০২:০৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আগামীকাল টানেল যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ

উদ্বোধনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল। প্রায় সাড়ে চার বছরের নির্মাণযজ্ঞ শেষ। এখন উদ্বোধনের প্রস্তুতি হিসেবে সাজসজ্জার কাজও শেষ। আগামীকাল ২৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন এই টানেলের। এরপর ২৯ অক্টোবর সাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হবে টানেলটি।

চট্টগ্রাম মহানগরী ঘিরে আউটার রিং রোড, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেরিন ড্রাইভ সড়ক ও ফ্লাইওভারসহ নানা রকম উন্নয়ন কাজে বদলে গেছে চট্টগ্রামের সড়ক যোগাযোগের চিত্র। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ার পাশাপাশি যানজট কমাতেও সহায়ক হয়েছে। এছাড়া বর্তমান সরকারের গত তিন মেয়াদে চট্টগ্রাম বন্দরের আধুনিকায়ন, ওয়াসার পানি সরবরাহ সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ বেড়েছে বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড।

কর্ণফুলি নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মিত এ টানেল শুধু বাংলাদেশে নয়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রথম। টানেলটি চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা ও দক্ষিণের আনোয়ারা প্রান্তকে যুক্ত করেছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে ভেতরে ঢুকতে দেয়া হয় গণমাধ্যমকর্মীদের। ৬০ কিলোমিটার গতিতে টানেলটি পার হতে সময় লাগে ৩ মিনিট। ১১ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পটিতে চীনের এক্সিম ব্যাংকের ঋণ প্রায় ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা। বাকি টাকা সরকারের।

এরইমধ্যে টানেলের পরিচালনা প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। প্রাথমিকভাবে পাঁচ বছরের জন্য এ চুক্তি করা হয়েছে। ধাপে ধাপে টানেলটির দায়িত্ব নেবে বাংলাদেশ।

টানেলের প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশিদ বলেন, প্রথম পাঁচ বছর চায়নার একটা কোম্পানি টানেল পরিচালনা করবেন। এরই মধ্যে তাঁদের সঙ্গে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের একটি চুক্তি হয়েছে।

খরস্রোতা কর্ণফুলির তলদেশ দিয়ে এমন অবকাঠামোকে দেশের সামর্থ্যের অনন্য উদাহরণ বলছেন সংশ্লিষ্টরা। এর মাধ্যমে দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে অর্থনীতির নতুন দিগন্ত খুলতে যাচ্ছে ।

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, ‘আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশগুলো যেমন মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা, সিঙ্গাপুর হয়ে আমাদের যে যাতায়াত করতে হতো সে সময়টি বেঁচে যাবে। এতে আমদানি-রপ্তানিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব পড়বে এবং জিডিপিতে বড় অবদান থাকবে।’

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের দুটি টিউব। দক্ষিণ পাশের টিউব দিয়ে আনোয়ারা থেকে পতেঙ্গামুখী যান চলাচল করবে। আর উত্তরের টিউব দিয়ে পতেঙ্গা থেকে আনোয়ারা মুখী যান চলাচল করবে।

টানেল টিউবের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। টিউবের ভেতরের ব্যাস ১০ দশমিক ৮০ মিটার। টিউবসহ মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর বন্দর নগরী চট্টগ্রামের উন্নয়নে বিভিন্ন প্রকল্প নেয়া হয়। এসব প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে দেশের প্রথম সুরঙ্গপথ বা টানেল নির্মাণ, বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর, কোরিয়ান ইপিজেড, চায়না ইকোনমিক জোন, মহেশখালী এলএনজি টার্মিনাল ও গভীর সমুদ্রবন্দর, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্প, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কপথ চার লেনে করা, চট্টগ্রাম শহরের লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত দীর্ঘ ফ্লাইওভার এবং চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি, টার্মিনাল, বে-টার্মিনাল নির্মাণ।

এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ায় চট্টগ্রামের সাথে শুধু দেশের নয় সারাবিশ্বের যোগাযোগ সহজ হয়েছে। বন্দরে উন্নয়নে গতি পেয়েছে আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্টিজের ওমর হাজ্জাজ ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান চট্টগ্রাম ঘিরে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধা ভোগ করছেন বলে জানান।

আগামী শনবিার চট্টগ্রামে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরে বঙ্গবন্ধু টানেল, মুসলিম ইনস্টিটিউট সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স, সিটি করপোরেশন নির্মিত শেখ হাসিনা সড়ক, পটিয়ায় শেখ কামাল অডিটোরিয়াম ও মাল্টিপারপাস হলসহ ২০টি প্রকল্প উদ্বোধন করার কথা রয়েছে।

আগামীকাল টানেল যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ

আপডেট : ০৬:৩১:১৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৩

উদ্বোধনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল। প্রায় সাড়ে চার বছরের নির্মাণযজ্ঞ শেষ। এখন উদ্বোধনের প্রস্তুতি হিসেবে সাজসজ্জার কাজও শেষ। আগামীকাল ২৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন এই টানেলের। এরপর ২৯ অক্টোবর সাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হবে টানেলটি।

চট্টগ্রাম মহানগরী ঘিরে আউটার রিং রোড, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেরিন ড্রাইভ সড়ক ও ফ্লাইওভারসহ নানা রকম উন্নয়ন কাজে বদলে গেছে চট্টগ্রামের সড়ক যোগাযোগের চিত্র। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ার পাশাপাশি যানজট কমাতেও সহায়ক হয়েছে। এছাড়া বর্তমান সরকারের গত তিন মেয়াদে চট্টগ্রাম বন্দরের আধুনিকায়ন, ওয়াসার পানি সরবরাহ সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ বেড়েছে বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড।

কর্ণফুলি নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মিত এ টানেল শুধু বাংলাদেশে নয়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রথম। টানেলটি চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা ও দক্ষিণের আনোয়ারা প্রান্তকে যুক্ত করেছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে ভেতরে ঢুকতে দেয়া হয় গণমাধ্যমকর্মীদের। ৬০ কিলোমিটার গতিতে টানেলটি পার হতে সময় লাগে ৩ মিনিট। ১১ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পটিতে চীনের এক্সিম ব্যাংকের ঋণ প্রায় ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা। বাকি টাকা সরকারের।

এরইমধ্যে টানেলের পরিচালনা প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। প্রাথমিকভাবে পাঁচ বছরের জন্য এ চুক্তি করা হয়েছে। ধাপে ধাপে টানেলটির দায়িত্ব নেবে বাংলাদেশ।

টানেলের প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশিদ বলেন, প্রথম পাঁচ বছর চায়নার একটা কোম্পানি টানেল পরিচালনা করবেন। এরই মধ্যে তাঁদের সঙ্গে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের একটি চুক্তি হয়েছে।

খরস্রোতা কর্ণফুলির তলদেশ দিয়ে এমন অবকাঠামোকে দেশের সামর্থ্যের অনন্য উদাহরণ বলছেন সংশ্লিষ্টরা। এর মাধ্যমে দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে অর্থনীতির নতুন দিগন্ত খুলতে যাচ্ছে ।

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, ‘আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশগুলো যেমন মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা, সিঙ্গাপুর হয়ে আমাদের যে যাতায়াত করতে হতো সে সময়টি বেঁচে যাবে। এতে আমদানি-রপ্তানিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব পড়বে এবং জিডিপিতে বড় অবদান থাকবে।’

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের দুটি টিউব। দক্ষিণ পাশের টিউব দিয়ে আনোয়ারা থেকে পতেঙ্গামুখী যান চলাচল করবে। আর উত্তরের টিউব দিয়ে পতেঙ্গা থেকে আনোয়ারা মুখী যান চলাচল করবে।

টানেল টিউবের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। টিউবের ভেতরের ব্যাস ১০ দশমিক ৮০ মিটার। টিউবসহ মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর বন্দর নগরী চট্টগ্রামের উন্নয়নে বিভিন্ন প্রকল্প নেয়া হয়। এসব প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে দেশের প্রথম সুরঙ্গপথ বা টানেল নির্মাণ, বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর, কোরিয়ান ইপিজেড, চায়না ইকোনমিক জোন, মহেশখালী এলএনজি টার্মিনাল ও গভীর সমুদ্রবন্দর, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্প, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কপথ চার লেনে করা, চট্টগ্রাম শহরের লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত দীর্ঘ ফ্লাইওভার এবং চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি, টার্মিনাল, বে-টার্মিনাল নির্মাণ।

এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ায় চট্টগ্রামের সাথে শুধু দেশের নয় সারাবিশ্বের যোগাযোগ সহজ হয়েছে। বন্দরে উন্নয়নে গতি পেয়েছে আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্টিজের ওমর হাজ্জাজ ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান চট্টগ্রাম ঘিরে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধা ভোগ করছেন বলে জানান।

আগামী শনবিার চট্টগ্রামে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরে বঙ্গবন্ধু টানেল, মুসলিম ইনস্টিটিউট সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স, সিটি করপোরেশন নির্মিত শেখ হাসিনা সড়ক, পটিয়ায় শেখ কামাল অডিটোরিয়াম ও মাল্টিপারপাস হলসহ ২০টি প্রকল্প উদ্বোধন করার কথা রয়েছে।