বাংলাদেশ যা পারেনি তা দেখাল আফগানিস্তান
- আপডেট সময় : ০৪:৫১:২৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৩
- / ৪১৫ বার পড়া হয়েছে
২০১৯ বিশ্বকাপে একটা ম্যাচও না জিততে পেরে ওসব কথাকে বাস্তবে রূপ দিয়েছিল খোদ আফগানিস্তানই। কিন্তু চার বছরের ব্যবধানে সেই দলেরই কি চোখধাঁধানো পরিবর্তন!
প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে হেরে টুর্নামেন্ট শুরু করা আফগানরা আজ বিশ্বকাপে নিজেদের তৃতীয় জয় তুলে নিল। তাও আবার যেমন-তেমন তথাকথিত ‘পুঁচকে’ কোনো দেশের বিপক্ষে নয়। আজ আফগানদের হাতে নাকাল হয়েছে শ্রীলঙ্কা। লঙ্কানদের ৭ উইকেটে হারিয়েছে আফগানিস্তান। এ নিয়ে এক বিশ্বকাপে তিন-তিনটি টেস্ট খেলুড়ে দেশকে হারানোর কৃতিত্ব দেখালো আফগানিস্তান। তাও আবার ছয় ম্যাচের মধ্যেই। অথচ সেই ১৯৯৯ সাল থেকে বিশ্বকাপ খেলা বাংলাদেশ দুই যুগ পেরিয়ে গেলেও এ স্বাদ পায়নি!
ছয়দিন আগে পাকিস্তানের বিপক্ষে যেমন ঠাণ্ডা মাথায় জয় তুলে নিয়েছিলেন রশিদ-হাশমতউল্লাহরা, আজও একই ছক মেনে জিতেছে আফগানিস্তান। একটু ধীরগতির পিচে প্রথমে প্রতিপক্ষকে ব্যাট করতে পাঠাও, যাতে বিকেলের শিশিরে বল করার সমস্যায় না পড়তে হয়। এরপর তাদের মোটামুটি রানে আটকে রেখে ঠাণ্ডা মাথায় সে রান তাড়া করো – ছকটা তো এটাই!
পুনেতে রানবন্যা হয়। এই উইকেটে প্রথম ব্যাট করে জিততে চাইলে ৩০০ ছাড়া গতি নেই। শুধু একবারই ৩০০ না করে জিততে পেরেছে কেউ। সেটা পাঁচ বছর আগের কথা।
না হলে পুনের উইকেটে ৩০০ ছাড়া গতি নেই। আজ উইকেট দেখে দুই বিশেষজ্ঞও বলেছিলেন, এটা তিন শ রানের উইকেট। এমন উইকেটে ব্যাট করার কথা স্বপ্নে দেখেন ব্যাটসম্যানরা।
তো, এমন উইকেটে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ তুলতে পেরেছিল ২৫৬ রান। আর আজ শ্রীলঙ্কা আফগানিস্তানের বিপক্ষে তুলতে পেরেছে মাত্র ২৪১ রান।
টস জিতে ফিল্ডিং বেছে নেওয়া আফগানিস্তান আজ দুর্দান্ত বল করেছিল। পাকিস্তান ম্যাচে বসে থাকা ফজল হক ফারুকি শুরুতেই ধাক্কা দিয়েছেন শ্রীলঙ্কাকে। বেশ কয়েকদিন পর দলে ফেরা দিমুথ করুনারত্নে মাত্র ১৫ রানেই ফিরে গেছেন। ২২ রানে প্রথম উইকেট হারানো শ্রীলঙ্কা পাওয়ার প্লেতে মাত্র ৪১ রান তুলতে পেরেছে।
পাথুম নিশাঙ্কা ও কুশল মেন্ডিসের ৬২ রানের জুটিটা এগিয়েছে অনেক ধীরগতিতে। যখন রানের গতি বাড়ানোর চেষ্টা করার কথা তখনই আউট নিশাঙ্কা (৪৬)। সাদিরা সামারাবিক্রমাকে নিয়ে ৫০ রানের জুটি গড়েন কুশল মেন্ডিস।
ইনিংসের মাঝপথে ২ উইকেটে ১৩৪ রান থেকে বড় স্কোরের স্বপ্ন দেখতে পারত শ্রীলঙ্কা। কিন্তু মুজিব-উর-রহমান ও রশিদ খান একটা ঝড় বইয়ে দিলেন ইনিংসের মাঝখানে। ৩৩ রানের মধ্যে মেন্ডিস (৩৯), সামারাবিক্রমা (৩৬) ও ধনঞ্জয়া ডি সিলভা (১৪) চলে গেলেন।
চারিত আসালাঙ্কা ও অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসের ওপর দায়িত্ব পড়েছিল। কিন্তু আসালাঙ্কা (২২) ফিরে গেলেন ফারুকিকে মারতে গিয়ে। ১৮৫ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে ফেলে শ্রীলঙ্কা। তবে মহীশ তিকশানা ২৯ রানের এক ইনিংসে শ্রীলঙ্কাকে ২৩০ রানে পৌছে দেন। ম্যাথুসের দায়িত্ব ছিল দলকে আড়াই শ পার করানোর।
কিন্তু তিকশানা আউট হওয়ার একটু পর ম্যাথুসও চলে গেলে মাত্র ২৩ রানে। ৩ বল আগে গুটিয়ে যায় শ্রীলঙ্কা। পুনের উইকেটে প্রথম দল হিসেবে প্রথমে ব্যাট করে তিন শর নিচে গুটিয়ে যাওয়ার কীর্তি গড়ল লঙ্কানরা।
পিচে বল স্কিড করছিল, একটূ থেমে থেমে আসছিল। এমনকি সুইংও পাচ্ছিলেন পেসাররা। এমন অবস্থায় সামান্যতম ধৈর্য্য হারিয়ে ফেললেও সে ভুলের মাশুল দিতে পারত আফগানিস্তান। যে ভুল করেছিলেন রহমানউল্লাহ গুরবাজ। দুই আফগানি ওপেনারের মধ্যে অপেক্ষাকৃত মারকুটে ব্যাটসম্যানের তকমা পাওয়া গুরবাজ আজ চার বলও টিকতে পারেননি। অবশ্য দিলশান মাদুশঙ্কা যেভাবে পিচ ব্যবহার করে সুইং করে গুরবাজকে বোল্ড করেছেন, সে বলে বোল্ড না হলেই হয়তো ‘অপরাধ’ করে ফেলতেন গুরবাজ!
গুরবাজ মাথা গরম করলেও, বাকিরা কেউই মাথা গরম করেননি। ইবরাহিম জাদরান (৩৯) থেকে শুরু করে রহমত শাহ (৬২), হাশমতউল্লাহ শহীদী, আজমতউল্লাহ ওমরজাই – প্রত্যেকে বিচক্ষণ ব্যাটসম্যানশিপের নিদর্শন গড়েছেন। শেষের তিনজন তো ফিফটিই করেছেন। চারজনের ব্যাটিংয়ে গোটা ইনিংসই ‘ডারিভিং সিটে’ ছিল আফগানরা। মাদুশঙ্কা আর রাজিতার কল্যাণে শ্রীলঙ্কা আরও দুটি উইকেট পেলেও তা কখনই আফগানিস্তানকে ভয় দেখাতে পারেনি। ৫৮ আর ৭৩ রানে অপরাজিত থেকে দলকে জিতিয়েই ম্যাচ ছেড়েছেন দুই ‘উল্লাহ’ – হাশমত আর আজমত। নেট রান রেটের হিসাবে ভুল করে এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কাকে হাতের নাগালে পেয়েও হারাতে না পারা আফগানদের সে আফসোসও মিটেছে আজ।
আর তাতে আফসোস বেড়েছে বাংলাদেশের – বিশ্বকাপ খেলার দুই যুগ পরও বাংলাদেশ এমন ঠাণ্ডা মাথায় টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর বিপক্ষে নিয়মিত রান তাড়া করতে পারে না কেন?