আফগানিস্তানের কাছে হারের পর টানা চার হারে বিশ্বকাপটা এমনিতেই বাজে কাটছিল বাংলাদেশের, গতকাল নেদারল্যান্ডসের কাছেও হেরে বিশ্বকাপটা হয়ে গেল ‘জঘন্য।’ এখনো তিন ম্যাচ বাকি আছে বাংলাদেশের, তাতেও কিছু পাওয়া-না পাওয়ার সমীকরণ আছে। তবে বিশ্বকাপ থেকে বাংলাদেশের প্রাপ্তির সম্ভাবনা আর নেই বললেই চলে।
এ অবস্থায় সাকিব আল হাসান ও তাঁর দলের যে মুন্ডুপাত চলবে চারিদিকে, সেটা স্বাভাবিকই। এত সমালোচনার মধ্যে আজ বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন কথা বলেছেন সংবাদমাধ্যমে। তিনি জানিয়েছেন, গতকাল নেদারল্যান্ডসের কাছে অমন হারের পর সাকিব, লিটন, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহসহ খেলোয়াড়দের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। জানতে চেয়েছেন, তাঁদের কী কী লাগবে, কিংবা দলকে আরও ভালো করতে কোনো পরামর্শ আছে কি না।
সংবাদমাধ্যমে আজ নাজমুল হাসান বলেছেন, দলের খেলোয়াড়েরা তাঁকে নিশ্চিত করেছেন, দলের ভেতরে কোনো সমস্যা নেই, ‘ওরা সবাই মিলে বলছে যে ওরা একত্রিত। ওদের নিজেদের মধ্যে কোনো সমস্যা নেই। রান পাচ্ছে না, এটা নিয়ে ওরা নিজেরাও অবাক। বাংলাদেশের মানুষ ক্রিকেটের প্রতি যেমন প্যাশনেট, তাতে সারা বাংলাদেশের মানুষ যে কতটা কষ্ট পাচ্ছে, এটা নিয়ে ভেবে ওরা আরও বেশি কষ্ট পাচ্ছে। ওদেরকে বললাম যে মানুষ এখন খারাপ বলবে। অবশ্যই বলবে, না বলার কোনো কারণও নেই। মানুষ ক্রিকেটকে এত ভালোবাসে বলেই তো এ ধরনের খেলা খেললে বা হারলে মানুষ বলবে। মানুষ বোর্ডকে বলবে, কোচকে বলবে, খেলোয়াড়দের বলবে, এটাই স্বাভাবিক।’
তবে চারিদিকের সমালোচনার মধ্যেও দলের বাকি তিন ম্যাচ থেকে কিছু প্রাপ্তিতে চোখ বিসিবি সভাপতির, ‘...তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, যেহেতু এখনো একটা টুর্নামেন্ট চলছে, এখনো তিনটা ম্যাচ বাকি আছে। ওই তিন ম্যাচে যে আমরা আহামরি কিছু করে ফেলব, এটাও জোর দিয়ে বলতে পারছি না। তবে সক্ষম। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আমাদের ভালো ক্রিকেট খেলা সম্ভব। হার-জিত বড় কথা না। আমাদের ব্যাটিংটা ভালো হচ্ছে না। ওদের এটাই বলেছি যে, ওদের ঘুরে দাঁড়িয়ে লড়াই করা উচিত।’
দলের কোনো চাওয়া থাকলে সেটা বোর্ড পূরণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বলেও জানিয়েছেন নাজমুল হাসান, ‘ওরা কী চায় বলুক, যখন যা লাগে, আমরা আছি। ওদের যেটার প্রয়োজন আমরা করতে রাজি আছি। ওদের পরামর্শ থাকলে আমরা নিতে রাজি আছি। ওরা কথা দিয়েছে ওরা বসবে, তবে ওরা বলেছে যে ওদের তেমন কিছু চাওয়ার নেই। দুর্ভাগ্যবশত, আমরা এবার যেটা দেখছি যে, আমাদের প্রথম দিকের চার-পাঁচজনই রান পাচ্ছে না। যেটা এর আগে বাংলাদেশ দলে দেখিইনি, কোনো দলেই দেখিনি। একটা টুর্নামেন্ট খেলতে আসা এই মানের, সেখানে কোনো দলের এমনটা কখনো দেখিনি। এটা একেবারে অপ্রত্যাশিত।’
বিশ্বকাপে দলের প্রথম পাঁচ ম্যাচের কোনোটিতে গ্যালারিতে ছিলেন না বিসিবি সভাপতি। গতকাল নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচে ছিলেন। বিশ্বকাপের মাঝপথে নিজের ভারত যাওয়ার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন নাজমুল হাসান, ‘আমার এখানে আসার একটাই কারণ ছিল, পরপর চারটা ম্যাচ হারের পর – যদিও দলগুলো শক্তিশালী ছিল, ভেবেছিলাম যে এভাবে টানা হারের পর ওদের মানসিকভাবে একটু চাঙা করা যায় কি না। কারণ আমার মনে হয়েছে যে ওরা হয়তো মানসিকভাবে একটু ভেঙে পড়েছে। পরশু দিন এসেছিলাম, এসে পাঁচ-দশ মিনিট পুরো কোচিং স্টাফসহ বসেছিলাম। বলেছিলাম, যে, যা হয়েছে হয়েছে, তোমাদের মান নিয়ে আমাদের কোনো সংশয় নেই। তবে এর পরের ম্যাচগুলো ভালো খেলবে। এছাড়া ওদের সঙ্গে আর কোনো কথাবার্তা হয়নি আমার।’
সেটা অবশ্য ম্যাচের আগের কথা। ম্যাচে বাংলাদেশের অমন ভরাডুবির পর আবার খেলোয়াড়দের সঙ্গে কথা বলেছেন বিসিবি সভাপতি, ‘আজকে ঠিক করলাম, আজকে খেলোয়াড়দের সঙ্গে আলাদা আলাদা করে বসতে চেয়েছি। বেশ কয়েকজন খেলোয়াড়ের সঙ্গে বসেছি। জানতে চেয়েছি যে ওদের কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না, কোনো কিছুর অভাব আছে কি না, তাদের কোনো কিছু লাগবে কি না যেটা আমরা ওদের জন্য ব্যবস্থা করে দিতে পারি। সাকিবের সঙ্গে বসেছি, মুশফিক-রিয়াদ এ দুজন শুধু একসঙ্গে ছিল, মিরাজ, লিটন দাস...। ওদের খোলাখুলি কথা বলতে বলেছি। ওদের সবার একটাই কথা, কোনো সমস্যা না, ওরা রান পাচ্ছে না এটাই সমস্যা। প্রথম তিন-চার-পাঁচজন যদি রান না পায়, এই পর্যায়ে এরপর আর কোনো লাভ হয় না।’