ক্রিজে যখন নামছেন, ৩৯ ওভার শেষে অস্ট্রেলিয়ার রান ২৬৬। সেখান থেকে কী বিধ্বংসী ব্যাটিংটাই না করলেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল! অস্ট্রেলিয়া তাঁর কাছ থেকে যা চায়, সেই ব্যাটিংটাই আজ দিল্লিতে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে করেছেন 'ম্যাক্সি!'
যেমন নির্দয়ভাবে পিটিয়েছেন ডাচ বোলারদের, সেটির সঙ্গে শুধু তুলনা হতে পারে ধোপা বাড়িতে কাপড়কে যেভাবে আছড়ানো হয় সেটিরই। ৪০ বলে সেঞ্চুরি করেছেন ম্যাক্সওয়েল - বিশ্বকাপে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড। শেষ পর্যন্ত শেষ ওভারে আউট হওয়ার আগে ৪৪ বলে ৯ চার ও ৮ ছক্কায় করেছেন ১০৬ রান।
ম্যাক্সওয়েলের এই বিধ্বংসী পিটুনিতেই শেষ পর্যন্ত ৮ উইকেটে ৩৯৯ রান করেছে অস্ট্রেলিয়া। ডেভিড ওয়ার্নার টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরি তুলে ৯৩ বলে ১০৪ রান করেছেন, স্টিভ স্মিথ (৬৮ বলে ৭১) আর মারনাস লাবুশেনও (৪৭ বলে ৬২) ফিফটি পেয়েছেন। কিন্তু ম্যাক্সওয়েলের পিটুনির পর বাকি সবকিছুকে মনে হচ্ছে অনেক দূরের গল্প।
সবচেয়ে বেশি পিটুনিটা খেয়েছেন বাস ডে লেইডে, ১০ ওভারে ২ উইকেট নিলেও বেচারা দিয়েছেন ১১৫ রান - ওয়ানডেতে কোনো বোলারের ১০ ওভারে সবচেয়ে বেশি রান খরচের রেকর্ড। নেদারল্যান্ডসের সাত বোলারের মধ্যে ৫ জন ওভারপ্রতি ৬-৭-৮-এর ওপরে রান দিয়েছেন, এর মধ্যে কলিন অ্যাকারমান ৪ ওভারে মাত্র ১৯ রান দিয়ে কীভাবে বেঁচে গেলেন, সেটা একটা আশ্চর্য বটে!
ইনিংসের শুরু থেকে অস্ট্রেলিয়া যেভাবে ব্যাটিং করেছে, তাতে মনে হচ্ছিল হয়তো ৩০০-৩২০, খুব বেশি হলে ৩৫০ রানের মতো করবে। মিচেল মার্শ (৯) চতুর্থ ওভারে দলকে ২৮ রানে রেখে আউট হলেও এরপর 'ডাচ ডিলাইটে'র আর সুযোগ এল না। দ্বিতীয় উইকেটে স্মিথ আর ওয়ার্নার যে গড়লেন ১১৮ বলে ১৩২ রানের জুটি। শেষ পর্যন্ত আরিয়ান দত্তর বলে ফন ডার মারউইর ক্যাচ হয়ে স্মিথ ফিরতে ভাঙে সে জুটি।
কিন্তু ওয়ার্নার আবার ডাচদের হতাশ করলেন লাবুশেনের সঙ্গে জুটিতে। বিশ্বকাপে এর আগ পর্যন্ত সেভাবে জ্বলে উঠতে না পারা লাবুশেন আজ ছন্দ খুঁজে পেয়েছেন। ৩৭তম ওভারে ডে লেইডের বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে ৪৭ বলের ইনিংসটা সাজিয়েছেন ৭ চার ও ২ ছক্কায়, করলেন ৬২ রান। তৃতীয় উইকেটে ওয়ার্নারের সঙ্গে মিলে অস্ট্রেলিয়াকে দিয়ে গেলেন ৭৬ বলে ৮৪ রানের জুটি।
জস ইংলিশ (১২ বলে ১৪) এলেন আর গেলেন। এর মধ্যে অন্যপ্রান্তে দাঁড়িয়ে শুধু ডেভিড ওয়ার্নারের সেঞ্চুরিটা পূর্ণ হতে দেখেছেন (৯১ বলে, ১১ চার ও ৩ ছক্কায়), এই যা! তাঁকেও ফেরালেন ডে লেইডে।
তখন কী নেদারল্যান্ডস এবং ডে লেইডে জানতেন, কী অপেক্ষা করছে তাঁদের জন্য!
ম্যাক্সওয়েল ক্রিজে যাওয়ার পরই ৪০তম ওভারের প্রথম বলে ফন বিকের বলে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন ওয়ার্নার। ক্যামেরন গ্রিনকে নিয়ে তাই শুরু হলো ম্যাক্সওয়েলের যাত্রা। শেষ ৬৫ বলে যত বেশি রান করতে পারেন, সেটাই চ্যালেঞ্জ!
গ্রিন ৪৩তম ওভারে রানআউট হয়ে গেলেও (১১ বলে ৮) ম্যাক্সওয়েল অ্যাসাইনমেন্টটা পালন করে গেলেন দারুণভাবে। ২৭ বলে পেয়ে গেছেন ফিফটি (৬ চার ও ২ ছক্কায়), সে পথে অস্ট্রেলিয়াকে ৩০০ পার করালেন ৪৪তম ওভারের প্রথম বলে। এরপর আরও ভয়ংকর ম্যাক্সি!
ইনিংসের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বলে ডে লেইডে দারুণ দুই শটে দুই চার মেরেছিলেন, এরপর ৪৫তম ওভারের আগ পর্যন্ত ম্যাক্সওয়েলের ব্যাটে বাউন্ডারি বলতে শুধু ৩টি চার। ৪৬তম ওভারে ফন মিকেরেনকে টানা দুই বলে চার ও ছক্কা মেরে ফিফটিতে পৌঁছেছেন। এরপর? ঝড়!
৪৭তম ওভারে ডে লেইডেকে দুই ছক্কা, ৪৮তম ওভারে ফন বিককেও তা-ই। ৪৯তম ওভারে তো ডে লেইডেকে চোখে অন্ধকার দেখিয়েছেন, ওভারের প্রথম চার বলের দুটিতে চার, এরপরের দুটি ছক্কা! পঞ্চম বলটি ডে লেইডে করলেন নো, সেটিতেও আরেক ছক্কা! এবং তাতে রেকর্ড গড়া সেঞ্চুরি! বিশ্বকাপে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ডটা কদিন আগে ভেঙেছিলেন এইডেন মার্করাম (৪৯ বলে), ম্যাক্সওয়েল করে ফেললেন ৪০ বলেই!
৪৭তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ফিফটিতে পৌঁছেছেন, ৪৮তম ওভারের চতুর্থ বলে সেঞ্চুরি! সেঞ্চুরির পর থেকে শেষ ওভারের তৃতীয় বলে আউট হওয়ার আগে যে ৪ বলে মাত্র একটা চার মেরেছেন, ৫ রান নিয়েছেন, এটাই বরং আশ্চর্য!
সংক্ষিপ্ত স্কোর
অস্ট্রেলিয়া : ৫০ ওভারে ৩৯৯/৮। (মার্শ ৯, ওয়ার্নার ১০৪, স্মিথ ৭১, লাবুশেন ৬২, ইংলিশ ১৪, ম্যাক্সওয়েল ১০৬, গ্রিন ৮, স্টার্ক ০, কামিন্স ১২*, জাম্পা ১* ; আরিয়ান ৭-০-৫৯-১, অ্যাকারম্যান ৪-০-১৯-০, ফন বিক ১০-০-৭৪-৪ , ফন মিকেরেন ১০-০-৬৪-০, বিক্রমজিৎ ৪-০-২৭-০, ফর মারউই ৫-০-৪১-০, ডি লিড ১০-০-১১৫-২)
নেদারল্যান্ডস : ২১ ওভারে ৯০/১০। (বিক্রম ২৫, দোদ ৬, অ্যাকারম্যান ১০, সাইব্র্যান্ড ১১, ডি লিড ৪, এডওয়ার্ডস ১২*, তেজা ১৪, ফন বিক ০, ফর মারউই ০, আরিয়ান ১, ফন মিকিরেন ০; স্টার্ক ৪-০-২২-১, হ্যাজেলউড ৬-০-২৭-১, কামিন্স ৪-০-১৪-১, মার্শ ৪-০-১৯-২, জাম্পা ৩-০-৮-৪)
ফল : অস্ট্রেলিয়া ৩০৯ রানে জয়ী।