পরিবর্তে সাত নম্বর বিপদ সংকেত জারি করে আবহাওয়া অফিস। ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাবে কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে ঝড়ো হাওয়া ও বজ্রসহ বৃষ্টি হয়। রাত ১০টার পর থেকে ঘূর্ণিঝড় আমুন কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করে তা দুর্বল হয়ে যায়। এর প্রভাবে কক্সবাজার উপকূলে ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে।
ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় কক্সবাজারে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়। কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বিভীষণ কান্তি দাস জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সৈকতে বিপদ সংকেতের অংশ হিসেবে পর্যটকদের সতর্কতা হিসেবে মাইকিং করা হয়। এ ছাড়া সৈকতে দায়িত্বরত লাইফ গার্ডকর্মীরা পর্যটকদের নিরাপদে থাকতে মাইকিং করে। উপকূলীয় এলাকার ৩০ হাজার মানুষ সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নিয়েছে।