৯২ রানে পড়ে গিয়েছে সাত উইকেট। আফগানদের সঙ্গে হার মানতে রাজি ছিল না অস্ট্রেলিয়া। আরও স্পষ্ট করে বললে, রাজি ছিলেন না ম্যাক্সওয়েল। পায়ে ক্র্যাম্প নিয়ে একাই যেভাবে অস্ট্রেলিয়াকে ম্যাচ জেতালেন, যেভাবে খেলাটা ‘ফিনিশ’ করলেন – খোদ মাইকেল বেভানের বুকও গর্বে ফুলে উঠবে। হয়তো ভাববেন, এভাবে তো আমিও ম্যাচ জেতাতাম!
২০০৩ বিশ্বকাপে ৮৪ রানে ৮ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর অস্ট্রেলিয়ার হাল ধরেছিলেন বেভান আর অ্যান্ডি বিকেল। দুজনের দুই ফিফটিতে ২০৮ পর্যন্ত গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। পরে নিউজিল্যান্ড ১১২ রানেই অলআউট হয়ে গিয়েছিল।
সে ম্যাচের তুলনায় আজকের ম্যাচ আরও ছিল আরও কঠিন, অস্ট্রেলিয়ার জন্য আরও বৈরী। ব্যাট হাতে অস্ট্রেলিয়ার কাছে মাত্র ৫ উইকেট হারানো আফগানিস্তান স্কোরবোর্ডে তোলে ২৯১ রান। মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়েতে সে রান তাড়া করতেই বারবার মুখ থুবড়ে পড়লেন ওয়ার্নার-লাবুশেনরা। আফগানিস্তানের চার স্পিনার ,স্টিভেন স্মিথ এবার স্পিন একদম ভালো খেলতে পারছেন না দেখে স্মিথকে বাদ দিয়েই একাদশ সাজায় অস্ট্রেলিয়া। যদিও বলা হয়, ‘ভার্টিগো’ সংক্রান্ত সমস্যায় আক্রান্ত স্মিথ।
তাতে লাভ হলো কী? স্পিন আসার আগেই পাঁচ উইকেট হারিয়ে বসে অস্ট্রেলিয়া। দুই পেসার নাভিন আর আজমত মিলেই টপ অর্ডারে তাণ্ডব চালান। প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলেই ট্রাভিস হেডকে (২ বলে ০) আউট করে নাভিন বুঝিয়ে দেন, আগুন ঝরাতেই নেমেছেন। শুরু থেকে ঝড় তোলা মিচেল মার্শকে (১১ বলে ২৪) ইনিংস লম্বা করতে দেননি এই নাভিনই। এরপর শুরু হলো ‘আজমত-শো’। পরপর দুই বলে ধুঁকতে থাকা ওয়ার্নার (২৯ বলে ১৮) আর জশ ইংলিসকে আউট করে ম্যাচের লাগাম বেশ ভালোভাবেই নিজেদের হাতে নিয়ে নেন এই অলরাউন্ডার। এরপর দলের বিপদ বাড়িয়ে রানআউট হন মার্নাস লাবুশেন (২৮ বলে ১৪)। মাত্র ৫০ স্ট্রাইক রেট নিয়ে খেলা এই ব্যাটসম্যান এমন এক বলে আক্রমণাত্মক হয়ে বাড়তি রান নেওয়ার জন্য উতলা হয়ে গেলেন, যার মাশুল দিতে হয়েছে উইকেট খুইয়ে। রশিদের স্পিন-জাদুতে এরপর একে একে আউট হয়েছেন স্টয়নিস আর স্টার্ক।
ব্যস, আফগানদের গর্ব করার মত অধ্যায় ওটুকুই।
এরপর যা শুরু হলো, তা শুধু অস্ট্রেলিয়ানদের পক্ষেই করা সম্ভব। ২০০৩ বিশ্বকাপের সে ম্যাচে দলকে বিপদের হাত থেকে বাঁচাতে পাল্লা দিয়ে রান তুলেছিলেন বেভান আর বিকেল। আর রান তোলার কাজটা শুধু ম্যাক্সওয়েলকেই করতে হলো। কামিন্স অপর প্রান্ত থেকে শুধু ভরসাই দিয়ে গেলেন। অনুচ্চারে বলে গেলেন, ‘তুমি অতিমানবের মতো ব্যাট চালিয়ে দাও, আমি আছি, আমার উইকেট রক্ষা করে আছি তোমার সঙ্গে।’
ম্যাক্সওয়েল একাই রান করে গেলেন। ক্র্যাম্পে পড়ে গেলেন, ব্যথা পেলেন, আবারও উঠে গেলেন, আবারও রান করে গেলেন। ফিফটি পেরোলো, সেঞ্চুরি পেরোলো, পেরোলো ‘দেড়’ সেঞ্চুরি। ডাবল সেঞ্চুরি যতক্ষণে পেলেন, অস্ট্রেলিয়ার জয় ততক্ষণে নিশ্চিত। অস্ট্রেলিয়া আর একটাও উইকেট হারায়নি। ১২১ বলে ২১ চার আর ১০ ছক্কায় ২০১ করেই থেমেছেন ম্যাক্সওয়েল। ৬৮ বলে ১২ করা কামিন্স ছিল যথার্থ পার্শ্বনায়ক।
বিশ্বকাপে এভাবেও রান তাড়া করে জেতা যায়, এমনটা কোনো অস্ট্রেলিয়ান করে না দেখালেই হয়তো অবিচার হতো।
ম্যাক্সওয়েল সেটা হতে দেবেন কেন!