আমদানির আলু দেশে আসার পর সামান্য দাম কমেছে। এক সপ্তাহ আগেও যেখানে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকায়, শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে তা কিনতে খরচ হয়েছে ৪৩ থেকে ৫০ টাকায়। বিক্রেতারা বলছেন, ভারত থেকে আমদানি করা আলু দেশের বাজারে ঢুকলে দাম আরও কমে যাবে। শীতকালীন সবজির বাজারে আসতে শুরু করেছে। ক্রেতাদের দাবি কমতে শুরু করেছে এসব পণ্যের দাম। তবে মৌসুম অনুযায়ী দাম নাগালের মধ্যে না থাকায় হতাশ ক্রেতারা।
দেশে হঠাৎ দাম বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে গত ১৪ সেপ্টেম্বর আলুর পাইকারি ও খুচরা দাম বেধে দেয় সরকার। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হিমাগারে প্রতি কেজি আলু ২৬ থেকে ২৭ টাকা আর খুচরা বাজারে ৩৫ থেকে ৩৬ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা। সরকার দাম বেধে দিলেও তার প্রভাব বাজারে পড়েনি। রাজধানীতে বাজার ভেদে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়।
আলুর বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে ভোক্তা অধিকারসহ সরকারি বিভিন্ন সংস্থা অভিযান চালালেও তা কার্যত ব্যর্থ হয়। এমন বাস্তবতায় গত সোমবার বিদেশ থেকে আলু আমদানির সিদ্ধান্ত নেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এরই মধ্যে এক লাখ ৭ হাজার টন আলু আমদানির অনুমতি দিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেশে এসেছে ৭৭ টন আলু। ভারত থেকে প্রতি কেজি আমদানিতে খরচ হচ্ছে ২৫ টাকা।
এদিকে, পেঁয়াজের দাম আগের চেয়ে কিছুটা কমলেও এখনো তা সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩৬ টাকায় এবং আমদানি করা পেঁয়াজ কিনতে গুনতে হচ্ছে ১০০ থেকে ১০৫ টাকা।
ভোক্তাদের নাভিশ্বাস অবস্থা হলেও বিক্রেতারা বলছেন, সরবরাহ বাড়লে কমতে শুরু করবে নিত্যপণ্যের দাম। ফুলকপি এখনো বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। প্রতি কেজি শিম ১১০ থেকে ১২০ টাকা আর মুলার দাম ৬০ টাকা। বাড়তি অন্যান্য সবজির দামও।
অস্থিরতা কমছেই না চালের বাজারে। দীর্ঘদিন স্থিতিশীল থাকায় গেল দুই সপ্তাহ ধরেই বাড়ছে চালের দাম। সবচেয়ে বেশি বেড়ে মোটা চালের দর। স্বর্ণা ও আটাশ কেজিতে তিন থেকে চার টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫৪ টাকা। মিনিকেট কেজিতে দুই টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৬৪ টাকা। আগের দামেই নাজিরাশাইল বিক্রি হচ্ছে ৭২ টাকা কেজি। সহসাই দাম কমার সম্ভাবনা দেখছেন না বিক্রেতারা।
শুক্রবার (৩ নভেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি বরবটি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়, শিম ১২০ টাকা, পটল ৬০, করলা প্রতি কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, শসা প্রতি কেজি ৬০ টাকা, ঢেঁড়স কেজি ৬০ টাকা, গোল বেগুন কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, টমেটো ১২০ টাকা, গাজর ১২০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি, কাঁচামরিচ প্রতি কেজি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, লম্বা বেগুন প্রতি কেজি ৮০ টাকা, মুলা প্রতি কেজি ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা প্রতি কেজি ৮০ টাকা, ধুন্দল প্রতি কেজি ৬০ টাকা, ঝিঙ্গা প্রতি কেজি ৬০ টাকা, ফুলকপি প্রতি পিস ৫০ থেকে ৬০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৬০ থেকে ৮০ টাকা, আলু প্রতি কেজি ৬০ টাকা, কচুর মুখি প্রতি কেজি ৮০ টাকা এবং কচুর লতি প্রতি কেজি ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মাছের বাজারেও নেই স্বস্তি। বিক্রেতারা বলছেন সরবরাহ কমায় বেশিরভাগ মাছের দাম বেড়েছে কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা। বাজারে প্রতি কেজি পাবদা মাছ ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, শিং মাছ প্রতি কেজি ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা, চাষের কই ৩০০ টাকা, পাঙাশ মাছ প্রতি কেজি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, তেলাপিয়া প্রতি কেজি ২৩০ থেকে ২৫০ টাকা, রুই মাছ প্রতি কেজি ৩৩০ থেকে ৩৫০ টাকা, কাতল মাছ প্রতি কেজি ৩০০ থেকে ৩৩০ টাকা, গুড়া মাছ (কাচকি) প্রতি কেজি ৪৮০ টাকা, বাইম মাছ ছোটগুলো প্রতি কেজি ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা, টেংরা মাছ প্রতি কেজি ৪৮০ থেকে ৫০০ টাকা, মাঝারি শোল মাছ প্রতি কেজি ১২৫০ টাকা, গলদা চিংড়ি প্রতি কেজি ১১০০ টাকা, ছোট চিংড়ি প্রতি কেজি ৬০০ টাকা, আইড় মাছ প্রতি কেজি ৭০০ টাকা, বোয়াল প্রতি কেজি ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা এবং রূপচাঁদা প্রতি কেজি সাইজ ভেদে ৮০০ থেকে ১১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছ।
এছাড়া বয়লার প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকা, সোনালী মুরগি ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকা, কক মুরগি ৩৫০ টাকা, গরু মাংস প্রতি কেজি ৭৫০ টাকা এবং খাসির মাংস প্রতি কেজি ১১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ক্রেতারা বলছেন, সরকারের তদারকি বাড়ানো গেলে আলু-পেঁয়াজের সঙ্গে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম কমতে শুরু করবে।