বিএনপি-জামায়াতের ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ শুরু
- আপডেট সময় : ০৬:২২:২১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৫ নভেম্বর ২০২৩
- / ৪২৯ বার পড়া হয়েছে
ভোর থেকে আবারও ২ দিনের অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি-জামায়াতে ইসলাম। সরকার পতন ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে এ কর্মসূচি বলছে দলগুলো। বিএনপি-জামায়াতের ডাকা ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচির নামে রাজধানীসহ সারাদেশেই চোরাগোপ্তা হামলার আশঙ্কা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সব কিছু মাথায় রেখেই রাজধানীসহ সারাদেশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। যেকেনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে র্যাব, পুলিশ, আনসার, বিজিবি সদস্যরা। রাজধানীর বিভিন্ন জায়গাতে টহল শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
র্যাব-পুলিশসহ সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সদস্যরা তথ্য সংগ্রহ করতে ও কড়া নজরদারিতে মোতায়েন থাকবে। এদিকে র্যাব-পুলিশের সাইবার ইউনিট যেকোনো ধরনের গুজব প্রতিহত করতে সাইবার স্পেসে নজরদারি করছে। রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টের সিসিটিভি ক্যামেরা সার্বক্ষণিক নজরদারি করা হচ্ছে। অবরোধের আগের রাতেই চোরাগোপ্তা হামলা করছে দুর্বৃত্তরা।
র্যাব জানায়, দেশব্যাপী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাজধানীতে ৭০টিসহ সারাদেশে র্যাবের ১৫টি ব্যাটালিয়নের প্রায় ৩’শ দল নিয়োজিত আছে। সেই সঙ্গে দেশব্যাপী গোয়েন্দা নজরদারী কার্যক্রম চলমান। কেউ যদি কোনো ধরণের নাশকতা কিংবা সহিংসতার পরিকল্পনা করে তাকে সঙ্গে সঙ্গে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, যে কোনো উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় র্যাব ফোর্সেস এর স্পেশাল টিম ও স্টাইকিং ফোর্স রিজার্ভ রাখা হয়েছে। যে কোনো নাশকতা ও সহিংসতা প্রতিরোধে র্যাব ফোর্সেস সার্বক্ষণিক দেশব্যাপী নিয়োজিত থাকবে।
এদিকে বিজিবি এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ঢাকাসহ আশপাশের জেলায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ২৭ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়াও স্ট্যান্ডবাই রাখা হয়েছে আরও ১০ প্লাটুন। ঢাকার পাশাপাশি তাদের সাভার ও গাজীপুর এলাকায় বিজিবির সদস্যদের টহল দিতে দেখা গেছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন বলেন, অবরোধের নামে কেউ যদি কোনো ধরনের নাশকতা বা জনগণের জানমালের ক্ষতি করে তবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অবরোধে নাশকতা ঠেকাতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
এদিকে রাজধানীতে যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে গুরুত্বপূর্ণ সড়কে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল। মোতায়েন করা হয়েছে আনসার সদস্যদের।
অবরোধের শুরুতেই শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে রাজধানীতে ৪টি সহ সারা দেশে মোট ৬টি যানবাহনে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
শনিবার সন্ধ্যার দিকে নিউমার্কেট ও এলিফ্যান্ট রোডে দুটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। একই সময়ে সায়েদাবাদ এলাকায় ফ্লাইওভারের নিচে বাসে আগুন দেওয়া হয়। রাত ১০টার দিকে রাজধানীর গুলিস্তানে আরও একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। পরে ফায়ার সার্ভিসের ২ ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
গত সপ্তাহে বিএনপি-জামায়াতের ডাকা ৩ দিনের অবরোধে রাজধানীতে ১২টি বাসে আগুন দেওয়া হয়।
রাজধানীর খিলগাঁও থানার বনশ্রী এলাকায় অছিম পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এতে ওই বাসের যাত্রী মো. সবুজ (৩০) দগ্ধ হয়েছে। সবুজ রমজান পরিবহনের একটি বাসের চালক।
আজ রোববার সকালের দিকে এই ঘটনাটি ঘটে। পরে সবুজকে উদ্ধার করে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে।
দগ্ধ সবুজ ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার গোদারিয়া গ্রামের সুলতান মিয়ার ছেলে। বর্তমানে পরিবার নিয়ে ঢাকার মেরুল বাড্ডায় ভাড়া থাকেন তিনি।
এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে অবরোধের মধ্যেই আজ চট্টগ্রাম জেলা ও নগরে সর্বাত্মক হরতাল কর্মসূচি দিয়েছে চট্টগ্রাম নগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি। চট্টগ্রামবাসীকে শান্তিপূর্ণভাবে হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি পালন করার আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। এছাড়া কিশোরগঞ্জেও বিএনপি আজ সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে। জেলা বিএনপির দাবি, ডিবি পরিচয়ে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির উপসাংগঠনিক সম্পাদক জেলা বিএনপির সভাপতি শরিফুল আলমসহ তিনজনকে তুলে নিয়ে গেছে। এর প্রতিবাদে তারা জেলায় হরতাল কর্মসূচি দিয়েছে।
অবরোধের সমর্থনে রোববার ভোরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিঠাছড়া পান্তারপুকুর এলাকায় মিছিল করেছেন মিরসরাই উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শাহীদুল ইসলাম চৌধুরীর সমর্থকরা। মিছিলে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবদলের সহ-সভাপতি আলা উদ্দিন ও যুগ্ম সম্পাদক শওকত আকবর সোহাগ নেতৃত্বে দিয়েছেন।
বগুড়ায় গাড়ি ভাঙচুর
রোববার (৫ নভেম্বর) সকাল ৮টার দিকে শহরের তিনমাথা তেলিপুকুরে ঝটিকা মিছিল করে তারা। পরে বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে। এ সময় তারা কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। পরে পুলিশ এসে তাদেরকে হটিয়ে দিতে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এদিকে সকাল ৭টার দিকে শহরের মাটিডালি নওদাপাড়া মহাসড়কে মিনিট দুয়েক স্লোগান দিয়ে স্থান ত্যাগ করে জামায়াতের নেতাকর্মীরা।
রোববার (৫ নভেম্বর) ভোর ৬টা থেকে শুরু হয়েছে বিএনপির ডাকা দ্বিতীয়বারের অবরোধ কর্মসূচি। যা চলবে আগামী মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) ভোর ৬টায় পর্যন্ত। এ অবরোধে সমর্থন জানিয়ে দলটির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা অন্য দলগুলোও এ কর্মসূচি পালন করবে। এদিকে জামায়াতে ইসলামীও আলাদা করে ৪৮ ঘণ্টা অবরোধ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে।
কিশোরগঞ্জে চলছে হরতাল
বিএনপি জামাতের ডাকা দুই দিনের অবরোধ কর্মসূচির পাশাপাশি জেলা বিএনপির সভাপতি শরীফুল আলমকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে কিশোরগঞ্জে আধাবেলা হরতাল পালন করছে বিএনপি নেতাকর্মীরা। অন্যদিকে হরতালে যেকোনো ধরনের সহিংসতা ঠেকাতে বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
রোববার (৫ নভেম্বর) সকালে হরতালের সমর্থনে শহরের বত্রিশ এলাকায় ঝটিকা মিছিল করছে জেলা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এ সময় একটি গাড়ি ভাঙচুর করে তারা। পুলিশ আসলে নেতাকর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়ে। এছাড়া শহরের সতাল এলাকায় পিকেটিং করেছে হরতাল সমর্থকেরা। তবে পুলিশ আসার আগেই দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন হরতাল সমর্থকরা। অন্যদিকে সদর উপজেলার নীলগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনের কিছুটা অদূরে রেললাইনের ওপরে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
জয়পুরহাটে গাছের গুড়ি ফেলে অবরোধ
বিএনপি-জামায়াতের ডাকা দ্বিতীয় দফা অবরোধের প্রথম দিনে জয়পুরহাট থেকে ছাড়েনি কোন দূরপাল্লার বাস ও ট্রাক। সড়কে গাছের গুড়ি ফেলে অবরোধের চেষ্টা ও একটি ট্রাক ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
রোববার (৫ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৬টার দিকে জয়পুরহাট সদরের পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সড়কের সামনে গাছের গুড়ি ফেলে অবরোধের চেষ্টা করে অবরোধকারীরা। খবর পেয়ে আইনশৃঙ্খালা রক্ষাকারী বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে সড়কের উপর থেকে গাছের গুড়ি সরিয়ে ফেলে। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে অবরোধকারীরা দুটি ককটেল বিষ্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যায়। এর কিছু পরেই একই সড়কে হিচমী এলাকায় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা জয়পুরহাটগামী একটি সিমেন্ট বোঝাই ট্রাক ভাঙচুর করে অবরোধকারীরা।
এছাড়া সকাল থেকেই দূরপাল্লা বা আন্তঃজেলা কোন বাস বা ট্রাক কোন কিছুই শহর ছেড়ে যায়নি। এদিকে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। শহরের মধ্যে চলছে রিকশা ভ্যান ও অটোরিকশা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ রাখতে মোতায়েন আছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ।
খাগড়াছড়িতে সড়ক অবরোধ
রবিবার (৫ নভেম্বর)সকাল থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীরা অবরোধের সমর্থনে আভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার সড়কের বিভিন্ন স্থানে রাস্তায় গাছের গুড়ি ফেলে, টায়ারে আগুন, বাঁশ-গাছ ফেলে ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছে। ফলে আভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে এখনও কোথায় অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। চলমান আন্দোলনে জেলায় ৮টি মামলায় জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ওয়াদুদ ভূইয়াসহ তিন শতাধিক আসামি করা হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছে অন্তত ৫২ জন নেতা-কর্মী।
খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির গণমাধ্যম বিভাগ থেকে প্রেরিত তথ্যে জানা গেছে, চলমান হরতাল ও অবরোধে খাগড়াছড়ির ৮টি উপজেলায় প্রায় ৪ শতাধিক নেতা-কর্মীকে আসামি করে পৃথক ৮টি মামলা হয়েছে। মামলায় খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ওয়াদুদ ভূইয়া ও সাধারণ সম্পাদক এম এন আবছারকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাতনামা আসামিও রয়েছে।