২০ শর্তে বিএনপি–আওয়ামী লীগকে সমাবেশের অনুমতি
- আপডেট সময় : ০৩:১৫:০২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৩
- / ৪৪০ বার পড়া হয়েছে
অবশেষে ২০টি শর্তে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের চাওয়া নিজেদের পছন্দের জায়গায় সমাবেশ করার অনুমতি দিল ডিএমপি। ফলে বিএনপি নয়া পল্টনে আর আওয়ামী লীগ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে সমাবেশ করতে পারবে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় ডিএমপিতে এক জরুরী বৈঠকের পর এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
এরআগে, দুপুরে শনিবারের সমাবেশ করতে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ—দুই দলকেই অনুমতি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ। সে সময় হারুন জানান, শনিবার বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সমাবেশ করতে পারলেও জামায়াতে ইসলামীকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না।
সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আগামী শনিবার রাজধানীর নয়া পল্টনে মহাসমাবেশ ডেকেছে বিএনপি। একই দিন রাজধানীয় বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে, একই দিন মতিঝিলের শাপলা চত্বরে সমাবেশ করতে চায় জামায়াতও।
একই দিন বড় দুই রাজনৈতিক দলের সমাবেশের কারণে ভোগান্তির কথা বিবেচনা করে সড়কে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন থেকে বিরত থাকতে বিএনপি ও আওয়ামী লীগকে অনুরোধ জানায় ডিএমপি। গত বৃহস্পতিবার পুলিশের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে দুপক্ষই। দুই দলই ফিরতি চিঠিতে ডিএমপিকে জানিয়েছে, নিজেদের পছন্দের স্থানেই সমাবেশ করতে চান তারা।
শনিবার মোট ২১টি রাজনৈতিক দল অনুমতি চেয়েছে ডিএমপির কাছে।
শর্তাবলী
১. এই অনুমতিপত্র স্থান ব্যবহারের অনুমতি নয়, স্থান ব্যবহারের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে অনুমোদন নিতে হবে।
২. স্থান ব্যবহারের অনুমতিপত্রে উল্লেখিত শর্তাবলী যথাযথভাবে পালন করতে হবে।
৩. অনুমোদিত স্থানের মধ্যেই সমাবেশ এর যাবতীয় কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।
৪. বেলা ১২:০০ ঘটিকার পূর্বে কোনক্রমেই জনসমাগম করা যাবে না।
৫. নিরাপত্তার জন্য নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পর্যাপ্ত সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক (দৃশ্যমান আইডি কার্ডসহ) নিয়োগ করতে হবে।
৬. নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সমাবেশে আগতদের হ্যান্ড হেন্ড মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে (ভদ্রোচিতভাবে) চেকিং এর ব্যবস্থা করতে হবে।
৭. অনুমোদিত স্থানের বাইরে কোথাও লোক সমবেত হতে পারবে না।
৮. আযান, নামাজ ও অন্যান্য ধর্মীয় সংবেদনশীল সময় মাইক/শব্দযন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না।
৯. ধর্মীয় অনুভূতির উপর আঘাত আসতে পারে এমন কোন বিষয়ে ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন, বক্তব্য প্রদান বা প্রচার করা যাবে না।
১০. অনুমোদিত সময়ের মধ্যে (১৪.০০ ঘটিকা হতে ১৭.০০ ঘটিকা) সমাবেশ এর সার্বিক কার্যক্রম অবশ্যই শেষ করতে হবে।
১১. সমাবেশ সমাপ্তির পর প্রস্থানের সময় রাস্তায় কোথাও কোন সংক্ষিপ্ত সমাবেশ বা অবস্থান করা যাবে না।
১২. আদালত কর্তৃক সাজাপ্রাপ্ত কোন ব্যক্তি সমাবেশে বক্তব্য প্রদান বা তার কোন বক্তব্য সমাবেশে প্রচার করা যাবে না।
১৩. রাস্তার বাম লেন ন্যূনতম ব্যবহার করে সমাবেশ করতে হবে এবং অন্য লেনসমূহ কোনক্রমেই ব্যবহার করা যাবে না।
১৪. আইন-শৃঙ্খলা পরিপন্থী ও জননিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় এমন কার্যকলাপ করা যাবে না।
১৫. রাষ্ট্র বিরোধী কোন কার্যকলাপ ও বক্তব্য প্রদান করা যাবে না। ১৬. উস্কানীমূলক কোন বক্তব্য প্রদান বা প্রচারপত্র বিলি করা যাবে না।
১৭. সমাবেশে ব্যানারের আড়ালে কোন ধরনের লাঠি-সোটা বা রড সদৃশ কোন বস্তু ব্যবহার করা যাবে না।
১৮. আইন-শৃংখলার অবনতি ও কোন বিরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে আয়োজনকারী কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবেন।
১৯. উল্লিখিত শর্তাবলী যথাযথভাবে পালন না করলে তাৎক্ষণিকভাবে এই অনুমতির আদেশ বাতিল বলে গণ্য হবে।
২০. জনস্বার্থে কর্তৃপক্ষ কোন কারণ দর্শানো ব্যতিরেকে এই অনুমতি আদেশ বাতিল করার ক্ষমতা সংরক্ষণ করেন।
বর্তমান একাদশ সংসদের মেয়াদ প্রায় শেষ। এখন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে, দুই প্রধান রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে রেষারেষি ততই বাড়ছে। নির্বাচন নিয়ে সমঝোতার কোনো আলামত এখন পর্যন্ত নেই। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা থাকায় নির্বাচন হতে হবে এ বছরের নভেম্বর থেকে আগামী বছরের জানুয়ারির মধ্যে। নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক না হলেও নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, আগামী নভেম্বরে হতে পারে নির্বাচনের তফসিল আর ভোট হবে জানুয়ারির প্রথমার্ধে।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দল বিশেষ করে বিএনপি ও তাদের জোট সঙ্গীদের আনতে আওয়ামী লীগের ওপর চাপ আছে। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সমঝোতায় সংলাপ বা আলোচনার বিকল্প কোনো পথ দেখা যাচ্ছে না।
বিএনপি বলে আসছে, এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে তারা অংশ নেবে না। এর অংশ হিসেবে গত কয়েক বছরে সিটি করপোরেশনসহ স্থানীয় যে নির্বাচনগুলো হয়েছে, সেগুলোতে কোনো প্রার্থী দেয়নি বিএনপি ও তাদের জোট সঙ্গীরা। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে যারা প্রার্থী হয়েছিলেন তাদের অনেককেই আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। এখন সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে রাজপথে নানা কর্মসূচি পালন করছেন দলটির নেতা–কর্মীরা।
আওয়ামী লীগও বলে আসছে, উচ্চ আদালতের রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্ত হওয়ায় এটি আর ফিরিয়ে আনার সুযোগ নেই। আগামী নির্বাচন হবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদে রেখে, নির্বাচন কমিশনের অধীনে।