বিশ্বকাপে যাওয়া দলগুলোর শক্তি-দুর্বলতার হিসাবে বাংলাদেশের সেমিফাইনালের আশা বাস্তবায়ন করাই বেশ কঠিন হতো। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে গত শনিবারের হারের পর সে আশা সম্ভবত বাংলাদেশের কেউই আর করেননি। তবু কাগজে-কলমের হিসাবে তো বাংলাদেশ বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়ে গেছে বলা যেত না। কলকাতার ইডেন গার্ডেনে আজ পাকিস্তানের বিপক্ষে ব্যাটে-বলের পারফরম্যান্সে সাকিব আল হাসানের দল নিশ্চিত করল, কাগজে-কলমেও আর কোনো আশা থাকছে না।
ব্যাটিংয়ে মাত্র ২০৪ রান করার পরই বাংলাদেশের জয় সমীকরণ থেকে মুছে গিয়েছিল। এরপর পাকিস্তানের দুই ওপেনার আবদুল্লাহ শফিক ও ফখর জামান নিশ্চিত করলেন, ক্রিকেটীয় অনিশ্চয়তারও কোনো সুযোগ আর থাকছে না। শেষ পর্যন্ত পাকিস্তান ৭ উইকেটে জিতে গেছে, ১০৫ বল হাতে রেখে জয়ে নেট রানরেটও বেশ বাড়িয়ে নিয়েছে বাবর আজমের দল। পাকিস্তানের সেমিফাইনালের আশা অনেক যদি-কিন্তুর জটিল সমীকরণে এখনো টিকে আছে। আর বাংলাদেশ হয়ে গেল এবারের বিশ্বকাপ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাদ পড়া প্রথম দল।
বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের পরই সাকিবরা আর কী লড়াই করবেন, এটাই দেখা দিয়েছিল বড় প্রশ্ন হয়ে। পাকিস্তানের ইনিংসের মাঝপথে যেতে না যেতেই উত্তর পরিষ্কার, বাংলাদেশ কোনো লড়াই-ই করতে পারছে না। পাকিস্তানের দুই ওপেনার শফিক আর ফখরকে তেমন ভোগাতেই পারছিলেন না বাংলাদেশের বোলাররা। ফখর তো বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচটাকেই ফর্মে ফেরার উপলক্ষ বানিয়ে নিয়েছেন।
ওপেনিংয়ে টানা ১১ ইনিংসে কোনো ফিফটি না পাওয়া ফখরকে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচের পরই বাদ দিয়েছিল পাকিস্তান। তাঁর জায়গায় সুযোগ পেয়ে আবদুল্লাহ শফিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন, এরপর অস্ট্রেলিয়া ও আফগানিস্তানের বিপক্ষেও করেছেন ফিফটি। কিন্তু অন্য প্রান্তে ইমাম-উল-হকও তো রান পাচ্ছেন না। আজ ইমামকে বাদ দিয়ে আবার ফখরকে ফিরিয়েছে পাকিস্তান। ইডেনের ব্যাটিংসহায়ক উইকেটে তাসকিন-মোস্তাফিজদের অনায়াসেই খেলে ফিফটি করেছেন ফখর ও শফিক দুজনই।
৫৬ বলে ফিফটিতে পৌঁছেছেন শফিক (৯ চারে), এর কিছুক্ষণ পর ৫১ বলে ফিফটি পূর্ণ হয়েছে ফখরেরও (২ চার ও ৫ ছক্কায়!)! প্রথম পাওয়ার প্লে-র দশ ওভারে ৫২ রান তোলা পাকিস্তানের ১০০ হয়ে গেছে ১৮তম ওভার শেষ হওয়ার আগেই। শফিক তবু কিছুটা রয়েসয়ে খেলছিলেন, ফখর তো ছক্কার পর ছক্কা হাঁকিয়েই গেছেন। ফিফটির পর অবশ্য দুটি ছক্কা মেরেছেন শফিকও।
অবশেষে ২২তম ওভারের প্রথম বলে মিরাজকে সুইপ করতে গিয়ে এলবিডাব্লিউ হন শফিক। ১২৮ রানে ভাঙে পাকিস্তানের উদ্বোধনী জুটি, শফিক ফেরেন ৬৯ বলে ৯ চার ও ২ ছক্কায় ৬৮ রান করে। নিশ্চিত হয়, বাংলাদেশ অন্তত দশ উইকেটে হারছে না। তবে বাংলাদেশ এরপর আরেক 'কৃতিত্ব' দেখিয়েছে - ফখর রানে ফিরলেও বেশ হতাশার একটা বিশ্বকাপ কাটাতে থাকা পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজমকে ছন্দে ফিরতে দেয়নি। ২৬তম ওভারে মিরাজেরই বলেই ক্যাচ তুলে দিয়ে ফিরেছেন বাবর, ১৬ বলে করেছেন ৯ রান।
এরপর ২৮তম ওভারে ফখরও ফিরেছেন মিরাজের বলে, উড়িয়ে মারতে গিয়ে বাউন্ডারিতে ক্যাচ দিয়েছেন। ৭৮ বলে ৩ চার ও ৭ ছক্কায় ৮১ রান করে ফিরেছেন ফখর। ৩৮ বলের মধ্যে ৪১ রানে ৩ উইকেট! অন্য কোনো দিন হলে হয়তো বাংলাদেশের ম্যাচে ফেরার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হতো। কিন্তু লক্ষ্য যেখানে মাত্র ২০৫, তারওপর এই তিন উইকেটের আগেই পাকিস্তান যে ভিত পেয়ে গেছে, এরপর আর কোনো প্রত্যাবর্তন-টত্যাবর্তনের আলোচনা চলে না।
রিজওয়ান (২১ বলে ২৬) আর ইফতিখার (১৫ বলে ১৭) নিশ্চিত করলেন, ওসব আলোচনা তো দূরের কথা, পাকিস্তানকে খুব বেশিক্ষণ অপেক্ষায়ও থাকতে হচ্ছে না।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৪৫.১ ওভারে ২০৪ /১০ (তামিম ০, লিটন ৪৫, শান্ত ৪, মুশফিকুর ৫, মাহমুদউল্লাহ ৫৬, সাকিব ৪৩, হৃদয় ৭, মিরাজ ২৫, তাসকিন ৬, মুস্তাফিজ ৩, শরিফুল ১; আফ্রিদি ৯-১-২৩-৩, ইফতিখার ১০-০-৪৪-১, রউফ ৮-০-৩৬-২, ওয়াসিম ৮.১-১-৩১-৩, উসামা ১০-০-৬৬-১)
পাকিস্তান: ৩২.৩ ওভারে ২০৫/৩ (শফিক ৬৮, ফখর ৮১, বাবর ৯, রিজওয়ান ২৬, ইফতিখার ১৭; তাসকিন ৬-১-৩৬-১, শরিফুল ৪-১-২৫-০, মিরাজ ৯-০-৬০-৩, মুস্তাফিজুর ৭-০-৪৭-০, সাকিব ৫.৩-০-৩০-০, নাজমুল ১-০-৫-০)
ফলাফল: পাকিস্তান সাত উইকেটে জয়ী।