এক নজরে বঙ্গবন্ধু টানেল
- আপডেট সময় : ১১:২২:৪২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৩
- / ৪৩৪ বার পড়া হয়েছে
দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশই প্রথম নদীর জলের তলে টানেল বা সুরঙ্গপথ নির্মাণ করেছে। চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর নিচে নির্মিত এই টানেলের নাম দেয়া হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল।
২০০৮ সালের আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে কর্ণফুলী টানেল নির্মাণের প্রতিশ্র“তি ছিল। যা এখন বাস্তব।
নদীর তলদেশ দিয়ে সুরঙ্গ রাস্তা বানানোর এই যাত্রাটা কেমন ছিলো? কত চ্যালেঞ্জের মুখে শেষ হলো কাজ, কত খরচ হলো এবং কি সুবিধা ভোগ করবেন মানুষ, জানাবো টানেল সশ্লিষ্ট আদ্যপান্ত..
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর পরই শুরু হয় কর্ণফুলী টানেল বাস্তবায়নের কাজ। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষকে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০১৪ সালের ৯ই জুন বেইজিংয়ে চীনের সাথে সমঝোতা স্বাক্ষরিত হয়। ২০১৫ সালের ৩০ জুন নির্মাতা চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিসিসিসির সঙ্গে চুক্তি সই হয়। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্র“য়ারি বঙ্গবন্ধু টানেলের মূল নির্মাণকাজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রকল্পের উদ্দেশ্য
কর্ণফুলী নদী চট্টগ্রাম শহরকে দুইভাগে বিভক্ত করেছে। এক ভাগে রয়েছে নগর ও বন্দর এবং অপর ভাগে রয়েছে ভারী শিল্প এলাকা। এই টানেল চট্টগ্রাম বন্দর নগরকে কর্ণফুলী নদীর অপর পাড়ের সাথে সরাসরি যুক্ত করেছে। পরোক্ষভাবে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের মাধ্যমে সারা দেশের সাথে যোগাযোগব্যবস্থায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে। কর্ণফুলী টানেল নির্মিত হওয়ায় এলাকার আশে পাশে শিল্পোন্নয়ন, পর্যটন শিল্পের বিকাশ এবং সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে। ফলে দারিদ্র দূরীকরণসহ দেশের ব্যাপক আর্থসামাজিক উন্নয়ন সাধিত হবে । সরকারি হিসেবে টানলটি জিডিপিতে বার্ষিক ০.১৬৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি বাড়াতে সাহায্য করবে।
টানেলের বর্ণনা:
টানেল সাইটে নদীর প্রস্থ ৭০০ মিটার এবং পানির গভীরতা ৯-১১ মিটার। টানেলের দৈর্ঘ্য প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার। এই প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে চীনের এক্সিম ব্যাংক ২০ বছর মেয়াদী ঋণ হিসেবে ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা দিয়েছে। বাকি টাকা দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।
টানেলের মধ্যে চার লেন বিশিষ্ট সড়ক ৩৫ ফুট চওড়া ও ১৬ ফুট উঁচু দুটি টিউব নির্মাণ করা হয়েছে। ২টি টিউব সম্বলিত ও ৩.৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এটি। টানেলের পশ্চিম ও পূর্ব প্রান্তে ৫.৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক এবং ৭২৭ মিটার ওভার ব্রিজ থাকছে। যা এশিয়ান হাইওয়ের সাথে সংযোগ স্থাপন করবে। এছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজারের সঙ্গে নতুন একটি সড়ক যোগাযোগ চালু হবে। ফলে ঢাকা থেকে কক্সবাজার কিংবা চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার যাওয়ার দূরত্ব কমে আসবে। কক্সবাজার যেতে ঢাকার সঙ্গে ৩৫ কিলোমিটার এবং চট্টগ্রামের ১৫ কিলোমিটার দূরত্ব কমবে। যাতে ভারী যানবাহন সহজে টানেলের মধ্যদিয়ে চলাচল করতে পারে।
২৯ অক্টোবর রোববার থেকে টানেল দিয়ে যানবাহন চলবে। থ্রি হুইলার ও মোটরসাইকেল টানেল দিয়ে চলাচল করতে পারবে। সরকারি হিসেবে টানেল চালুর তিন বছর পর গাড়ি পারাপারের সংখ্যা দাঁড়াবে বছরে ৭৬ লাখে। চালুর প্রথম বছরে চলাচল করা গাড়ির প্রায় ৫১ শতাংশ হবে কনটেইনারবাহী ট্রেইলর, বিভিন্ন ধরনের ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান। বাকি ৪৯ শতাংশের মধ্যে অন্যন্য গাড়ি। আপাতত প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ১৭ হাজার গাড়ি চলবে বলে ধারণা করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। টানেলে নিরাপত্তায় ১০০টির বেশি সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। টানেলে চলাচলকারী গাড়ির গতিবেগ প্রথম দিকে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটারের বেশি হবে না। টানেলের প্রবেশমুখে নির্মাণ করা হয়েছে ওজন স্কেল। নির্ধারিত ওজনের বেশি ভারী যানবাহন এ টানেল দিয়ে চলতে দেওয়া হবে না।
টোল ভাড়া:
বঙ্গবন্ধু টানেল পারাপারে সর্বনিম্ন টোল ২০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রাইভেটকার ও জিপের জন্য। সর্বোচ্চ টোল দিতে হবে ট্রাক ও ট্রেইলারকে। ট্রেইলারের ক্ষেত্রে নির্ধারিত টোলের সঙ্গে প্রতিটি এক্সেলের জন্য আরও ২০০ টাকা করে বাড়তি দিতে হবে।
পিকআপ ২০০ টাকা, মাইক্রোবাস ২৫০ টাকা, বাস (৩১ সিটের কম) ৩০০ টাকা, বাস (৩২ আসনের বেশি) ৪০০ টাকা, বাস (৩ এক্সেল) ৫০০ টাকা, ট্রাক (৫ টন পর্যন্ত) ৪০০ টাকা, ট্রাক (৫ দশমিক ০১ থেকে ৮ টন) ৫০০ টাকা, ট্রাক (৮ দশমিক ০১ থেকে ১১ টন) ৬০০ টাকা, ট্রাক ও ট্রেইলার (৩ এক্সেল) ৮০০ টাকা, ট্রাক ও ট্রেইলার (৪ এক্সেল) ১০০০ টাকা এবং চার এক্সেলের বেশি ট্রাক ও ট্রেইলারগুলোকে ১০০০ টাকার সঙ্গে প্রতি এক্সেলের জন্য আরও ২০০ টাকা করে টোল দিতে হবে।