আগামীকাল ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ বিএনপি শান্তিপূর্ণ করতে চায় বলে জানিয়েছে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এসময় তিনি অভিযোগ করেন, শনিবারের সমাবেশকে ঘিরে অসংখ্য নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির ডাকা জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ভোটের অধিকার, মৌলিক অধিকার রক্ষায় দেশের সবার প্রতি উদাত্ত আহ্বান, মহাসমাবেশে যোগ দিয়ে সরকারকে না বলে দিন।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার ১৫ বছরে পুরো রাষ্ট্র কাঠামো দলীয়করণ করে জোর করে ক্ষমতায় বসে আছে। গত দুটি নির্বাচন প্রহসনে পরিণত করে বেআইনিভাবে ক্ষমতায় বসে আছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সরকার ক্ষমতায় থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। রাষ্ট্রের সব সংকট নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। জনগণের সরকার গঠন না হলে দেশের অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক সংকটের নিরসন সম্ভব হবে না।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়ে সরকারের পদত্যাগ চেয়ে এক দফা দাবি তুলে ধরেছে। এ পর্যন্ত বিএনপি যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলোকে নিয়ে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে আসছে।’
সরকার প্রতি পদে পদে রাষ্ট্রীয় যন্ত্র ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে বাধা দিয়ে এসেছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘মহাসমাবেশের উদ্দেশ্য সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা, নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘কমিশন বলছে পরিবেশ নেই, এরপরও তারা নির্বাচন করার কথা বলছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নিরপেক্ষ, নির্দলীয় সরকার প্রয়োজন। এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে ভোটাররা ভোট দিতে যায় না। অথচ, সরকার চায় একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে আবারও ক্ষমতায় যেতে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা বললেও প্রতিদিন সরকারের দমন-নিপীড়ন বেড়েই চলেছে। নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করছে। বিরোধীদলের নেতারা যাতে নির্বাচন করতে না পারেন, সেজন্য সাজা দিচ্ছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সরকারের দমননীতি চালিয়ে জোর করে নির্বাচনের চেষ্টা প্রহসন, তামাশা ছাড়া কিছু নয়। এই দেশের মানুষ নিরপেক্ষ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে ছাড়া কোনো নির্বাচন হতে দেবে না।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে বহু নেতাকর্মী গ্রেপ্তার করা হয়েছে, অবিলম্বে তাদের মুক্তি দাবি করছি। শুধু ঢাকা নয়, সারা দেশে গ্রেপ্তার চালাচ্ছে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘সরকারের সত্যিকার অর্থে নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো ইচ্ছে নেই। আবারও একতরফা নির্বাচনের জন্য সরকার সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। এবার আর সেটা সম্ভব হবে না। অত্যাচার-নিপীড়নের পর জনগণকে সঙ্গে নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে এগিয়ে যাচ্ছে বিএনপি।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখনও আশা করছি, সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হবে, পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ দিশেহারা, ন্যূনতম মজুরির জন্য গার্মেন্ট শ্রমিকরা আন্দোলন করছে। সরকার সেটাও দমাতে চাইছে।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) সফলভাবে অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়েছে, তিনি সিসিইউতে আছেন। তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকার যদি কোনো বাড়াবাড়ি করে তাহলে তার পরিণতি, কিছু হলে তার দায় সরকারকেই নিতে হবে। সরকার লাঠি নিয়ে সমাবেশে আসার কথা বলছে, অর্থাৎ সরকার উসকানি দিচ্ছে।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিতি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান ও সেলিমা রহমানসহ অন্যান্যরা।