বিএনপি-জামায়াতের অবরোধ
হামলা, বাসে আগুন ও ভাঙচুর করে প্রথমদিন অতিবাহিত
- আপডেট সময় : ০৪:২০:০৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ নভেম্বর ২০২৩
- / ৪২৭ বার পড়া হয়েছে
দ্বিতীয় দফায় বিএনপি-জামায়াতের ডাকা দুই দিনের অবরোধ কর্মসূচি চলছে, চোরগোপ্তা হামলা, বাসে আগুন ও ভাঙচুর করে প্রথম দিন অতিবাহিত। তবে, এ অবরোধ কর্মসূচির দিনেও রাজধানীর সড়কে সকাল থেকে কিছু গণপরিবহণ চলাচল করতে দেখা গেছে। চলাচল করছে রিকশা ও সিএনজি অটোরিকশাসহ ব্যক্তিগত গাড়িও। সাধারণ দিনের তুলনায় সব পরিবহণই ছিল সংখ্যায় অনেকটা কম। সেজন্য, কর্মদিবস হওয়ায় কিছুটা ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে চাকরিজীবীদের। আজ রোববার (৫ নভেম্বর) সকাল নয়টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এ দৃশ্য দেখা যায়।
অবরোধ ডেকে আবারও চোরগোপ্তা হামলা, বাসে আগুন ও ভাঙচুর করেছে বিএনপি জোটের কর্মীরা। রাজধানীর মেরাদিয়াতে চলন্ত বাসে পেট্রোল বোমা মেরেছে। এতে বাসের চালক, হেল্পার ও কয়েকজন যাত্রী আহত হয়। দগ্ধ বাস চালক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর দ্বিতীয় দফা অবরোধের প্রথম দিন রাজধানীতে চারটি বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ সব ঘটনায় একজন চালক ও তার সহকারী দগ্ধ হয়েছেন। রাজধানীর বাংলামোটর এলাকায় রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে। পরে ৬ টা ৩৭ মিনিটে ফায়ার সার্ভিসের প্রথম ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌছায়।
ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষ জানিয়েছে, বিকেল পৌণে চারটায় মিরপুর বাংলা কলেজের সামনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস চৈতালিকে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
এছাড়াও সন্ধ্যায় রাজধানীর পল্লবীতে একটি যাত্রীবাহি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। রাজধানী ছাড়াও অবরোধের প্রথম দিন নারায়ণগঞ্জসহ ৪ জেলায় ৪টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও বেশ কয়েকটি গাড়িতে ভাংচুর চালানো হয়। এর মধ্যে গাজীপুরের ভোগড়ায় একটি যাত্রীবাহি বাস ও খাগড়াছড়ির জিরোমাইল এলাকায় ১টি মিনি ট্রাকে আগুন দেওয়া হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মিরপুরগামী চৈতালীর একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে। রোববার (৫ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩ টায় বাংলা কলেজের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি। কে বা কারা বাসে আগুন দিয়েছে তাও শনাক্ত করা যায়নি।
ফায়ার সার্ভিস বলেছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে শনিবার সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত ১২টি বাসে আগুন দিয়েছে অবরোধকারীরা। রাজধানীসহ সারা দেশে বাড়তি সতর্কতা ও টহলে রয়েছে বিজিবি, র্যাব, পুলিশ।
অবরোধের সমর্থনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন। মিছিলের সময় তারা বিভিন্ন জায়গায় টায়ারে আগুন দিয়েছে। তবে, ২৮ অক্টোবর পর থেকে ধারাবাহিকভাবে আজও ফাঁকা নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়। আসেননি দলের কোনো নেতাকর্মীও। বরাবরের মতো কার্যালয়ের দুই পাশে অবস্থান নিয়েছে পুলিশ।
বিএনপির মিডিয়া সেলের পক্ষে থেকে জানানো হয়, বিএনপির মহাসমাবেশে হামলা, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে এবং সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে দ্বিতীয় ধাপের অবরোধের প্রথম দিনে রোববার (৫ অক্টোবর) সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মিছিল হয়েছে।
জানা গেছে, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ছাত্রদল থেকে অব্যাহতি পাওয়া সাবেক সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণের নেতৃত্বে নিকুঞ্জ কুর্মিটোলা হাসপাতালের সামনে রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে মিছিল ও পিকেটিং করে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
এসময় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের সহ সভাপতি ঝলক মিয়া, মুহতাসিম বিল্লাহ, আসাদুজ্জামান আসাদ, মেহরাব মেহবুব মাহি, সুরুজ মন্ডল, যুগ্ম সম্পাদক জহির রায়হান আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের নেতৃত্বে এশিয়ান হাইওয়েতে অবরোধ কর্মসূচি সমর্থনে মিছিল হয়েছে। রাজধানীর বনশ্রী এলাকায় অবরোধের সমর্থনে মিছিল করেছে ছাত্রদল। সকাল সাড়ে ৭টায় বনশ্রী এলাকায় মিছিল করে সড়ক অবরোধ করেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদ ও ঢাকা মহানগর পূর্ব ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
বনশ্রী অবরোধের সমর্থনে মিছিল ও সড়ক অবরোধের নেতৃত্ব দেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি নাছির উদ্দিন নাছির। আরও ছিলেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সাত্তার পিয়াস ও রেহেনা আক্তার শিরিন, সহ সাধারণ সম্পাদক আহি আহমেদ জুবায়ের, সহ স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক মো. মাহবুব শেখ।
বিএনপির ডাকা যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষিত দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টার সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি সফলের লক্ষ্যে বিক্ষোভ মিছিল ও সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেছে ১২ দলীয় জোট। মিছিল থেকে সরকারের ভয়াবহ দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে জাতিসংঘ ও বিশ্ববিবেককে জাগ্রত ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানান জোটের নেতারা। রোববার (৫ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় প্রেসক্লাবের বিপরীতে বিএমএ ভবনের সামনে থেকে এ মিছিলটি শুরু হয়।
জোটের নেতারা বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের ঘণ্টা বেজে উঠেছে। পায়ের নিচে মাটি সরে যাওয়া গণবিচ্ছিন্ন সরকারের শেষ অবলম্বন রাষ্ট্রশক্তি ব্যবহার করে বিরোধী দলকে জেলে ভরছে। সারাদেশের মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে রাজপথ থেকে হটিয়ে দিয়ে আবারও ২০১৪ সালের মতো একটি ভোটারবিহীন নির্বাচন করে রাষ্ট্র ক্ষমতা ধরে রাখতে চাইছে।
নেতারা আরও বলেন, ২০১৪ আর ২০২৪ সাল এক নয়। নিরস্ত্র বিরোধী দলকে রাজপথে রাষ্ট্র ক্ষমতা ব্যবহার করে সাময়িকভাবে বিজয়ী হওয়ার উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেও এই উচ্ছ্বাস অচিরেই ফ্যাকাশে হয়ে যাবে। জাতিসংঘ এবং গণতান্ত্রিক বিশ্ব আরেকটা হিটলার সাদ্দাম ও গাদ্দাফীর উত্থানকে মেনে নেবে না।
২৮ অক্টোবর সরকারের হাতে আরেকবার গণতন্ত্রের মৃত্যু ঘটেছে দাবি করে ১২ দলীয় জোটের নেতারা বলেন, হাসিনা সরকারের পতন ও গণতন্ত্র পুনরুজ্জীবিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা নিয়মতান্ত্রিক প্রতিবাদ অব্যাহত রাখবো।
অন্যদিকে বিএনপি-জামায়াতের ডাকা অবরোধের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। দলের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফীর নেতৃত্বে মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেন। রোববার (৫ নভেম্বর) সকালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় হতে জিরো পয়েন্ট হয়ে ফের বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে এসে বিক্ষোভ মিছিলটি শেষ হয়।
এসময় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হেদায়াতুল ইসলাম স্বপন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী মোরশেদ হোসেন কামাল, মিরাজ হোসেন, মহিউদ্দিন আহমেদ মহি, সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম সারোয়ার কবির, আক্তার হোসেন, আইন সম্পাদক জগলুর কবির, দপ্তর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজসহ উপস্থিত রয়েছেন। এছাড়া আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদও মিছিলে অংশ নেন।
গণপরিবহন শূন্য ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়ক
টাঙ্গাইলে বিএনপির ডাকা দ্বিতীয় দফার ৪৮ ঘণ্টার অবরোধে গণপরিবহন চলাচল ব্যতিত আর কোন প্রভাব পড়েনি। শনিবার (৪ নভেম্বর) রাতে ঢাকায় চারটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনার পর থেকেই ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে গণপরিবহন চলাচল কমতে শুরু করে। পরে রোববার সকালে মহাসড়কটি গণপরিবহন শূন্য হয়ে পড়ে। তবে পণ্যবাহী ট্রাক ও সিএনজি চালিত অটোরিকশা, পিকাআপ ও ব্যক্তিগত যান চলাচল করতে দেখা গেছে। গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও রেল স্টেশনসহ বাস স্ট্যান্ডগুলিতে যাত্রীদের বাড়তি কোন চাপ লক্ষ করা যায়নি। সংশ্লিষ্টরা বলছে, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ গন্তব্যে যাচ্ছেন না। তাই যাত্রীর সংখ্যা তুলনামূলক অনেক কম।
এদিকে সকাল থেকে কোথাও বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকদের পিকেটিং এর খবর পাওয়া যায়নি। তবে মহাসড়কসহ গুরুত্বপূর্ণস্থানে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কড়াকড়ি ও জোরালো টহল অব্যহত রয়েছে।
গাবতলি বাস টার্মিনাল
রোববার (৫ নভেম্বর) সকাল ৮টা থেকে সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত সরেজমিনে দেখা যায়, খাঁ খাঁ করছে গাবতলি বাস টার্মিনাল, অনেক কাউন্টার খোলা থাকলেও নেই কোনো স্টাফ। যাত্রী না থাকায় অনেক কাউন্টার রয়েছে বন্ধ। যেসব কাউন্টার খোলা রয়েছে তারাও হা-হুতাশ করছেন যাত্রীর অভাবে। কেউ খোশগল্প করছেন, কেউ আবার লুডু খেলে অলস সময় পার করছেন।
দিগন্ত পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার মমিন বলেন, ‘যাত্রীর চাপ বেশি থাকলে সকালে ১৫টা পর্যন্ত ট্রিপ চলে। গতকালও (শনিবার) যাত্রী ছিল বেশ। আজ কোনো যাত্রী নেই। কোনো ট্রিপ যায়নি। আপনি যেখানে আমিও সেখানে, দেখেন টার্মিনাল ঘুরে। কি অবস্থা, খাঁ খাঁ করছে পুরো টার্মিনাল।’
আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘আমরা মালিকের চাকরি করি। মালিকের নির্দেশে কাউন্টার খুলেছি। যাত্রী আসবে বাস চলবে, দুই-চার পয়সা পাব, বাজার-সদাই করে বাসায় গিয়ে খাব। সকাল থেকে চা খাওনের টাকাটাও তো জুটেনি। ট্রিপের টাকা তো দূরের কথা।’
বিএনপি-জামায়াতের ডাকা অবরোধে ঢাকাসহ সারা দেশে বাস-মিনিবাস চলাচল অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছিলেন ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। শনিবার (৪ নভেম্বর) সংবাদ মাধ্যমে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির দপ্তর সম্পাদক সামদানী খন্দকারের পাঠানো বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।
যোগাযোগ করা হলে রোববার (৫ নভেম্বর) দুপুরে সামদানী খন্দকার বলেন, দূরপাল্লার বাস চলছে না কারণ যাত্রী নেই। যাত্রী ছাড়া বাস চালানো তো লস। তবে বাস যে চলছেই না ব্যাপারটা এরকম না। কম হলেও গাজীপুর, সাভার, বাইপাইল, আশুলিয়া, মানিকগঞ্জ এদিক থেকে বাস রাজধানীতে ঢুকছে, চলাচল করছে।
মহাখালী বাস টার্মিনাল
রোববার (৫ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত মহাখালী বাস টার্মিনালে অবস্থান নিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে। এর আগে ভোর ৬টা থেকেই অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়।
পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভোর ৪টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত যেখানে প্রতিটি পরিবহনের অন্তত ১৫ থেকে ২০টির অধিক বাস বিভিন্ন জেলার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার কথা, সেখানে এনা পরিবহনের কিছু বাস ছাড়া চলছেই না কোনো পরিবহন।
কোনো চাকাই ঘোরেনি এমন পরিবহনগুলোর চালক-সহকারীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যেখানে প্রতিটি বাসে মহাখালী থেকে অন্তত ৩০ থেকে ৩৫ যাত্রী পূর্ণ করে প্রতি ১০ মিনিট পর পর একটি বাস ছাড়া হয়, সেখানে ঘণ্টা পার হলেও কোনো যাত্রী মিলছে না। তাছাড়া মালিক পক্ষ থেকেও পরিস্থিতির ওপর কড়া নজর রেখে বাস ছাড়তে বলা হয়েছে।
ককটেল বিস্ফোরণে তিন পুলিশ আহত
রাজধানীর উত্তরা হাউজবিল্ডিং এলাকায় পুলিশের টহল গাড়িকে লক্ষ্য করে ককটেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। ছোড়া ককটেল বিস্ফোরণে উত্তরা পশ্চিম থানার এসআই মাহবুব আলীসহ তিন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। রোববার (৫ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর উত্তরা হাউজবিল্ডিং এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ককটেল নিক্ষেপের ঘটনায় জড়িত অভিযোগে গাজীপুর মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি কাজী মো. হাসানকে হাতেনাতে আটক করা হয়েছে।
ঢাকা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক
মৌলভীবাজারের ঢাকা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কে গাছ ফেলে পিকেটিং ও বিক্ষোভ করেছে জেলা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। রোববার (৫ নভেম্বর) সকালে জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আকিদুর রহমান সোহানের নেতৃত্বে ঢাকা সিলেট মহাসড়কের জুগিডর এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও পিকেটিং করা হয়।
এতে অংশ নেন জেলা ছাত্রদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জুনেদ আলম, মৌলভীবাজার সরকারি কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক জনি আহমেদ, যুগ্ম আহ্বায়ক শাওন আহমেদ, পৌর ছাত্রদলের সদস্য সচিব সুলতান আহমেদ টিপু, কনকপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি হুমায়ুন আহমেদ, তায়েফ আহমেদ প্রমুখ।
মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আকিদুর রহমান সোহান বলেন, সরকার পতনের একদফা আন্দোলন সফল না হওয়া পর্যন্ত ছাত্রদলের নেতাকর্মী রা রাজপথে অবস্থান করবে। এরই মধ্যে সরকার আন্দোলনের ভয়ে সারাদেশের ন্যায় মৌলভীবাজার জেলায় ছাত্রদলের অনেকে আটক করে মিথ্যা সাজানো মামলায় কারাগারে পাঠিয়েছে। মামলা হামলা করে জনগনের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনা ও নির্দলীয় দল নিরপেক্ষ সরকারের আন্দোলন কিছুতেই দমাতে পারবে না।
খুলনায় যাত্রীবাহী বাসে আগুন
বিএনপিসহ আরও কয়েকটি দলের ডাকা অবরোধের প্রথম দিনে খুলনার রূপসা উপজেলায় একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। রোববার (৫ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় রূপসা-বাগেরহাট পুরাতন সড়কের তালিমপুর ভূমি অফিস সংলগ্ন মসজিদের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানান, মো. জাহাঙ্গীর আলমের মালিকানাধীন খুলনা-মোংলা লোকাল রুটের খুলনা-ব-৯১৭ নম্বরের মায়ের আচল নামে যাত্রীবাহী বাসটি ৫ নভেম্বর দুপুরে উপকারভোগীদের নিয়ে উপজেলার বঙ্গবন্ধু কলেজ মাঠে এক অনুষ্ঠানে যায়।
পাবনা মহাসড়কে বিক্ষোভ মিছিল
পাবনায় বিএনপি ও জামায়াতের ডাকা দুই দিনের অবরোধের প্রথম দিন ঢাকা-পাবনা ও পাবনা-কুষ্টিয়া মহাসড়কে বিক্ষোভ মিছিল বের করে ছাত্রদলের সাবেক নেতাকর্মী ও জামায়াতে ইসলামী।
রোববার (৫ নভেম্বর) সকালে পাবনার ঈশ্বরদীতে অবরোধের সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল বের করে জামায়াতে ইসলামীর নেতার্মীরা। পাবনা-কুষ্টিয়া মহাসড়কের দাশুড়িয়া গোলচত্বরে বিক্ষোভ মিছিল বের করে নেতাকর্মীরা। বেশ কিছুক্ষণ সড়ক অবরোধ করে স্লোগান দেন তারা।
জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যাপক আবু তালেব মণ্ডলের নেতৃত্বে উপস্থিত ছিলেন ঈশ্বরদী উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি সাইদুল ইসলাম, পেশাজীবী সেক্রেটারি ডা. মুনসুর রহমান, সমাজকল্যাণ সেক্রেটারি হাফিজুর রহমান খান, প্রচার ও মিডিয়া সেক্রেটারি মাসুদ রানা মাসুম, উপজেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন সভাপতি মাহফুজুর রহমান প্রমুখ।
হবিগঞ্জে প্রাইভেটকারে আগুন
বিএনপির ডাকা দ্বিতীয় দফায় ৪৮ ঘণ্টার অবরোধের প্রথম দিন রোববার (৫ নভেম্বর) হবিগঞ্জের চুনারুঘাট তাঁতী লীগের সভাপতি কবির মিয়া খন্দকারের প্রাইভেটকারে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
স্থানীয়রা জানান, আজ সকাল ১০টার দিকে চুনারুঘাট উপজেলার বাল্লা সড়কে একটি প্রাইভেটকারে কয়েকজন যুবক পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে পালিয়ে যায়। এ সময় স্থানীয় লোকজন আগুন নেভান।
প্রাইভেটকারের মালিক উপজেলা তাঁতী লীগের সভাপতি করিব মিয়া খন্দকার জানান, হঠাৎ কয়েকজন যুবক পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই আগুন গাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন মাধবপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার নির্মলেন্দু চক্রবর্তী। তবে এর আগেই দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।
ককটেল বিস্ফোরণে দুই পুলিশ আহত
ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে ককটেল বিস্ফোরণে দুই পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। রোববার (৫ নভেম্বর) সকালে বিএনপি-জামায়াতের ডাকা দ্বিতীয় দফায় অবরোধ কর্মসূচির প্রথম দিনে এই ঘটনা ঘটে।
পীরগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল লতিফ শেখ জানান, পৌর শহরের কালিরহাট মোড়ে বিএনপি-জামায়াত কর্মীরা টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে পীরগঞ্জ-ঠাকুরগাঁও পাকা সড়ক অবরোধ করার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশ তাদের সরিয়ে দিতে গেলে অবরোধকারীরা তিনটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় এবং পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে দুই পুলিশ কনস্টেবল আহত হয়েছেন। তাদের পীরগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এ ঘটনায় পুলিশ বিএনপি-জামায়াতের তিনজন কর্মীকে আটক করেছে জানিয়েছেন পীরগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ শেখ।
লালমনিরহাটে মহাসড়ক অবরোধ
সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বিএনপি-জামায়াতের ডাকা দ্বিতীয় দফার সারাদেশ ব্যাপী ৪৮ ঘণ্টার অবরোধের প্রথম দিনে লালমনিরহাটে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা।
রোববার (৫ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়েকর কাকিনা চাপারতল এলাকায় সড়ক অবরোধ করে মিছিল করে বিএনপি নেতাকর্মীরা। এসময় বিএনপি নেতাকর্মীরা মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করেন। সড়কে বসে নেতাকর্মীরা সরকার বিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেন। এসময় বিএনপি নেতাকর্মীদের সড়কে অবস্থানে মহাসড়ক দিয়ে চলাচলকারী বেশ কয়েকটি গাড়ি রাস্তার দু পাশে থেমে যায়।
উপজেলা যুগ্ম-আহ্বায়ক রাজ্জাকুর ইসলাম রাজ্জাকের বিক্ষোভ মিছিলে অংশগ্রহণ করেন, উপজেলা কৃষকদলের সদস্য সচিব মমিনুল ইসলাম, শ্রমিকদলের সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক ইদ্রিস আলী, যুবনেতা মিজানুর রহমানসহ নেতারা। এছাড়া বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলুর বাড়ির এলাকা বড় বাড়িতে গাছের গুঁড়ি ফেলে এবং সড়কে অবস্থান নিয়ে যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে অবরোধ সমর্থকরা। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে অবরোধকারীরা রাস্তা থেকে সরে পড়েন।
লালমনিরহাট সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওমর ফারুক বলেন, রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করছে বিষয়টি শুনেছি। সড়কে সতর্ক অবস্থায় রয়েছে পুলিশ। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সন্দেহভাজনদের তল্লাশি করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
খাগড়াছড়িতে সড়ক অবরোধ
খাগড়াছড়িতে দ্বিতীয় দফায় ৪৮ ঘন্টা সড়ক অবরোধ চলাকালে ট্রাকে আগুন, পুলিশের সাথে পিকেটারদের ধাওয়া- পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। রোববার (৫ নভেম্বর) বেলা সোয়া ১১টার দিকে খাগড়াছড়ির জিরো মাইল সংলগ্ন আলুটিলায় একটি ট্রাকে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। সকাল থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীরা অবরোধের সমর্থনে আভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার সড়কের বিভিন্ন স্থানে রাস্তায় গাছের গুড়ি ফেলে, টায়ারে আগুন, বাঁশ-গাছ ফেলে ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছে। ফলে আভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে এখনও কোথায় অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। চলমান আন্দোলনে জেলায় ৮টি মামলায় জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ওয়াদুদ ভূইয়াসহ তিন শতাধিক আসামি করা হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছে অন্তত ৫২ জন নেতা-কর্মী।